ISL 2021-22: ‘আমার আক্ষেপ মেটাল কিয়ান’: জামশিদ নাসিরি
বড় ম্যাচে ছেলের হ্যাটট্রিকের দিন জামশিদের উচ্ছ্বাস বাঁধনছাড়া। ডার্বিতে ছেলের দুরন্ত পারফরম্যান্সে গর্বিত বোধ করছেন জামশিদ।
কৌস্তভ গঙ্গোপাধ্যায়
পার্ক স্ট্রিটের স্টিফেন কোর্টের এলআইসি বিল্ডিংয়ে আজ যে সেলিব্রেশন চলছে, তার নেপথ্যে নায়ক জামশিদ নাসিরির (Jamshid Nassiri) ছেলে কিয়ান নাসিরি (Kiyan Nassiri)। কলকাতা ডার্বিতে হ্যাটট্রিক করে শোরগোল ফেলে দিয়েছেন ২১ বছরের কিয়ান। ছেলের এই রেকর্ডে উচ্ছ্বসিত বাবা জামশিদ। সেলিব্রেশনের ফাঁকেই, সবুজ-মেরুনের ডার্বি জয়ের রাতে, ‘টিভি নাইন বাংলা’কে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ফুটবলার জামশিদ নাসিরি।
বড় ম্যাচে ছেলের হ্যাটট্রিকের দিন জামশিদের উচ্ছ্বাস বাঁধনছাড়া। ডার্বিতে ছেলের দুরন্ত পারফরম্যান্স নিয়ে জামশিদ বলে দিলেন, “বাবা হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে। ৬১ মিনিটে নেমেছিল ও। নেমেই ও খেলাটা চেঞ্জ করে দিল। ডার্বি ম্যাচে হ্যাটট্রিক মানে বিরাট একটা প্রাপ্তি। আমার ভীষণ ভালো লাগছে। আমার কাছে আজ একটা গর্বের দিন।”
নিজের কেরিয়ারে জামশিদ নাসিরি বরাবরই ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলেছিলেন। ১৯৮০ সালে কলকাতায় এসেই খেলেছিলেন লাল-হলুদে। কিন্তু মোহনবাগানে খেলার সুযোগ পাননি। কারণ, তখন সবুজ-মেরুনে বিদেশি ফুটবলার নেওয়া হত না। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে ডার্বিতে জামশিদের ৫টা গোল রয়েছে। ১৯৮০ সালে রোভার্স কাপের সেমিফাইনালে প্রথম ডার্বিতে গোল করেছিলেন তিনি। কেরিয়ারে তিনি অনেক ডার্বি খেলেছেন। তাঁর ছেলে প্রথম ডার্বি খেলতে নামল আজ, তাও আবার সুপারসাব হিসেবে। নেমেই রেকর্ড করলেন জুনিয়র নাসিরি। বাইচুং ভুটিয়ার ১৯৯৭ সালে ৪-১ গোলে জেতা ম্যাচে হ্যাটট্রিক ছিল। দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে কিয়ান আজ ডার্বিতে হ্যাটট্রিক করল। আইএসএলে প্রথম ভারতীয় হিসেবে ডার্বিতে এটিকে মোহনবাগানের জার্সিতে প্রথম হ্যাটট্রিক করল কিয়ান।
Unbelievable scenes at the Fatorda!
Kiyan Nassiri scores a hat-trick that puts us 3-1 ahead with barely seconds to go for the final whistle.
What a night for the youngster and what a finish to the game! ??#ATKMohunBagan #JoyMohunBagan #আমরাসবুজমেরুন #HeroISL #ATKMBSCEB pic.twitter.com/3xLxYaZBHZ
— ATK Mohun Bagan FC (@atkmohunbaganfc) January 29, 2022
লাল-হলুদে খেলা জামশিদ ছেলে কিয়ানকে নিয়ে বলছিলেন, “ওকে ছোটবেলা থেকে নিজে হাতে তৈরি করেছি আমি। তাই আমি চাই ও অনেক দূর এগিয়ে যাক। এখানেই যেন স্বপ্ন শেষ না হয়ে যায়। অবশ্যই ভালো লাগছে। কিন্তু আমি ওর কাছে এরকম আরও অনেক গোল দেখতে চাই।”
ডার্বিতে সুপারসাব হয়ে তিন তিনটে গোল করে দেওয়া কিয়ান রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন। এমনটা কি আশা করেছিলেন ছেলের কাছ থেকে? এই ব্যাপারে জামশিদ বলে দিলেন, “আমি আশায় ছিলাম। ভাবতাম ও কবে নামবে। কাজের প্রতি ফোকাসড ছিল। ম্যাচ খেলতে না পারলেও ও মোহনবাগান দল নিয়ে খুশি ছিল। ও আমার কাছে কোনও নালিশ করত না।”
ছেলের মনোঃসংযোগে যাতে কোনও ব্যাঘাত না হয়, তার জন্য ম্যাচের আগে তাঁকে ফোন করেন না জামশিদ। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, “আমি ম্যাচের আগে ওর সঙ্গে কথা বলতাম না। চাইতাম ও নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকুক। আজও ওর সঙ্গে ম্যাচের আগে আমার কথা হয়নি। কিন্তু আজ ও যা করেছে তাতে আমি ভীষণ খুশি। সত্যি অবাক করার মতো।”
২০১৫ সাল থেকে বাংলার বয়সভিত্তিক টিমের হয়ে খেলছেন কিয়ান। সেই সময় থেকে নিজেকে প্রতিভা হিসেবে তুলে ধরেছেন। মোহনবাগান জুনিয়র টিমের হয়ে যখন খেলতেন, তখন বেশ কিছু টুর্নামেন্টে তিনি টপ স্কোরারও হয়েছিলেন। নিজে মোহনবাগানের হয়ে না খেলতে পারলেও, ছেলে সেটা করে দেখিয়েছে। জামশিদের কথায়, “আমার মোহনবাগানে না খেলাটা একটা আক্ষেপ ছিল। কিন্তু আমার সেই আক্ষেপটা আমার ছেলে মিটিয়ে দিল।”
ডার্বি জয়ের নায়ক হওয়ার জন্য ছেলেকে কোনও বিশেষ উপহার দেওয়ার কথা ভাবছেন না জামশিদ। বরং তিনি আদরে ভরিয়ে দিতে চান ছেলেকে। তাই বলে দিলেন, “কিয়ান বাড়িতে ফিরলে ওকে অনেক আদর করতে চাই, ভালোবাসা দিতে চাই। এবং আমি চাই আগামী দিনেও ও যেন এমনভাবেই পারফর্ম করতে পারে। নিজেকে মেলে ধরতে পারে।”