Explained-Rohit Sharma: আরও একটা ‘শেষ দিন’! দেওয়াল লিখন পড়তে শুরু করে দিয়েছেন রোহিত শর্মা?
IND vs AUS, Rohit Sharma: নানা পরিবর্তন হয়েছে, এটুকু বলা যায়। আর সামনে আরও নানা পরিবর্তন হতেও চলেছে। কিন্তু এই পরিবর্তন কি নর্ম্যাল? হয়তো। পৃথিবীতে একটা বিষয়ই নিশ্চিত 'পরিবর্তন'। ভনিতা না করে সরাসরি পয়েন্টে আসা যাক।
মেরিন ড্রাইভের সেই ভিড় মনে পড়ে? হাজারো মানুষ। কেউ ফিরছেন অফিস থেকে। কেউ এসেছেন ভিড়ে মিশে যেতে! কোনও ব্যস্ততা নেই। অযথা গাড়ির হর্ন নেই। সবাই যেন দর্শক। এমনকি, আরবসাগর পর্যন্ত গুনেগেঁথে পাঠাচ্ছে ঢেউ। যেন একটা অন্য দিন। স্পেশাল মুহূর্ত! ভারত দ্বিতীয় বার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আর চ্যাম্পিয়ন করার নায়কদের বাস প্যারেডে কেনই বা ব্যস্ততা দেখাবেন সমর্থকরা? বরং সময়টা থমকে থাক। তারপর…।
নতুন কোচ, একের পর এক সিরিজ, টিমে তরুণদের আনাগোনা। কেউ আসছেন, বাদ পড়ছেন, আবার ফিরছেন। কীসের খোঁজে, বোঝা মুশকিল। নানা পরিবর্তন হয়েছে, এটুকু বলা যায়। আবহাওয়া বদলের আরও বার্তা থাকছে। এই পরিবর্তন কি নর্ম্যাল? হয়তো। পৃথিবীতে একটা বিষয়ই নিশ্চিত ‘পরিবর্তন’। ভনিতা না করে সরাসরি পয়েন্টে আসা যাক।
রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অবসর সিদ্ধান্ত যেন নাড়িয়ে দিয়ে গেল ভারতীয় টিমকে। মঞ্চ প্রস্তুত হচ্ছিল আগে থেকেই। অশ্বিন হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো মানুষ নন। ধীরস্থির, বিবেচক। তাঁর মতো বুদ্ধিদীপ্ত ক্রিকেটার ভারতে কেন, এই গ্রহেও পাওয়া দুষ্কর। যিনি অঙ্ক কষে প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করতে পারেন। তাঁর ঘোষণা আচমকাই হতে পারে, সিদ্ধান্ত ঠান্ডা মাথায় নেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়।
এই খবরটিও পড়ুন
এই সিদ্ধান্তটাই যেন মরসুম বদলের বার্তা দিচ্ছে! অশ্বিনের হঠাৎ অবসর চাপে ফেলে দিল বাকি তিনজনকে? কারা? অশ্বিন যেমন সাংবাদিক সম্মেলনে বলেই ফেলেছেন, আমরাই ওল্ড জেনারেশনের শেষ প্রতিনিধি। এই ওল্ড জেনারেশনে অশ্বিন ছাড়া আছেন রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, রবীন্দ্র জাডেজাও। ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের কাছে ক্লিন সুইপটাই সেই পর্বের শুরু! মনে হয় না। তার আগের পার্টটা একটু ভেবে দেখুন।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেই দেশের জার্সিতে এই ফর্ম্যাটকে বিদায় জানিয়েছিলেন বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা এবং রবীন্দ্র জাডেজা। নতুন কোচ গৌতম গম্বীরের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ছিল শ্রীলঙ্কা সিরিজ। তিনটি করে টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ান ডে। বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা দু’জনেই এই সিরিজে বিশ্রাম চেয়েছিলেন। কিন্তু নতুন কোচ তাঁদের অনুরোধ রাখেননি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতিতে এই দু’জনকে তাঁর খুবই প্রয়োজন। আল্টিমেটলি সেই ওয়ান ডে সিরিজে কী হয়েছিল? বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মা দু’জনেই ব্যাট হাতে ফ্লপ।
