Kolkata Police: সবচেয়ে সুরক্ষিত! তবুও প্রশ্ন, শহরজুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে ব্যর্থ কলকাতা পুলিশ
Kolkata: কলকাতা পুরসভার মেয়র পরিষদের বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রায় ৩২ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে বাতিস্তম্ভ বসানোর জন্য।
কলকাতা: এই শহরের নানা রূপ। কোনওটা চেনা, কোনওটা অচেনা। সন্ধে নামলে গোটা তিলোত্তমা সেজে ওঠে আলোয়। দিনরাতের ব্যস্ততায় এই শহর অনেক কিছু দেখে। দেখে অপরাধও। কেন্দ্রীয় রিপোর্ট বলছে, গোটা দেশের সমস্ত মেট্রো সিটির (Metro City) মধ্যে কলকাতাই সবচেয়ে নিরাপদ। অপরাধের নিরিখে দেশের অন্যান্য মেট্রো শহর গুলির মধ্যে ‘নিরাপদতম’ কলকাতা (Kolkata)।
রিপোর্টে এ-ও বলা হয়েছে যে, গত তিন বছরে নিয়মিত হারে অপরাধের সংখ্যা কমেছে বাংলার রাজধানীতে। এমনকি, মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনাতেও দিল্লি, বেঙ্গালুরু, মুম্বইয়ের মতো শহরগুলির থেকে বেশি নিরাপদ কলকাতা। কিন্তু তাতেই স্বস্তি মিলছে কী? অপরাধ দমনে কতটা সক্রিয় কলকাতা পুলিশ?
খামতি কোথায়?
সূত্রের খবর, গোটা কলকাতা শহরে এখনও পর্যাপ্ত সিসিটিভি নেই। সারা শহর সিসিটিভি আর বাতিস্তম্ভে মুড়তে অপারগ কলকাতা পুলিশ। রাতের শহরকে নিরাপদ এবং সুরক্ষিত রাখতে কেন্দ্রের তরফে প্রাপ্ত নির্ভয়া তহবিলের দ্বিতীয় পর্যায়ের টাকা দিয়ে আলোক স্তম্ভ বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা পুরসভা।
সম্প্রতি, কলকাতা পুরসভার মেয়র পরিষদের বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রায় ৩২ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে বাতিস্তম্ভ বসানোর জন্য। সেফ সিটি উইমেন সেফটি প্রজেক্ট বা নির্ভয়া প্রকল্পের অধীনে শহরে প্রথম পর্যায়ের কাজে যেখানে যেখানে রাতের আলো বসানোর কাজ শেষ হয়নি, সেখানেই দ্বিতীয় পর্যায়ের টাকা দিয়ে কাজ হবে বলেই খবর।
পুরসভার বক্তব্য
পুরসভা সূত্রে খবর, প্রথম পর্যায়ের জন্য ১কোটি ৭১ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের জন্য ১ কোটি টাকা ধরা হলেও পুরসভা হাতে পেয়েছে এখনও পর্যন্ত ৩৩ লক্ষ টাকা। যদিও আলো বসানোর কাজ ঠিকমত হলেও এই প্রকল্পের অধীনে শহরে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই কাজ গত কয়েক বছরে শেষ করে উঠতে পারেনি কলকাতা পুলিশ। তাই প্রশ্ন উঠছে, শুধু আলো বসিয়ে কি আদৌ কোনও কাজ হবে? কারণ রাস্তাঘাটের ওপর যদি ক্যামেরা দিয়ে নজরদারি না রাখা যায় তাহলে নিরাপত্তা কোথায়?
কী বলছেন কলকাতার মানুষ?
