আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি: ময়নাগুড়ির রেল দুর্ঘটনার (Maynaguri Rail Accident) পরই নড়েচড়ে বসেছে ভারতীয় রেল (Indian Railways)। ওই ট্রেন দুর্ঘটনায় রেলের তরফেই বড়সড় গাফিলতি ছিল বলেই স্বীকার করে নিলেন আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের ডিআরএম দিলীপ কুমার সিং। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে সেকথাই কার্যত মেনে নেন রেলের অধিকর্তা।
সাংবাদিক বৈঠকে দিলীপ কুমার সিং বলেন, “আমরা টানা সাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলেছি। চারদিন ধরে নানা তথ্য সংগ্রহ করেছি। বিভিন্ন প্রশ্ন উঠে এসেছে, সেই প্রশ্নগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ক্রশ চেকিং চলছে। সিআরএস যাবতীয় বিষয় নিয়ে তদন্তের কাজ শুরু করেছে। সিস্টেমে গণ্ডগোল ছিলই, এছাড়াও আরও কিছু গোলমাল রয়েছে, যা তদন্তে উঠে এসছে।”
দিলীপবাবুর আরও সংযোজন, “ভারতীয় রেলে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য সব তথ্য একজায়গায় করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখনও এ নিয়ে কোনও তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি। এগুলি খতিয়ে না দেখলে আবারও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
বুধবারই ভারতীয় রেলের সব জোনের সঙ্গে বৈঠকে বসে রেল বোর্ড। ট্রেনের যাত্রী সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় ওই বৈঠকে। সূত্রের খবর, রেল বোর্ডের এই বৈঠকে উত্তর সীমান্ত রেল জোনের সাম্প্রতিক দুর্ঘটনা নিয়ে বিশদে আলোচনা হয়েছে।
আগামী দিনে এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, সেই সব নিয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। রেল বোর্ডের তরফে প্রতিটি জোনের জেনারেল ম্যানেজারদের থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সংক্রান্ত মতামত শোনা হয়। উত্তরবঙ্গের রেল দুর্ঘটনা কেন হল তাই নিয়ে দিনের বৈঠকে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা হয়।
উল্লেখ্য, এর আগে মঙ্গলবার পূর্ব রেলের বিভিন্ন শাখার ডিআরএম এবং রেল আধিকারিকদের নিয়েও বৈঠকে বসা হয়। বুধবারও সেই বৈঠকেও বারবার আলোচনায় উঠে এসেছে ময়নাগুড়ির রেল দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ। যাত্রী সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে ট্রেলগুলির সেফটি ড্রাইভের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে পূর্ব রেলের বৈঠকে। এর পাশাপাশি রেলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশগুলির উপরেও নজর কথা বলা হয়েছে পূর্ব রেলের বৈঠকে।
ওই ট্রেন দুর্ঘটনায় উঠে এসেছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। ট্রেনের ইঞ্জিনের রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা দেখভালে ত্রুটি ছিল। রেলের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। শুধু তাই নয়, ইঞ্জিনের রক্ষণাবেক্ষণেও ত্রুটি ছিল, তার জেরেই এই দুর্ঘটনা বলে জানিয়েছে কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটি।
কিছুদিন আগেই সিআরএস-এর তদন্তে লোকো পাইলট এবং গার্ডকে জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা গিয়েছে, ট্রেনের ইঞ্জিনে আগে থেকেই সমস্যা দেখা গিয়েছিল। এমনকি, ট্রেনটিকে রানিনগরে দাঁড় করিয়ে পরীক্ষাও করা হয়। সেই বিষয়ে স্টেশনের লগ বুকেও উল্লেখ করা রয়েছে। সেই লগ বুক টিসিআরএস নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে বলে খবর সূত্রের।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে, আচমকাই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে উত্তরবঙ্গে। দুর্ঘটনার সময় ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে চলছিল এক্সপ্রেস ট্রেনটি। দুর্ঘটনায় দেখা যায়, ট্রেনের বগিগুলো খেলনা গাড়ির মতো একে অপরের ওপর উঠে পড়েছে। এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় মোট ৯ জন মারা যান। আহত হন প্রায় ৪৪ জন। তাঁদের সকলকেই তৎক্ষণাৎ জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি ভর্তি করা হয়।