ইচ্ছের বিরুদ্ধে খেললে এমন হওয়াই স্বাভাবিক। কোচের সঙ্গে অন ক্যামেরা হাসি-খুশি পরিস্থিতি থাকুক, আসল চিত্রটা কি তাই? মিডিয়ায় খবর আগেই ছিল। বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার সঙ্গেই ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছিল নতুন কোচ হিসেবে গৌতম গম্ভীরের নাম। রোহিত শর্মা কিন্তু তারপর রাহুল দ্রাবিড়কে নিয়ে একটা আবেগপ্রবণ পোস্ট করেছিলেন। রাহুল দ্রাবিড়কে কতটা মিস করবেন, স্ত্রী ঋতিকা রাহুল দ্রাবিড়কে কর্মক্ষেত্রের সতীন মনে করেন, এমন মজার তথ্যও তুলে ধরেছিলেন। সবটাই দ্রাবিড়ের প্রতি শ্রদ্ধা থেকে।
শ্রীলঙ্কা সফরে স্পিনের বিরুদ্ধে ব্যর্থতা। ২৭ বছরের ব্যবধানে শ্রীলঙ্কায় ওয়ান ডে সিরিজে হার। স্পিনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অস্বস্তি। এরপর ছিল ঘরের মাঠে বাংলাদেশ সিরিজ। স্পিন ট্র্যাক থেকে পেস বোলিং পিচে ফিরতেই ভালো পারফর্ম করেছে ভারত। সিরিজও জিতেছে। কিন্তু নিউজিল্যান্ড সিরিজে প্রথম টেস্ট হারের পরই নিজেদের শক্তি ভুলে কয়েক বছর আগের পুরনো ফর্মূলাতে ফিরে স্পিন সহায়ক পিচ তৈরি হল। রোহিতের কি তাতে সায় ছিল? এটা কিন্তু বড় প্রশ্ন।
সিরিজ হারের পর রোহিতের সেই কথাটা ভুললে চলবে না, তিনি কোনও প্লেয়ারকে দায়ী করেননি, বরং এই প্লেয়াররাই বছরের পর বছর ঘরের মাঠে ভারতকে অপরাজিত রেখেছেন, সেটাই তুলে ধরেছেন। কোচের প্রসঙ্গ উঠতেই বলেছেন, সদ্য দায়িত্ব নিয়েছে একটু তো সময় দিতেই হবে। ঠিক কতটা সময়! এটা তো বোঝা যায়, প্রকাশ্যে সকলকেই আড়াল করবেন ক্যাপ্টেন, এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু নিজেকে আড়াল করতে পারছেন কি?
বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া। ব্যাট হাতে একের পর এক ফ্লপ। ক্যাপ্টেন হিসেবেও কেমন একটা অদ্ভূত দেখাচ্ছে। যেন তাঁর হাতে কিচ্ছু নেই। শুধু নির্দেশ পালন করে যাচ্ছেন। ম্যাচের মাঝে কখনও দেখা যাচ্ছে প্রাক্তন ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলি, কিপার ঋষভ পন্থ নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। এ ছাড়া ভাইস ক্যাপ্টেন জসপ্রীত বুমরা তো রয়েইছেন।
অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগে ক্যাপ্টেন -কোচের বিষয়ে বোর্ড কর্তারা পর্যালোচনা মিটিংও করেছিলেন। এরপর নাম প্রকাশে বোর্ডের এক কর্তা সংবাদসংস্থাকে বলেছিলেন, ‘চার সুপারস্টারের জন্য এটাই শেষ সুযোগ। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠতে না পারলে এটাই তাদের শেষ সিরিজ।’ ফাইনালে উঠতে না পারলে ভারতের পরবর্তী টেস্ট সিরিজ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। অ্যাওয়ে সিরিজ।