কী বলছেন কলকাতার মানুষ? যাদবপুর থেকে রোজ সেক্টর ফাইভে যাতায়াত করেন মৌলি। কাজের সূত্রে প্রায়ই রাতে ফিরতে হয়। পরিবহনের সমস্যা তো রয়েছেই, রাতে ফেরার পথে একমাত্র উপায় ক্যাব। এরমধ্যে যাদবপুরের একাধিক এলাকায় সিসিটিভি নেই। মৌলি জানিয়েছেন, রাতের বেলা ফিরতে হলে নিশ্চিন্ত হয়ে ফেরা যায় না। কারণ, সিসিটিভিও নেই অনেক জায়গায় আর পুলিশকর্তাদেরও দেখা যায় না। অন্যদিকে, আরও এক নিত্যযাত্রী বলেন, “সিসিটিভি এখানে, এমনি রাস্তায় লাগাবে কেন? সব তো যেখানে লরি যায় বা বড় বড় গাড়ি সেখানে লাগিয়ে রেখেছে। তাহলে ধরতে সুবিধা হবে।”
হাইকোর্টে মামলা
সদ্য এই বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছে। নির্ভয়া তহবিলের টাকায় দুর্নীতি হয়েছে বলে হাইকোর্টে মামলা রুজু করা হয়। যদিও রাজ্যের তরফে আদালতে জানানো হয়েছে, নির্ভয়ার প্রকল্পের টাকা নিয়ে কোনও দুর্নীতি হয়নি। গোটা কলকাতা শহর জুড়ে ১০২০টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। কয়েকটি জায়গায় বসানোর কাজ চলছে। তবে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (CCTV) এখনও না বসানোয় প্রশাসনিক তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেন এত দিনে কাজ শেষ হল না তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
২০১২ সালে নির্ভয়া কাণ্ডের পর দেশের মেট্রো শহরগুলিতে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। ২০১৬ সালে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে প্রতি রাজ্যের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু এত বছরে কলকাতা শহরে সিসিটিভি ক্যামেরা কেন বসানো হয়নি? শহরের মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন এক আইনজীবী।
শহরে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর জন্য ১৮১ কোটির কিছু বেশি টাকা এসেছে কেন্দ্র থেকে। ইতিমধ্যেই ওয়েবেল-এর মতো বিশেষজ্ঞ কোম্পানিকে এর বরাত দেওয়া হয়েছে। শহরে ১০২০ সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সরকার তরফে জানানো হয়, এ বছরের মাঝামাঝি সময়েই এই কাজ শেষ করা যাবে।
পুরকর্তাদের পর্যবেক্ষণ
কলকাতা পুরসভার শীর্ষ কর্তাদের কথায়, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো পুলিশের আয়ত্ত্বাধীন। যে কারণে সংশ্লিষ্ট তহবিলের টাকা ওই খাতে ঠিক মতো খরচ হচ্ছে কিনা তা পুলিশ বলতে পারবে। কিন্তু কলকাতা পুরসভা কলকাতার যে এলাকাগুলি রাতের বেলায় পর্যাপ্ত আলো নেই, সেখানে প্রথম পর্যায়ের কাজের আলো বসিয়েছে। যদিও পুরসভার কর্তারা স্বীকার করেছেন, কলকাতার এমন অনেক জায়গায় রয়েছে বা অলিগলি রয়েছে, যেখানে রাতের অন্ধকারে আলো না থাকায় খুবই সমস্যা তৈরি হয়। সেখানে এতদিনে আলো না বসানোর কারণ হিসেবে আর্থিক দুর্বলতাকেই তাঁরা দায়ী করেছেন। সে ক্ষেত্রে এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা অনেকটাই সাহায্য করবে বলে তাঁরা আশাবাদী।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালের মেয়র পরিষদ বৈঠকে নির্ভয়া তহবিল দিয়ে প্রথম পর্যায়ের কাজ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। শহরের নির্জন এবং আলোহীন জায়গায় বাতিস্তম্ভ বসানোর সিদ্ধান্ত হয়। শহরের কোথায় কোথায় এমন অবস্থা হয়েছে তা লালবাজারের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে পুরসভা সিদ্ধান্ত নেয়, সেখানে সেখানে বাতিস্তম্ভ বসানো হবে। নিয়ম অনুযায়ী নির্ভয়া প্রকল্পের টাকা কেন্দ্র রাজ্যকে দেয়। রাজ্য লালবাজারকে এবং সেখান থেকে কলকাতা পুরসভার হাতে আসে।
কেন্দ্রের বরাদ্দ অর্থের হিসেবনিকেশ
সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী জানিয়েছিলেন, নির্ভয়া প্রকল্পে ৬,২১২.৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হয় শিশু ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রককে এবং বাকি টাকা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক ও রাজ্যগুলিকে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গ পায় ১৮১ কোটির কিছু বেশি টাকা পেয়েছে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় তথ্যনুযায়ী, গত তিন বছরে নির্ভয়া প্রকল্পে সারাদেশে প্রায় ২৪৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
২০১২ সালে দিল্লিতে নিশংস গণধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডের পর নির্ভায়া তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় সরকার। এই প্রকল্পের অধীনে সারা দেশে নারীদের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। তহবিলের এই টাকার মাধ্যমে অন্ধকার জায়গায় আলো বসানো, মহিলাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ এবং অপরাধীদের চিহ্নিত করতে স্কুল কলেজ এবং ব্যস্ত এলাকায় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো, শৌচালয় তৈরি করা, মহিলাদের বিরুদ্ধে অনলাইন অপরাধ কমাতে উন্নত মানের সাইবার সেল তৈরি করা, সাইবারক্রাইম পরীক্ষাগার তৈরি করা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: Hawkers in Kolkata: ‘ফুটপাথ তুমি কার’! হকার-পথচারির ‘টাগ অব ওয়ারে’ হাঁসফাঁস করছে শহুরে রাস্তা