1963 থেকে 2023, সাইকেলের ক্যারিয়ারে যন্ত্র বহন করে যাত্রা শুরু, ISRO-র চাঁদ ছোঁয়ার স্বপ্নযাত্রা কেমন ছিল?
Chandrayaan 3 Journey: সালটা ছিল 1963। সেই সময় মহাকাশযানের জন্য ব্যবহৃত জিনিসপত্র গরুর গাড়ি ও সাইকেলের সাহায্যে নিয়ে যাওয়া হত। সেই থেকে 1984 সালের 2 এপ্রিল। ভারতের প্রথম মহাকাশচারী হিসেবে স্পেসে ইতিহাস রচনা করেছিলেন স্কোয়াড্রন লিডার রাকেশ শর্মা।

ভারত আজ চাঁদে পৌঁছেছে। কিন্তু এই যাত্রা এতটা সহজ ছিল না। এখানে পৌঁছতে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। অনেক বছর আগে চাঁদে পৌঁছানোর স্বপ্ন দেখেছিল ভারত। তবে সেই স্বপ্ন আজ সত্যি হয়ে চন্দ্রযান-3-এর ল্যান্ডার মডিউল ‘বিক্রম’ বুধবার (23 আগস্ট) সফলভাবে চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করেছে। এর মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করল ভারত। চন্দ্রযান-3-এর সাফল্যে গোটা দেশ গর্বিত। একই সঙ্গে গোটা বিশ্বের নজর ভারতের দিকে। সালটা ছিল 1963। সেই সময় মহাকাশযানের জন্য ব্যবহৃত জিনিসপত্র গরুর গাড়ি ও সাইকেলের সাহায্যে নিয়ে যাওয়া হত। সেই থেকে 1984 সালের 2 এপ্রিল। ভারতের প্রথম মহাকাশচারী হিসেবে স্পেসে ইতিহাস রচনা করেছিলেন স্কোয়াড্রন লিডার রাকেশ শর্মা। রাশিয়ার সঙ্গে ইসরোর যৌথ মহাকাশ মিশন। সেই সময় থেকে 2023-এ এসে চন্দ্রযানের চাঁদে পা রাখার পথটা মোটেই সহজ ছিল না।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই মহাকাশে যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল রাশিয়া ও আমেরিকা। দুই দেশই তখন একে অপরকে পেছনে ফেলার জন্য জলের মতো টাকা ঢালছে তাদের মহাকাশযানে। রাশিয়া প্রথম মহাকাশে পা রাখে 1957 সালে। এর পর রাশিয়াকে পেছনে ফেলে চাঁদে পৌঁছেছে আমেরিকাও। জানলে অবাক হবেন যে, 1969 সালে Apollo-11 মিশনে আমেরিকা খরচ করেছিল 2 লাখ কোটি টাকা। অন্যদিকে, মহাকাশের জগতে ভারতের যাত্রা শুরু হয়েছিল কেরলের উপকূলের থুম্বা থেকে। ভারত 1963 সালের 21 নভেম্বর, তার প্রথম সাউন্ডিং রকেট উৎক্ষেপণ করে। সে সময় পৃথিবীর কোনও দেশ কল্পনাও করেনি যে, একদিন ভারত মহাকাশে যাবে। কেরলের থুম্বা থেকে প্রথম রকেট উৎক্ষেপণের 6 বছর পর 1969 সালের 15 আগস্ট ISRO প্রতিষ্ঠিত হয়।
1971 সালে শ্রীহরিকোটায় মহাকাশ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়, যা আজ সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার নামে পরিচিত। এখন সেখান থেকেই সব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়। ISRO তার প্রথম উপগ্রহ আর্যভট্ট 19 এপ্রিল 1975 সালে উৎক্ষেপণ করে।

স্কোয়াড্রন লিডার রাকেশ শর্মা
ISRO কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে:
1977 সালে, স্যাটেলাইট টেলিকমিউনিকেশন এক্সপেরিমেন্ট প্রকল্প শুরু হয়। সেই প্রকল্পে প্রতিটি গ্রামে টিভি পৌঁছে যায়। প্রথম দেশীয় স্যাটালাইট SLV-3 18 জুলাই 1980 সালে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল এবং ISRO-এর প্রথম কমিউনিকেশন স্যাটালাইটটি 1981 সালে চালু হয়েছিল।
1981 সালে, ISRO-কে একটি কমিউনিকেশন স্যাটালাইটের জন্য একটি পরীক্ষা করতে হয়েছিল এবং পেলোড বহন করার জন্য একটি গরুর গাড়ির সাহায্য নিতে হয়েছিল। অবশেষে, তিন বছর পর, সুযোগ এল যখন রাকেশ শর্মা প্রথম ভারতীয় মহাকাশচারী হিসাবে মহাকাশে মোট 7 দিন 21 ঘণ্টা 40 মিনিট কাটালেন।
ভারত তার নিজস্ব জিপিএস সিস্টেম তৈরি করে:
কার্গিল যুদ্ধে শত্রুর অবস্থান জানার জন্য যখন আমেরিকার জিপিএসের প্রয়োজন হয়েছিল, তখন আমেরিকা সাহায্য করতে অস্বীকার করেছিল। তবে ভারত ঠিক করেছিল নিজের জিপিএস রাখবে। বর্তমানে ভারত সহ বিশ্বের নির্বাচিত অন্য দেশগুলির নিজস্ব নেভিগেশন সিস্টেম রয়েছে।

ভারতের চন্দ্রযান-1 মিশন:
2008 সালে, ভারত চন্দ্রযান-1 মিশন শুরু করে এবং 25 সেপ্টেম্বর 2009-এ ভারত বিশ্বকে জানায় যে তারা চাঁদের পৃষ্ঠে জল সনাক্ত করতে চলেছে। সে সময় গোটা বিশ্ব ভারতকে স্যালুট জানিয়েছিল।
ISRO-র মিশন মঙ্গল:
2013 সালে ISRO মিশন মঙ্গল লঞ্চ করেছিল। 24 সেপ্টেম্বর 2014-এ, ভারতই প্রথম দেশ হয়ে ওঠে, যারা এই ধরনের মিশনে সফল হয়েছে। এই মিশনের মাধ্যমে, ভারত গোটা বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা কীভাবে খুব কম খরচে সবচেয়ে বড় মিশন তৈরি করতে পারে। 2014-এর 24 সেপ্টেম্বর মঙ্গলের কক্ষপথে ‘মম’ পা রেখেছিল।

চন্দ্রযান-2 মিশন:
2018 সালের 14 নভেম্বর, পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী কৃত্রিম উপগ্রহ জিস্যাট-29 উৎক্ষেপন করা হয়। 2019 সালের 22 জুলাই, ভারত চন্দ্রযান-2 মিশন তৈরি করে। সেই মিশনের উদ্দ্যেশ্য ছিল চাঁদে জল খোঁজা। তারপরে 2019 সালের 7 সেপ্টেম্বর, চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছে গেল চন্দ্রযান-2-এর অরবিটার।
অবশেষে 2023 সালে চন্দ্রযান-3। আগের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, ভুল শুধরে, সর্বপ্রথম চাঁদের দক্ষিণ মেরু স্পর্শ করল ভারতই।
