AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Jagadhatri Puja 2022: ৩০০ বছর ধরে একই নিয়মে পুজো হয়ে আসছে চন্দননগরের এই পুজো! রইল কিছু অজানা তথ্য

Puja in Celebration: হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুয়ায়ী কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে পালিত হয় জগদ্ধাত্রী পুজো। শাক্ত-তান্ত্রিক, হিন্দুতন্ত্র বা বৌদ্ধতন্ত্র মতেও পুজো করা উল্লেখ রয়েছে।

Jagadhatri Puja 2022: ৩০০ বছর ধরে  একই নিয়মে পুজো হয়ে আসছে চন্দননগরের এই পুজো! রইল কিছু অজানা তথ্য
| Edited By: | Updated on: Oct 30, 2022 | 7:36 PM
Share

আলোর শহর মানেই চন্দননগরের নাম প্রথমে আসেব। স্থানীয়, শহর কলকাতা ছাড়িয়ে দেশ-বিদেশে আলোর সাজের জন্য বিখ্য়াত চন্দননগরের কারিগররা। আরও একটি বিখ্যাত। জগদ্ধাত্রী পুজো। এই সময় গোটা শহর এক আলোর উত্‍সবে মেতে ওঠে। চারিদিকে ধূপ-ধুনো আর ফুলের গন্ধ ম ম করে ছোট্ট সুন্দর সাজানো শহরটিতে। এককালে চন্দননগরই ছিল বাঙালিবাবুয়ানার উইকেন্ডে বিদেশ ভ্রমণের সেরা ঠিকানা। ফরাসি সংস্কৃতির ছাপ অস্পষ্ট হলেও এই শহর এখনও ফরাসি ভাষার কদর করে। আভিজাত্য না থাকলেও সেই জায়গায় আকর্ষণ বেড়েছে বিখ্যাত জগদ্ধাত্রী পুজোর। হৈমন্তিকার আরাধনায় এই শহর যেন এক প্রাণবন্ত আনন্দে মেতে ওঠে। লক্ষ লক্ষ মানুষ এই শহরের কীর্তি দেখতে ছুটে আসেন। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুয়ায়ী কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে পালিত হয় জগদ্ধাত্রী পুজো। শাক্ত-তান্ত্রিক, হিন্দুতন্ত্র বা বৌদ্ধতন্ত্র মতেও পুজো করা উল্লেখ রয়েছে।

মার্কন্ডেয় পুরাণে দুর্গা ও জগদ্ধাত্রী একজন অভিন্ন দেবী হিসেবে পরিচিত। “জগদ্ধাত্রী দুর্গায় নমঃ” মন্ত্রে জগদ্ধাত্রী পূজিতা হন। জগতকে যিনি ধারণ করে আছেন তিনিই জগদ্ধাত্রী। জগদ্ধাত্রী চতুর্ভুজা। চার হাতে রয়েছে শঙ্খ, চক্র, ধনু ও বাণ। দেবী সিংহবাহিনী, রক্তাম্বরা, গাত্র বর্ণ উদিত সূর্যের আভার মত। গলায় ঝুলছে নাগযজ্ঞোপবীত। পুরাণে আছে, দেবী বধ করেছিলেন করিন্দ্রাসুরকে। অসুর এখানে হস্তী।

দুর্গাপুজোর মতই এই ফরাসি শহরে জগদ্ধাত্রী পুজো করা হয়। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, পূর্ব ভারতে চন্দননগর একটি প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হিসেবে পরিচিত ছিল। সেইসময় বাংলায় পর্তুগিজ, ফরাসিদের শাসন চলছে। চুঁচুড়ায় ওলন্দাজ, হুগলীতে ব্রিটিশ এবং চন্দননগরে ফরাসীরা। শুরু হয়েছে ঔপনিবেশিক শক্তি আস্ফালনের পরবর্তী অধ্যায়। সেইসময় ফরাসিরা বাণিজ্য করা শুরু করলে বাংলার মানচিত্র কলকাতাকেও হারিয়ে দেয়। সেইসময় বাংলার রাজধানী কলকাতা নয়, বরং চন্দননগরেই ছিল বাংলার একমাত্র সম্বল। হুগলী নদীকে কেন্দ্র করে বাণিজ্যকেন্দ্র গড়ে উঠতে সুরু করে। বলা যেতে পারে,এই সাজানো-গোছানো শহরটি বাংলার অন্যতম শস্যভণ্ডার। বর্তমানে যে জায়গায় চাউলপট্টি ঠাকুরটি পুজো করা হয়, সেখানে বাণিজ্যের দিক থেকে দক্ষিণবঙ্গের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে পরিচিত ছিল।

