Tata Indica: শুধুই কি কম দাম, জ্বালানি দক্ষতা? রতন টাটার মস্তিষ্কপ্রসূত Tata Indica ফ্লপ হয়েও পরবর্তীতে যে কারণে হিট হয়েছিল…
Tata Indica মূলত ভারতীয়দের জন্য ডিজ়াইন করা হয়েছিল। এমন একটি যান, সাধারণ মানুষের সব চাহিদা পূরণ করছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখার পর নিশ্চিত করেছিলেন খোদ রতন টাটা। কিন্তু তারপরেও ফ্লপ হয়েছিল প্রথম Tata Indica মডেলটি। পরের কাহিনিটা ছিল সত্যিই রোমহর্ষক।
Tata এই মুহূর্তে দেশের অন্যতম নামজাদা একটি গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা। তবে সেই নামটা অর্জন করতে যে অনেকটাই সময় লেগেছে Tata Motors-এর। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে সংস্থাটিকে যে গাড়িটি এই উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে তার নাম Tata Indica। দুই দশকেরও বেশি সময় আগে 1998 সালের অটো এক্সপোতে টাটা তাদের ইন্ডিকা গাড়িটির এক ঝলক দেখিয়েছিল। তারপর তা পারিবারিক হ্যাচব্যাক হিসেবে মার্কেট করা হয়েছিল। সে সময় Tata Indica-র বিজ্ঞাপনে লেখা হত, “ছোট গাড়ি নিয়ে আপনাকে আর ভুগতে হবে না”। এই ট্যাগলাইনই যেন বহু মানুষের মনে গেঁথে গিয়েছিল। সে সময় ছোট গাড়ির সেগমেন্টে Maruti 800 এবং Maruti Zen-এর সঙ্গে জোরদার টক্কর দিচ্ছিল Tata Indica।
ওয়াইল্ড ফিল্মস ইন্ডিয়া একটি ইউটিউব ভিডিয়ো প্রকাশ করেছে। সেখানে Indica গাড়িটির ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়া তুলে ধরা হয়েছে। ফুটেজটিতে দেখা গিয়েছে, প্রোডাকশন লাইনের কর্মীদের, রোবট ওয়েল্ডিং, মনোকক নির্মাণ ও ইঞ্জিন একত্রিত করছেন এমন একজন ব্যক্তিকে। ফুটেজটিতে দেখা গিয়েছে স্বয়ং রতন টাটাকেও, যিনি বলছিলেন, “বাজারে প্রবেশ করার জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জিং সময়। আশা করি, মন্দা দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থায়ী হবে না।”
Tata Indica মূলত ভারতীয়দের জন্য ডিজ়াইন করা হয়েছিল। এমন একটি যান, সাধারণ মানুষের সব চাহিদা পূরণ করছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখার পর নিশ্চিত করেছিলেন খোদ রতন টাটা। সাধারণ মানুষের সাধারণ সব চাহিদা পূরণ করার জন্য গাড়িটি একদিকে যেমন কমপ্যাক্ট ছিল, তেমনই আবার তার কেবিন স্পেসও ছিল যথেষ্ট। তার থেকেও বড় কথা, গাড়িটি যেন ভাল জ্বালানি দক্ষ হয়। এদিকে আবার বেশি দামও ছিল না গাড়িটির। সে সময় একটি সাক্ষাৎকারে রতন টাটা বলেছিলেন, “Maruti Zen-এর আকারে, অ্যাম্বাস্যাডরের অভ্যন্তরীণ মাত্রার এই গাড়ি বাজারে Maruti 800-র দামে।”
উল্লিখিত সব চাহিদাই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছিল টাটা ইন্ডিকা। কিন্তু গাড়িটির প্রডাক্ট কোয়ালিটি নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছিল। সেই ছিল প্রথম বার যখন, Tata Motors প্যাসেঞ্জার ভেহিকল তৈরি করেছিল এবং উচ্চ চাহিদা ও সেই সঙ্গে গুণমান বজায় রেখে কর্মীদের জন্য উৎপাদন বৃদ্ধির কাজটি কঠিন করে তুলেছিল। Indica-র আগে সংস্থাটি শুধুই ট্রাক ও বাস তৈরি করত।
তড়িঘড়ি উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিবর্তন করে Tata Motors। মান নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয় সংস্থাটি। বাজারে আসে Indica-র উন্নত সংস্করণ Indica V2, যা খুব দ্রুততার সঙ্গে সাফল্যের মগডালে উঠে পড়ে! তাছাড়ও Tata Indica-ই ছিল ভারতের প্রথম গাড়ি, যা আন্তর্জাতিক বাজারে রিব্যাজ বা রিব্র্যান্ডেড ভার্সন হিসেবে বিক্রি করা হয়েছিল। ব্রিটেনের বাজারে এই গাড়িটিই MG CityRover হিসেবে বিক্রি করা হয়।
ডিজ়েল ইঞ্জিন চালিত Indica ছিল তার সেগমেন্টের একমাত্র বাহন। সবথেকে বড় সুবিধার দিকটি ছিল, ডিজ়েল জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং অধিকতর জ্বালানি দক্ষ। গাড়িটির ডিজেল ইঞ্জিন সর্বোচ্চ 53.5 bhp পাওয়ার আউটপুট এবং 85 Nm এর সর্বোচ্চ টর্ক আউটপুট দিতে সক্ষম হয়েছিল। এছাড়াও সে সময় গাড়িটির একটি 1.4 লিটার পেট্রল ইঞ্জিন ভ্যারিয়েন্টও বাজারে চালু ছিল, যা সর্বোচ্চ 60 bhp পাওয়ার আউটপুট এবং 104 Nm-এর সর্বোচ্চ টর্ক আউটপুট দিত।
ডিজেল ইঞ্জিনের ঠিক পরবর্তী সংস্করণে টার্বোচার্জার এবং একটি বৃহত্তর ইন্টারকুলার নিয়ে আসার ফলে ইঞ্জিন আউটপুটে উন্নতি হয়েছিল। ইঞ্জিনটি 68 bhp এবং 127 Nm টর্ক উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছিল। গিয়ারবক্সটি 5-স্পিড ইউনিটে আপগ্রেড করা হয়েছিল। 1998 সালের 30শে ডিসেম্বর লঞ্চ করা হয়েছিল Tata Indica। মাত্র 2 সপ্তাহের তাক লাগিয়ে 115,000 বুকিং পায় গাড়িটি। Indica-র জন্য প্রারম্ভিক মূল্য ছিল 2.59 লাখ টাকা (এক্স-শোরুম) এবং তার টপ-এন্ড DLX ভ্যারিয়েন্টের দাম ছিল Rs. 3.9 লাখ টাকা (এক্স-শোরুম)।