চার সুপারস্টারের মধ্যে অশ্বিন নিজে থেকেই অবসর ঘোষণা করে দিয়েছেন। রইলেন বাকি রোহিত, বিরাট ও জাডেজা। বিরাট তবু পারথে সেঞ্চুরি করে মেয়াদ কিছুটা বাড়িয়ে নিয়েছেন। রোহিত বিদেশে টেস্ট ক্যাপ্টেন হিসেবে ফ্লপ। তেমনই ব্যাট হাতেও। যিনি পেস বাউন্সি পিচে একটা সময় রাজা ছিলেন, শর্ট পিচ ডেলিভারি সামলাতে এক্সপার্ট, পুল-হুক শট খেলার ক্ষেত্রে বিশ্বের সেরা ব্যাটার। তাঁর পায়ের মুভমেন্টই নেই। সেই পুরনো আত্মবিশ্বাস নিয়েও মাঠে নামছেন না। সারাক্ষণ মনে হচ্ছে কাঁধ ঝুঁকে রয়েছে। সারাক্ষণ যেন গভীর কোনও চিন্তায়। এমনকি ফিল্ডিংয়ের সময়ও একই পরিস্থিতি। সেই দাপট হারিয়ে গিয়েছে।
অশ্বিনের অবসরে দেওয়াল লিখন কি আরও পরিষ্কার হয়ে গেল? রোহিতের সঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলনেই অশ্বিন সরকারি ভাবে অবসরের ঘোষণা করেন। তারপর রোহিতের মন্তব্যের একটা অংশ তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন- ‘আসলে যাঁদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় খেলেছি ধীরে ধীরে একে একে সতীর্থদের হারাচ্ছি, খারাপ তো লাগারই কথা। আমিও ভালো খেলার চেষ্টা করছি। যদিও ব্যাট থেকে আসা রান সেই কথা বলছে না। তবে আমি জানি, কতটা চেষ্টা করছি, কী চাই, সবটাই পরিষ্কার। হয়তো দ্রুতই ভালো কিছু হবে।’
এখান থেকে দুটো বিষয় ধরা যায়, প্রথমত- কেরিয়ার বাঁচানো নয়, এতদিনের জমানো সম্মান পুনরুদ্ধারে মরিয়া রোহিত। দ্বিতীয়ত, সাফল্যের শীর্ষে থেকেই ছাড়তে চান। এর জন্য জরুরি সিরিজের বাকি দুটো ম্যাচে তাঁর নিজের রান করা এবং দলের জেতা। সেটা না হলে রোহিত হয়তো নিজে থেকেই অশ্বিনের মতো বলে দেবেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটে এটাই আমার শেষ দিন’।
বিদেশের মাটিতে, আরও পরিষ্কার করে বললে SENA কাউন্ট্রিতে (দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া) রোহিতের পারফরম্যান্স কোনওদিন আশা জাগানোর মতো নয়। তাঁর টেস্ট কেরিয়ারে ব্যাটিং গড় (ওপেনিং-মিডল অর্ডার সব মিলিয়ে) ৪১.২। আর এই চার দেশে ৪৭ ইনিংস মিলিয়ে তাঁর ব্যাটিং গড় মাত্র ২৯.২০। মজার বিষয়, তাঁর চেয়ে পেসার ভুবনেশ্বর কুমারের ব্যাটিং গড় বেশি! এর থেকেই অনেকটা চিত্র পরিষ্কার। ভারতের পরবর্তী সিরিজ কিন্তু SENA-র অংশ ইংল্যান্ডেই।
রোহিতের হাতে থাকবে শুধুই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। সেখানে হয়তো খেলবেন। এরপর হয়তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে পুরোপুরি বিদায়! একদিন তো সকলকেই থামতে হয়, আগে বা পরে। থামতে হবেই। বাদ পড়ে আপশোস করার চেয়ে, পারফর্ম করে নিজেই সরে দাঁড়ানো ভালো। অন্তত বাকিরা আক্ষেপ করতে পারবেন, ইশশশশ, ছেলেটা আরও একটু খেলতে পারত। কেন যে…!