চড় খেয়ে আত্মসম্মানে ঘা, প্রতিশোধ নিতে সুপারি কিলার লাগিয়ে খুন বন্ধুকে!

এলাকা দখলের লড়াইতে বলি হাওড়ার ঘুসুড়ির যুবক, চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল পুলিশের হাতে

চড় খেয়ে আত্মসম্মানে ঘা, প্রতিশোধ নিতে সুপারি কিলার লাগিয়ে খুন বন্ধুকে!
মৃত বিশালের ছবি
Follow Us:
| Updated on: Mar 01, 2021 | 10:47 PM

হাওড়া: এলাকায় ধীরে ধীরে দাদা হয়ে উঠছিলেন বছর একুশের বিশাল মাহাতো। আর সেটা মেনে নিতে পারেনি বিশালেরই এক বন্ধু তথা এলাকার অপর যুবক বিক্রম গুপ্তা। এ নিয়ে এক বচসার সময় বিক্রমকে চড় মেরে বসে বিশাল। তাতে আত্মসম্মানে ঘা লাগে বিক্রমের। তাই প্রতিশোধ নিতে সুপারি কিলার দিয়ে বিশালকে খুন করে সে। গত শুক্রবার হাওড়ার ঘুসুড়ি শুটআউট কাণ্ডে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের হাতে।

গত শুক্রবার দিনেদুপুরে বছর একুশের বিশাল মাহাতোকে গুলি করে হত্যা করে কয়েরকজন আততায়ী। এই ঘটনার তদন্তে নেমে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের হাতে। পুলিশ সূত্রের খবর, এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে বিশাল ও বিক্রমের মধ্যে ঝামেলা হয়। রাগের চোটে বিক্রমকে থাপ্পড় মেরে বসে বিশাল। তারই বদলা নিতে বন্ধুকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিক্রম। ঘুসুড়ির মালিপাঁচঘড়ায় বিশাল মাহাতো খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে এমনটাই জানতে পেরেছে পুলিশ। এই ঘটনায় মালিপাঁচঘড়া থানার পুলিশ বিক্রম-সহ মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। সিসিটিভি ফুটেজ ও বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ ঘেঁটে ঘটনার ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই রবিবার রাতে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়। সোমবার সকালে ধৃতদের হাওড়া আদালতে তোলা হলে তাদের ৭ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, ঘুসুড়ি এলাকায় বিক্রমের যথেষ্ট প্রভাব প্রতিপত্তি রয়েছে। এলাকার দুষ্কৃতীদের তালিকাতেও তার নাম আছে। সম্প্রতি বিশাল মাহাতো তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে শুরু করে। তাতেই ঝামেলা। বিশালের উপর রাগ বাড়তে থাকে বিক্রমের। দু’জনে বন্ধু হলেও বিশালের প্রভাব এলাকায় মেনে নিতে পারেনি বিক্রম। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, মাস দেড়েক আগে বিক্রমের ঘুসুড়ির সোনার দোকানে বসে কোনও একটি বিষয় নিয়ে বিশালের সঙ্গে বিক্রমের বচসা বাধে। আর তাতেই বিক্রমকে একটি চড় মেরে বসে বিশাল। চড়ে আত্মসম্মানে আঘাত লাগে বিক্রমের। বিক্রম ক্ষমা চাইতে বলে বিশালকে। বিশালের পরিবারের লোকেদের দিয়েও তাকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। কিন্তু বিক্রমের কাছে মাথানত করতে চায়নি বিশাল। তাতে আরও ক্ষোভ বাড়ে ক্ষুব্ধ বিক্রমের। এর পরই বিক্রম তার এক ঘনিষ্ঠ সাগরেদ রোহিত জয়সওয়ালকে বিষয়টি জানায়। বিশালকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার ছক কষে দু’জনে। এরপর রোহিত বিক্রমকে নিয়ে যায় সালকিয়ার ভোটবাগান এলাকার নেহাল আনসারি ওরফে মনুর কাছে। সুপারি নিয়ে বিশালকে খুন করতে রাজি হয় মনু। ঠিক হয় ১ লক্ষ টাকার বিনিময় বিশালকে খুন করা হবে।

সেই মতোই গত শুক্রবার দুপুরে মনু তার এক সাগরেদকে সঙ্গে নিয়ে বিশালকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে বাইকে চেপে চম্পট দেয়। মনু আনসারির সঙ্গে যে সঙ্গী মোটর বাইকে ছিল তার খোঁজে এখন তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। এই ঘটনায় আপাতত খুরশিদ আনসারি, আনোয়ারুল হক, নেহাল আনসারি ওরফে মনু, শাহিদ আনসারি, রোহিত জয়সওয়াল ও বিক্রম গুপ্তাকে গ্রেফতার করেছে তারা। জানা গিয়েছে, বিক্রমের ঘুসুড়িতে একটি সোনার দোকান ও বজরংবলি এলাকায় একটি লোহার ব্যবসা আছে। মৃত বিশালেরও লোহার ব্যবসা ছিল।

আরও পড়ুন: কয়লাপাচার কাণ্ডে এ বার রেলের তিন অফিসারকে তলব সিবিআই-এর

পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ২০১২ সালে বিশালের বাবা বিজয় মাহাতো দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হন। তিনিও এলাকায় প্রভাবসালী ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর এলাকা দখলে নামে বিশাল। অন্যদিকে এলাকায় প্রভাব বাড়াতে চায় বিক্রমও। এখানেই বাধে সংঘর্ষ।

এদিকে এই খুনের ঘটনায় দুষ্কৃতীরা তিনদিনের মধ্যে গ্রেফতার হওয়ায় মালিপাঁচঘড়া এলাকায় হাওড়া সিটি পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়ে মিছিল করেন স্থানীয়রা। তাঁদের বক্তব্য, এলাকায় দুষ্কৃতীরাজ কমাতে পুলিশের এই কাজ প্রশংসনীয়।