কলকাতা: আঠারোর অনুপ্রাস যেন! এতদিনে সাবালক হয়েছে আইপিএল। ১৮তে পা দিয়েছে ভারতের সামার ফেস্টিভাল। কী আশ্চর্য, এই ১৮-র আইপিএল মিলেমিশে গিয়েছে বিরাট কোহলির সঙ্গে। তাঁরও জার্সি নম্বর ১৮ যে! বলা হচ্ছে, এত দিনের খরা এবার নাকি কাটবে। ১৮ নম্বর জার্সির ক্রিকেটার জিতবেন ১৮তম আইপিএল! ক্রিকেট ঈশ্বর যদি তেমন কোনও স্ক্রিপ্ট লিখেই রাখেন, তাঁর প্রিয় ছাত্রকে ভুলে যাবেন? এখানেও যে থাকছে সংখ্যাতত্ত্ব। তবে অনুপ্রাস নয়। স্বতন্ত্র সংখ্যাতত্ত্ব। আর সেই সংখ্য়া অবাক করে দেওয়ার মতো।
বুড়ো বয়সে রঞ্জি খেলেছেন অনেকে। ৩৭এও আন্তর্জাতিক ডেবিউ হয়েছে অনেকের। তাই বলে ৪৩এ আইপিএল? ফিটনেসের কোন মার্গে পা রাখলে এটা সম্ভব? হাঁটুতে অপারেশন সত্ত্বেও, ধারাবাহিক ক্রিকেটের বাইরে থাকা সত্ত্বেও? মহেন্দ্র সিং ধোনি যেন এক অন্য গ্রহের মানুষ। বয়স থাবা বসাতে পারে না শরীরে। ক্ষীপ্রতা কমে না। সেই ঝলসানো রানিং বিটউইন দ্য উইকেট। যাবতীয় তীক্ষ্মতা অটুট। ক্ষুরধার ক্রিকেট মস্তিকটাও। ১৮র আইপিএল, ৩৬এর বিরাট আর ৪৩এর ধোনি— এক মঞ্চে তিনের রোমাঞ্চকর উপস্থিতি দেখতে চলেছে শুক্র-সন্ধে। পুরনো চাল ভাতে বাড়ে, নাকি অন্যের জয়ে থাবা মারে, আলোচ্য তো সেটাই।
আলেক্স ফার্গুসন থেকে সুভাষ ভৌমিক, এককথায় কবুল করতেন, লিগ আর নকআউটের হিসেবটাই আলাদা। আইপিএলে আবার দুটো অঙ্কই মেলাতে হয়। ট্রফির খোঁজে যেতে হলে বাছাই ম্যাচ জিততে হবে। তাতে দলের মনোবল বাড়ে। পারফরম্যান্সে শাণ দেওয়া যায়। টেম্পো সেট করা যায় টিমের। উত্তেজক ম্যাচের আগে যদি রোমাঞ্চকর জয় এসে থাকে, তা হলে তো কথাই নেই। বিরাট কোহলির আরসিবি হোক আর ধোনির সিএসকে— দুই টিমই দুটো কঠিন ম্য়াচ জিতে শুক্র-ম্য়াচে পা রাখছে। বেঙ্গালুরু হারিয়েছে কেকেআরকে। চেন্নাই জিতেছে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে। রান পেয়েছেন বিরাট। ধোনির হাত থেকে বেরিয়েছে চকিত স্টাম্পিং। এবার কার পালা?
চিপকের যা চিপকে থাকা সিন, কোনও গল্পই আগে থেকে সেট করা যাচ্ছে না। খুলেই বলি। চিপকের কালো মাটি ভাই শক্ত ঘাঁটি। সফরকারী সব টিমই সমঝে চলে ধোনির ডেরা। গত ১৭ বছরের ইতিহাসে কিন্তু চিপক নিয়ন্ত্রণ করেছেন স্পিনাররাই। এবার তো জাডেজার সঙ্গী অশ্বিন। কী যে হবে! কেকেআর ম্যাচে হাফসেঞ্চুরি করা বিরাটও জানেন, ধোনির বিরুদ্ধে লড়া সহজ কথা নয়। একে তো থালার গ্যালারি, তার উপর ঘূর্ণি। এতেই শেষ নয়, স্পিন ইদানীং তেমন সামলাতে পারছেন না বিরাট নিজেও। লেকিন, পরন্তু, বাট… বিরাটকে হালকা নিতে চাইবেন না ধোনি নিজেও। এই ম্য়াচে যতই স্রেফ কিপার হিসেবে তুলে ধরা হোক তাঁকে, মাহির মস্তিষ্কের বিরুদ্ধেই তো খেলতে হবে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে বিরাট কিন্তু ছন্দে। আইপিএলের প্রথম দর্শনেও তাই। চিপকে যদি রান করতে পারেন বিরাট, আইপিএলে জ্বালাবেন প্রতিপক্ষদের। ধোনি এটা জানেন বলেই স্পিনের জাল বুনবেন।
সিএসকে-আরসিবি ম্যাচের আরও নায়ক আছে। মাঠে তাঁদের ছায়া কিংবা ছাপ দুইই দেখা যাবে। কিন্তু বিরাট বনাম ধোনির থেকে বড় বিজ্ঞাপন আর কী হতে পারে! ১৮র আইপিএলও জানে, তাকে জিততে হলে ৩৬এর বিরাট আর ৪৩এর ধোনিকেই চাই! না হলে মাঠে লোক টানবে কী করে?