Hawkers in Kolkata: ‘ফুটপাথ তুমি কার’! হকার-পথচারির ‘টাগ অব ওয়ারে’ হাঁসফাঁস করছে শহুরে রাস্তা
Kolkata: টাউন ভেন্ডিং কমিটি তৈরি হয়েছিল ২০১৮ সালে। তারপর থেকে আর কমিটি তৈরিই হয়নি। নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে এই কমিটি তৈরির কথা বলেছেন হকার সংগ্রাম কমিটির কর্তারা।
কলকাতা: রাস্তা রয়েছে। কেবল পথচারিদের জন্য বরাদ্দ। কিন্তু হাঁটার জায়গা নেই। কলকাতা শহরের এই ছবিটা চেনা। কারণ, ফুটপাথ (Foot Path) জুড়ে হকারদের দৌরাত্ম্য। তাহলে হাঁটবেন কোথায় পথচারিরা? ফুটপাথের যেখানে-সেখানে দোকান। এড়ানো যায় না দুর্ঘটনাও। হকাররাও হক ছাড়তে নারাজ! তাহলে উপায়?
কী বলছে পরিসংখ্যান?
পশ্চিমবঙ্গে হকারের সংখ্যা ১৬ লক্ষ। সারা ভারতবর্ষে সেই সংখ্যাটাই ৪ কোটি। বাম আমলে ফুটপাথে হকারদের দোকানদারির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়ম চালু হয়। তৈরি করা হয় টাউন ভেন্ডিং কমিটি। সেই কমিটির নির্ধারিত নির্দেশ অনুযায়ী, কোনও ফুটপাথের এক তৃতীয়াংশ ব্যবহার করবেন হকার, বাকি দুই তৃতীয়াংশ ব্যবহার করবেন পথচারিরা। কোনও হকার যদি সেই নিয়ম না মানেন তাহলে সংশ্লিষ্ট হকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা যাবে।
টাউন ভেন্ডিং কমিটির নিয়ম অনুযায়ী, ৪০ শতাংশ হকার প্রতিনিধি, ১০ শতাংশ ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, ১০ শতাংশ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি, ৪০ শতাংশ পুলিশ এবং কলকাতা পুরসভার প্রতিনিধি থাকবে। কমিটির সদস্য সংখ্যা হবে মোট ১৮ জন।
সমস্যা হল, এই টাউন ভেন্ডিং কমিটি তৈরি হয়েছিল ২০১৮ সালে। তারপর থেকে আর কমিটি তৈরিই হয়নি। নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে এই কমিটি তৈরির কথা বলেছেন হকার সংগ্রাম কমিটির কর্তারা। কিন্তু কলকাতা পুরসভা তা মানতে নারাজ। পুর কর্তৃপক্ষের কথায়, আগের যে কমিটি রয়েছে, সেটিই প্রভোশনাল টাউন ভেন্ডিং কমিটি। সেই কমিটি হকারদের উপরে সার্ভে করবে এবং হকারদের তালিকা তৈরি করে তাতে একটি নীতি নির্ধারণ করবে। হকার সংগ্রাম কমিটির দাবি, হকারদের সমীক্ষা যদি করে ওই কমিটি, তাহলে তালিকা প্রকাশের আগে তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। এ ছাড়া সেই কমিটিকে কোনওভাবেই মান্যতা দেবেন না হকার সংগ্রাম কমিটি। এমনকী, তাঁরা আদালতে মামলাও করতে পারেন।
ফুটপাথ কার?
এদিকে, এই টানাপোড়েনে সমস্যায় পথচলতি সাধারণ মানুষ। ফুটপাথের জায়গা হাঁটার মতোই সরু। তারমধ্যে হরেকরকম হকারদের ভিড়।বিকিকিনির জিনিস ছাড়াও খাবার দোকান হোক বা অন্য কিছু, কী নেই! কার্যত ‘ফুটের দোকান’ বাঁচিয়ে চলতে হয় পথচারিদের। বিশেষ করে ভিড় বাজার চত্বরগুলির সংলগ্ন ফুটপাথগুলিতে। সেইসব ফুটপাথে হাঁটা যায় না। বাধ্য় হয়েই বড় রাস্তা দিয়ে হাঁটেন নিত্যযাত্রীরা।
এক পথচারির কথায়, “ওরা আগে দোকান করবে, তারপর আমরা হাঁটব! হাঁটার রাস্তা না হকারদের বুঝতে পারি না! কী করব, বাধ্য হয়ে বড় রাস্তা দিয়ে হাঁটি। একদিকে গাড়ি, একদিকে তাঁরা, আর যেখানে-সেখানে পার্কিং তো রয়েইছে।” অন্য আরেক নিত্যযাত্রী বলছেন, “শুনেছি তো হকারদের দোকান দেওয়ারও নানা নিয়ম রয়েছে। সেসব কেন মেনে তাঁরা দোকান দেন না, কেনই বা কেউ কিছু বলেন না, জানি না।”
অন্যদিকে, হকারদের দাবি, তাঁদের পাকা দোকান যদি সরকার দিতে পারে, তাহলে তাঁরা কেন ফুটপাথে বসবেন? একদিকে পাকা দোকান নেই, উপরন্তু বড় দোকানের চেয়ে সস্তায় জিনিস বিক্রি করেন তাঁরা। নূন্যতম লাভেই চলে বিক্রি। সেখানে যদি জায়গা নিয়েও কাড়াকাড়ি করতে হয়, তাহলে এই ছোট হকাররা কোথায় যাবেন? এক হকারের কথায়, “রাস্তার একের তিন অংশ নিয়ে বসা! ওভাবে দোকান হয় নাকি! সরকার আগে দায়িত্ব নিয়ে আমাদের জায়গা করে দিক, আমরা তারপর সেই জায়গাতেই বসব। তখন গোটা ফুটপাথ জুড়ে কেবল মানুষ হাঁটতে পারবেন।”
অতএব, সমাধান এখন বিশ বাঁও জলে। কবে ফুটপাথে হকার দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে, কবেই বা ফাঁকা রাস্তার দর্শন মিলবে তা তো প্রশাসনই বলবে। আপাতত প্রশাসনিক পদক্ষেপের দিকেই তাকিয়ে সংশ্লিষ্ট মহল।
আরও পড়ুন: Kolkata Police: সবচেয়ে সুরক্ষিত! তবুও প্রশ্ন, শহরজুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে ব্যর্থ কলকাতা পুলিশ