প্রসঙ্গত, এই চাউলপট্টি জগদ্ধাত্রী পুজোটি প্রায় ৩০০ বছরের বেশি পুরনো। স্থানীয়দের কথায়, এখানকার জগদ্ধাত্রী ঠাকুরকে শহরের আদি মা নামে ডাকা হয়। ইতিহাস মতে, এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন ফরাসি দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী। তিনি তত্‍কালীন চাউলপট্টীর সাধারণ ব্যবসায়ী থেকে নিজের উপস্থিত বুদ্ধির জেরে ফরাসি ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ান হয়ে ওঠেন। বাংলাদেশের যশোর জেলায় জন্মগ্রহণকারী ইন্দ্রনারায়ণ দেওয়ানের কাজ ছেড়ে মুর্শিদাবাদের নবাবের দরবারে হিসেবরক্ষণের কাজে যুক্ত হন। এই চাউলপট্টি থেকেই তিনি নিজের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। ফরাসিদের সঙ্গে দারুণ ওঠাবসা ছিল তাঁর। ইতিহাসের তথ্য অনুসারে, চাউলপট্টি ছিল সেকালের বাংলার শস্য ভাণ্ডার। লক্ষ্মীগঞ্জের বাজারে ছিল ১১৪ টি ধানের গোলা, যার এক একটিতে ৬০০০ মণ ধান রাখা হত। শুধুমাত্র ১৭৩০ সালেই ফরাসি ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর মোট ব্যবসার পরিমাণ ছিল আড়াই মিলিয়ন পাউন্ড। ব্য়বসার পাশাপাশি সমাজসেবার কাজেও থাকতেন । সময়ে সময়ে কৃষ্ণচন্দ্র ও ইন্দ্রনারায়ণ বন্ধু হয়ে ওঠেন। কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর অনুকরণেই চন্দননগরে তিনি এমন পুজোর প্রবর্তন করেন।

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো নাকি ইন্দ্রনারায়ণের বাড়িতেই জগদ্ধাত্রী পুজে পলন করা হত। অনেকেই জানেন না যে চাউলপট্টীর জগদ্ধাত্রীই আদি মা নামে সকলের কাছে পরিচিত। গঙ্গার তীরে শিবঘাটি ঘাটের পাশে, লক্ষ্মীগঞ্জবাজারের পিছনের দিকে অবস্থিত চাউলপট্টি। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এই বাজারে চালের ব্যবসায়ীরাই পুজোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিল। সেই আড়ম্বর না থাকলেও চাউলপট্টীতে এখনও ব্য়বসায়ীরা এই প্রাচীনতম পুজো পালন করে। পুজো কবে থেকে শুরু হয়েছে, তা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। তবে স্থানীয়দের মতে, এই পুজো প্রায় তিনশো বছরেরও বেশি পুরনো।

আদি মায়ের পুজো অত্যন্ত নিষ্ঠা ও ভক্ত ভরে করা হয়। ষষ্ঠীর দিন থেকে শাড়ি ও সোনা-রূপোর গয়না দিয়ে সাজানো হয়। অনেক ভক্ত আছেন, যাঁরা নামি-দামি বেনারসি শাড়ি দান করার মানত করেন। শুধু তাই নয়, মানত হিসেবে সোনা-রূপো দান হিসেবে সেইগুলি গায়ে সাজিয়ে দেওয়া হয়। সপ্তমীর দিনে সাতটি বিশাল মাপের থালায় নৈবেদ্য় নিবেদন করা হয়। প্রসঙ্গত, সপ্তমী থেকে নবমী , প্রতিদিনই ছাগবলি, আখ, কুমড়ো বলি দেওয়ার রেওয়াজ এখনও বর্তমান। এছাড়া অষ্টমীর দিন ১০৮টি রক্তপদ্ম নিবেদন করার ও রীতি রয়েছে।