Sunil Gavaskar: রক্তপিপাসুদের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ালেন গাভাসকর, রক্ষা পেল পরিবার
Happy Birthday Sunil Gavaskar: বাইশ গজে তিনি ছিলেন ভারতের আলাদিনের চিরাগ। ক্রিকেট মাঠে দেশকে বিপদ থেকে টেনে তুলতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। বিপক্ষের খুনে বোলারদের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতেন। গোটা ক্রিকেট বিশ্ব তা দেখেছে। কিন্তু পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চির মানুষটির অন্য এক সাহসিকতার সাক্ষী ছিল মাত্র কয়েকজন। উন্মত্ত জনতার রোষ থেকে রক্ষা করেছিলেন একটি পরিবারকে। রুখে দাঁড়িয়েছিলেন একাই।
মুম্বই: ১৯৯৩ সালের ১২ মার্চ। কেঁপে উঠেছিল বাণিজ্যনগরী মুম্বই। ছবির মতো সাজানো শহরটিতে পরপর ১২টি জায়গায় বিস্ফোরণ। কাতারে কাতারে মানুষের মৃত্যু, কান্না, হাহাকার। সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মুম্বই জুড়ে শুরু হয় হিংসা। মৃত্যুভয়ে সাধারণ মানুষ দরজায় খিল দিয়েছে। প্রতিবেশীর হাহাকার কানে গেলেও প্রতিবাদ করার সাহস নেই। এমনই এক উত্তপ্ত সকালে বান্দ্রা-ওরলি সি লিঙ্কের পাশের এক আবাসনের বাইরে দেখা গেল জটলা। ভিড় ক্রমশ বাড়ছে। আবাসনের বাসিন্দারা জানালার পর্দা সরিয়ে দেখছেন, একটি গাড়ির ভেতর শিশু সন্তান-সহ এক দম্পতি। আর বাইরে খুনে মেজাজের একঝাঁক উন্মত্ত চোখ। কারও হাতে অস্ত্র। প্রাণভয়ে সিঁটিয়ে পরিবারটি ক্রমাগত প্রাণভিক্ষা করে চলেছে। সেদিকে চোখ নেই নেকড়ের দলের। হঠাৎই তাদের নজর গেল আবাসনের ভেতর থেকে রুদ্রমূর্তি ধারণ করে ছুটে আসছে এক খর্বকায় শরীর। ‘নেকড়ে’র দলের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ালেন মানুষটি। চিৎকার করে আড়াল করলেন পরিবারটিকে। থমকে দাঁড়াল রক্ত পিপাসুরা। ক্রিকেট মাঠের চেনা মানুষটির এই অচেনা রূপ তো তারা আগে দেখেনি।
ভদ্রলোকের খেলার অতি ভদ্র মানুষ। পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চির মানুষটি শুধুমাত্র বাইশ গজে ব্যাট হাতে প্রতিপক্ষের ধোলাই করেছেন। বাস্তবে ঝামেলা ঝঞ্ঝাটের থেকে ক্রোশ দূরে থাকতেন সুনীল গাভাসকর। যদিও তাঁর সাহসিকতা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ ছিল না। নয়তো হেলমেট ছাড়াই মাইক হোল্ডিং, অ্যান্ডি রবার্টস, ম্যালকম মার্শাল, রিচার্ড হ্যাডলি, ডেনিস লিলি-দের মোকাবিলা করার সাহস পেতেন কোথা থেকে। টেস্টে প্রথম দশ হাজার রানের মালিক। সেই মাঠের নায়ক একদিন পথে নেমে সাহসিকতা দেখালেন। হয়ে উঠলেন দশের নায়ক। ঘটনাটা সেই ১৯৯৩ সালের মুম্বই বিস্ফোরণের কয়েকদিন পরের।
অনেকদিন হল ব্যাট-প্যাড তুলে রেখেছেন। তাও সকাল সকাল গা ঘামানোর অভ্যেস যায়নি গাভাসকরের। সেদিনও ছাদের উপরে ছিলেন। সেখান থেকে বিল্ডিংয়ের নীচে কী হচ্ছে সব দেখছিলেন। খুব খারাপ কিছু একটা ঘটতে চলেছে অনুমান করে প্রতিবেশীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। কিন্তু বাইশ গজের কিংবদন্তির ডাকে কেউ সাড়া দেওয়ার সাহস পাননি। তারপর আর থাকতে পারেননি। সিঁড়ি দিয়ে ছুটে নীচে নেমে গিয়েছিলেন।
তারপর কী হল? নিজের চোখে দেখা পুরো ঘটনাটির বর্ণনা দিয়েছেন গাভাসকর পুত্র রোহন গাভাসকর। তিনি বলেন, “বাবা ওই লোকগুলির কাছে গিয়ে বললেন, তোমরা ওই পরিবারের সঙ্গে যা করতে চাও সেটা আগে আমার সঙ্গে করতে হবে। তার থেকে এই পরিবারটিকে ছেড়ে দাও।” বেঁচে গিয়েছিল পরিবারটি। বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নিয়েছিলেন বাইশ গজের রাজা। রোহনের কথায়, “এই ধরনের কাজের জন্য আলাদা সাহসের প্রয়োজন হয়। অনেকেই হয়তো এটাকে হঠকারিতা বলবেন। কিন্তু এরকম কাজ করতে হলে কতটা সাহসের প্রয়োজন তা মাথায় রাখা দরকার।”