আলিপুরদুয়ার: বাউন্ডারি ঘেরা চার তলা বাড়ি। বাড়িটির ভিতরে গ্যারাজ, গ্যারেজের ভিতর গাড়ি, একটি নয় তিনটি গাড়ি (ইনোভা, ফরচুনার, সুইফ্ট ডিজ়ায়ার)। এছাড়াও রয়েছে ২টি দশ চাকার ডাম্পার, ১টি ছয় চাকার ডাম্পার, ২টি জেসিবি, ১টি ট্রাক্টর, ও ১টি টাটা হিটাচি। পাশে জগন্নাথ মন্দিরের আদলে পেল্লাই রাধা-কৃষ্ণের মন্দির। রোজ দু’বেলা নিয়ম মেনে নিত্যপুজো হয়। যদিও ওই মন্দিরে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। কেউ যদি চান, দূর থেকে মন্দির দর্শন করতেই পারেন! এবার আসি বাড়ির সামনে ফটকের বর্ণনায়। সুউচ্চ, রঙ-বেরঙের সাজানো বাড়ির সেই ফটক দেখলে মনে হবে দক্ষিণের কোনও তীর্থস্থানে ঢুকছেন। না, মন্দির নয়, তীর্থস্থান নয়, এই বিষয়-আশয়ের মালিক উত্তরবঙ্গের দাপুটে তৃণমূল নেতা তথা আলিপুরদুয়ারের ১ নম্বর ব্লক সভাপতি তথা আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের সহসভাধিপতি মনোরঞ্জন দে-র। সামজিক মাধ্যমে এই ছবি চর্চিত হতেই নেতার সাফ উত্তর, ‘সাধারণ মানুষের ভালবাসা আর দয়ায় এখানে এসেছি!’
মনোরঞ্জনের সম্পত্তির ফিরিস্তি
দীর্ঘ প্রায় পনেরো বছর ধরে সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন মনোরঞ্জন দে। তৃণমূল নেতার নিজের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজনীতির আগে তাঁর ব্যবসা ছিল। সঙ্গে ছিল ট্রাক ও বাসের ব্যবসা। ক্রেশার এবং পেস্টিং মিলও ছিল বলে জানা যাচ্ছে। তাঁর সাফ দাবি, ‘ব্যবসা করলে টাকাতো বাড়বেই।’ জোর গলায় বলেন, ‘আমি কোনও বেআইনি কাজ করি না। সব আইন মেনেই হচ্ছে।’
আলিপুরদুয়ার ১ নম্বর ব্লকের পাতলাখাওয়াতে বাড়ি তৃণমূলের এই ব্লক সভাপতির। বাড়ির ভিতরে রয়েছে বিশাল মন্দির সঙ্গে তিন-তিনটি গাড়ি। বিজেপি জেলা সভাপতি ভূষণ মোদকের অভিযোগ, বেআইনি বালি, পাথর খাদান রয়েছে তৃণমূল এই নেতার। আর তা থেকেই আসছে বেআইনি অর্থ।
মনোরঞ্জন দে-র প্রতিক্রিয়া
সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন করলে মনোরঞ্জনবাবু বলেন, ‘রাজনীতিতে তো পনেরো বছর এসেছি। আমি একসময় প্রধান ছিলাম। ছিলাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিও। তবে রাজনীতিতে আসার আগে আমার ইন্ডাস্ট্রি ছিল। মানুষ আমায় দু’হাত ভরে আশীর্বাদ করেছে। তাই আমি প্রশাসনিক কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। বিজেপির কোনও নেতার দয়ায় আসিনি। আমি সাধারণের দয়ায় এখানে এসেছি।’ এরপর মনোরঞ্জন বাবু আরও বলেন, ‘আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আর্থিক দুর্বলতা ছিল। কিন্তু এরপরে আমাদের ট্রাকের ব্যবসা ছিল, বাসের ব্যবসা ছিল। এখানেই শেষ নয়, আমাদের ক্রেশার মিল, পেস্টেং মিলও ছিল। রাজনীতিতে আসার আগেই এই সব ছিল। আমরা প্রথম থেকেই ব্যবসায়িক লোক ছিলাম। আর ব্যবসা করলে তো টাকা বৃদ্ধি হবেই। সিপিএম জমানায় নির্দল হয়ে ৪৫ টি কেস খেয়েছি। ওরা যদি প্রমাণ করে দিতে পারে তবে রাজনীতি থেকে বের হয়ে যাব।’
মনোরঞ্জন দে-র পরিচিতি
তৃণমূলের দাপুটে নেতা মনোরঞ্জন দে। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেসের গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ছিলেন। এরপর ২০১৬ সালে আড়াই বছরের আলিপুরদুয়ার ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন। ২০১৮ থেকে তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি হিসেবে রয়েছেন। আলিপুরদুয়ারের তোর্সা রিভার বেডের বালির সিন্ডিকেট বহু চর্চিত। এই রিভার বেডে একজন শ্রমিকের কাজ করতেন মনোরঞ্জন দে। তারপর একটি নৌকো কেনেন। পরে কেনেন পুরনো একটি লরি।
২০০৯ সালে আর এসপির হয়ে পঞ্চায়েতে জিতে প্রধান হওয়ার পর ২০১১ সালে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন। তারপরই তাঁর উত্থান শুরু হয়। পঞ্চায়েত প্রধান থেকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি। পরে আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি।
এই বিষয়ে বিজেপি জেলা সভাপতি ভূষণ মোদক বলেন, “২০ লক্ষ টাকার গেট বানিয়েছেন। মন্দির বানিয়েছেন ২০ লক্ষ টাকা খরচ করে। আরও অনেক স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির তিনি মালিক। কোথা থেকে এত টাকা রোজগার হয় আমরা জানি। বৈধ ব্যবসার মাধ্যমে কোটি টাকা রোজগার করা কারোর পক্ষেই সম্ভব নয়। ”
আরও পড়ুন: Bachchu Hansda: মন্ত্রী হয়েছিলেন একবার, বাচ্চু হাঁসদার বাড়ি দেখলে চমকে যাবেন আপনিও
আরও পড়ুন: Modasser Hossain: ‘কাটা তেলের’ ব্যবসায়ী থেকে পঞ্চায়েত প্রধান, তৃণমূল নেতার ‘লাভ হাউসের’ খরচ জানেন?