AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

বিপদের নাম ব্ল্যাক ফাঙ্গাস! রাজ্যে একদিনে আক্রান্ত ৩, সন্দেহভাজন ১

চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, প্রাথমিক স্বাস্থ্য়বিধি না মানার জন্যই মূলত এই মহিলা মিউকরমাইকোসিসে (Mucormycosis) আক্রান্ত হয়েছেন।

বিপদের নাম ব্ল্যাক ফাঙ্গাস! রাজ্যে একদিনে আক্রান্ত ৩, সন্দেহভাজন ১
প্রতীকী ছবি
| Updated on: May 28, 2021 | 10:44 PM
Share

পশ্চিমবঙ্গ: করোনার দৈনিক সংক্রমণ যখন তলানিতে তখন মিউকরমাইকোসিস (Mucormycosis) বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফ ক্রমশই চিন্তা বাড়াচ্ছে রাজ্যের। গত এক সপ্তাহে ক্রমেই বাড়ছে এই ছত্রাকে আক্রান্তের সংখ্যা। শুক্রবার, রাজ্যে একদিনে মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত হলেন ৩ জন। ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বীরভূমে পাওয়া গেল তিন আক্রান্তের খোঁজ। সন্দেহের তালিকায় উত্তর দিনাজপুরের এক ব্যক্তি।

বীরভূম:

রামপুরহাটে মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত হলেন এক ৮৬ বছরের বৃ্দ্ধা। করোনা থেকে সেরে ওঠার পরই তিনি মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত হন। বর্তমানে তিনি রামপুরহাট মেডিক্য়াল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। রামপুরহাট হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রান্ত জামনাথুরা বিবি নামে ৮৬ বছরের ওই বৃদ্ধা কিছুদিন আগে করোনা (Corona) আক্রান্ত হন। তারপর আরোগ্যলাভও হয় তাঁর। কিন্তু, কয়েকদিন আগে ওই বৃদ্ধার মুখে, চোখের তলায় কালো দাগ পড়তে শুরু করে। অবস্থা দেখে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে আনা হয় হাসপাতালে। হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে পরীক্ষা করে ওই মহিলার দেহে মিউকরমাইকোসিসের (Mucormycosis) জীবাণু ধরা পড়ে। ওই বৃদ্ধার চিকিৎসার জন্য জেলা স্বাস্থ্য ভবনে দ্রুত যোগাযোগ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধা বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত। শুধু তাই নয়, তাঁর কিডনিও যথোপযুক্ত কাজ করে না। ফলে রীতিমতো চিন্তায় আছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতাল সুপার জানিয়েছেন, যেহেতু ওই বৃদ্ধা হাইলি ডায়বেটিক, তাই চিন্তা থেকেই যাচ্ছে। উপরন্তু তাঁর রেনাল ফেলিওর। ফলে সবরকম তাঁকে দেওয়া যাবে না। চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, প্রাথমিক স্বাস্থ্যবিধি না মানার জন্যই মূলত এই মহিলা মিউকরমাইকোসিসে (Mucormycosis) আক্রান্ত হয়েছেন। একই মাস্ক বারবার ব্যবহার করা, মাস্ক পরিষ্কার না করা, ময়লা ঘাঁটা, ঠিকভাবে নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না রাখার জন্যই এই ছত্রাক সংক্রমণ।

উত্তর দিনাজপুর:

শুক্রবার রায়গঞ্জ শহরের এক পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তির দেহে পাওয়া গেল মিউকরমাইকোসিস বা কৃষ্ণ ছত্রাকের উপসর্গ। জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তি কিছুদিন আগে করোনা আক্রান্ত হয়ে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বুধবার থেকে ওই ব্যক্তির দেহে মিউকরমাইকোসিসের বেশ কিছু উপসর্গ দেখা যায়। শুক্রবার, ওই রোগীকে   রায়গঞ্জ হাসপাতাল থেকে উত্তরবঙ্গ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই ওই ব্যক্তির পরীক্ষা করা হবে এমনটাই জানিয়েছে রায়গঞ্জ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে দুই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

ঝাড়গ্রাম ও পুরুলিয়া:

বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামের ও পুরুলিয়ার দুই ব্যক্তির দেহে মিউকরমাইকোসিসের উপসর্গ দেখা দিতেই তাঁদের বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি সাংবাদিক বৈঠক করে জানান,  ঝাড়গ্রাম ও পুরুলিয়া থেকে আসা ওই দুই ব্যক্তির দেহে মিউকরমাইকোসিসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। তাঁরা দুজনেই করোনায় আক্রান্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আগে আক্রান্ত তিন ব্যক্তির অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল এমনটাই জানানো হয় হাসপাতাল সূত্রে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত জা়ইগোমাইকোটা (Zygomycota Fungus)  নামে একধরনের বিরল প্রজাতির ছত্রাক থেকে এর উৎপত্তি। তবে, মানুষের শরীরে, সংক্রমণের জন্য যে ছত্রাক প্রজাতি দায়ী, তার মধ্যে জা়ইগোমাইকোটা পড়ে না। সিডিসি বলছে, মূলত, মিউকর ও রাইজোপাস জাতীয় ছত্রাক প্রজাতি এই সংক্রমণের জন্য দায়ী। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক যদিও জানিয়েছে, দীর্ঘদিন আইসিইউতে থেকে চিকিৎসা করালে, স্টেরয়ডের অত্যধিক ব্যবহারে বা কোমর্বিডিটি থাকলেও এই ছত্রাক আক্রমণ করতে পারে। এমনকি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেনের অতিরিক্ত ব্যবহারের জেরে মিউকরমাইকোসিসের সংক্রমণ ঘটতে পারে এমন প্রশ্ন তুলেছিলেন এইমসের রিউম্যাটোলজি বিভাগের প্রধান ড. উমা কুমার। তাঁর দাবি ছিল, দীর্ঘদিন বিভিন্ন সময়ে রোগীদের উপর স্টেরয়েড ব্যবহারের পরেও কিন্তু মিউকরমাইকোসিস দেখা যায়নি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে চাহিদা মেটাতে শিল্পক্ষেত্রের অক্সিজেন স্বাস্থ্য়খাতে ব্য়বহারের জন্য মিউকরমাইকোসিসের সংক্রমণ হতে পারে বলে দাবি করেছিলেন ড. উমা কুমার। যদিও, সে বার স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে কোনও উত্তর না এলেও এইমসের কর্ণধার ড. রণদীপ গুলেরিয়া জানান, করোনা আক্রান্ত রোগী যদি ডায়বেটিক হয়ে থাকেন বা তাঁর রক্তে যদি শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে তবে তিনি মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত হতে পারেন।

Black-Fangus-Web-1

ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের লক্ষণগুলি কী কী?

বস্তুত,  মিউকরমাইকোসিস বা কৃষ্ণ ছত্রাকের সংক্রমণ মোটেও লঘু করে দেখতে রাজি নয় রাজ্য স্বাস্থ্য় দফতর। ইতিমধ্যেই এই সংক্রমণ রুখতে একাধিক বৈঠক সেরেছেন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক। রাজ্য় স্বাস্থ্য় দফতরের শেষ পাওয়া বুলেটিন অনুযায়ী, বুধবারের পর নতুন করে রাজ্যে মিউকরমাইকোসিসে (Mucormycosis) আক্রান্তের মোট সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩। অন্যদিকে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে (Black Fungus) মৃত এমন সন্দেহভাজনের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩। গতকালই আসানসোলে মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন একজন। শুক্রবার, মোট আক্রান্তের সংখ্যা ধরলে রাজ্যে এখন সংক্রমিতের সংখ্যা ১৬ এবং সন্দেহভাজনের সংখ্যা বেড়ে হল ৪। কেন্দ্রের তরফে এই সংক্রমণকে ইতিমধ্যেই ‘নোটিফায়েবল ডিজ়িজ়’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এই বিরল প্রজাতির  ছত্রাকে সংক্রমিতের সংখ্যা দেশে ১১ হাজার পেরিয়ে গিয়েছে। বর্তমানে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি গুজরাট এবং মহারাষ্ট্রে।

আরও পড়ুন: ‘এখন রাজনীতির সময় নয়’, করোনা আক্রান্ত বিজেপি নেত্রীর ভরসা সেই ‘কমরেডরা’