Burdwan University: বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক নিয়োগে স্বজনপোষণের অভিযোগ, অস্বীকার উপাচার্যের
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিয়োগের স্বচ্ছতা নিয়ে অভিযোগ উঠতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। এই ঘটনায় শাসকদলের বিরুদ্ধেই দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা
বর্ধমান: ফের নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ। এবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠল। কাঠগড়ায় স্বয়ং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিমাই চন্দ্র সাহা। বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’জন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর নিয়োগ ঘিরেই বির্তকের সূত্রপাত। ঘটনার জল গড়িয়েছে শিক্ষামন্ত্রী পর্যন্ত। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কাছে লিখিতভাবে এব্যাপারে অভিযোগ জানানো হয়েছে। আর এই অভিযোগ ওঠার পরই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা ও প্রাণীবিদ্যা বিভাগে দুই অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর নিয়োগ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দুই আত্মীয়কেই অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদে নিয়োগ করা হয়েছে বলে এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া বৈধ নিয়ম মেনে হয়নি বলে অভিযোগ।
দুই অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর নিয়োগের বৈধতা নিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়েরই আধিকারিকদের একাংশ অভিযোগে সরব হয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, নিয়োগপ্রক্রিয়া অবৈধভাবে হয়েছে। অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর (বোটানি) পদে নিয়োগের জন্য ৭ থেকে ৮ জন ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে দিব্যেন্দু সাহা নামে একজনকে নেওয়া হয়। তিনি উপাচার্য নিমাই চন্দ্র সাহার সম্পর্কিত ভাই। সেজন্যই তাঁকে বাড়তি সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। একইভাবে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর(জুওলজি) পদে উপাচার্যের আরেক আত্মীয় শুভজিৎ সাহাকে নিয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এই দুই অধ্যাপকের নিয়োগের বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রীর গোচরে আনা হয়েছে এবং গোটা বিষয়টি জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে ইতিমধ্যে চিঠি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই আধিকারিকদের একাংশ।
অন্যদিকে, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিয়োগের স্বচ্ছতা নিয়ে অভিযোগ উঠতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। এই ঘটনায় শাসকদলের বিরুদ্ধেই দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলেছে বিজেপি ও সিপিএম। বিজেপির জেলা সহ সভাপতি সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেসের মদতে এসব হচ্ছে। নিমাই চন্দ্র সাহা তাঁর আত্মীয়কে নিয়োগ করেছেন বেআইনিভাবে। এটাই গোটা রাজ্যে চলছে। হয় টাকা দিয়ে নিয়োগ হচ্ছে অথবা আত্মীয়-পরিজন চাকরি পাচ্ছে। সেজন্যই তো সিবিআই, ইডি তদন্ত হচ্ছে। তারই প্রতিফলন ঘটেছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। এটা চরম দুর্নীতি।” এই ঘটনার পিছনে প্রভাবশালী ব্যক্তির হাত রয়েছে এবং এর মধ্যে লেনদেনের ব্যাপার আছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বিজেপির সুরেই সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য দীপঙ্কর দে বলেন, ” গোটা রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঘেঁটে ঘ করে দিয়েছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলে রয়েছেন। অনেকেই জেলে। অধ্যাপক থেকে কেরানি সবক্ষেত্রই দুর্নীতিতে ভরে গিয়েছে। এর দায় উপাচার্যকে নিতে হবে। আমরা চাই, অবিলম্বে তদন্ত হোক এবং উপাচার্যকেও তদন্তের আতসকাচের নীচে আনা হোক।
যদিও স্বজনপোষণের অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস। তিনি বলেন, “অভিযোগ যে কেউ করতেই পারেন। তিনি সঠিক প্রমাণ দিয়ে জানান উচ্চ বিভাগে।” তবে উপাচার্যের আত্মীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হওয়ার কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন প্রসেনজিৎ দাস। তাঁর কথায়, “কেউ কারও আত্মীয় হতেই পারে। কিন্তু, তা বলে অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হতে পারবে না, তার মানে নেই। তাঁর যোগ্যতা আছে কিনা সেটা দেখা হোক।” অন্যদিকে, আত্মীয়ের অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিমাই চন্দ্র সাহা। তাঁর সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে উপাচার্য বলেন, “আমার কোনও ভাই নেই। তাছাড়া নিয়োগ প্রক্রিয়াতে উপাচার্যের কোনও ভূমিকা থাকে না। এর জন্য আলাদা কমিটি থাকে। যা কিছু হয়েছে তা নিয়ম মেনেই হয়েছে।”