বাঁকুড়া: পদ্মে ‘বিদ্রোহ’ অস্বস্তি অব্যাহত। দলীয় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ত্যাগ করে নেতৃত্বকে বার্তা দিয়েছেন একের পর এক নেতা। সূত্রের খবর, এবার কেন্দ্রীয় বাহিনী তুলে নেওয়ার আবেদন জানালেন বাঁকুড়ার দুই বিজেপি বিধায়ক। জানা গিয়েছে, নিজেদের ব্যক্তিগত কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষী প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়ে ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি দিয়েছেন বাঁকুড়ার দুই বিজেপি বিধায়ক। এই দুই বিধায়কের মধ্যে রয়েছে ওন্দার বিধায়ক অমরনাথ শাখা ও ইন্দাসের বিধায়ক নির্মল কুমার ধাড়ার নাম। অমরনাথ শাখা দুই বিধায়কের চিঠি দেওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। যদিও ইন্দাসের বিধায়ক নির্মল কুমার ধাড়া স্পষ্টতই জানিয়েছেন, তিনি কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহারের ব্যাপারে কোনও চিঠি দেননি।
গত বিধানসভা নির্বাচনে বাঁকুড়ার ১২টি আসনের মধ্যে ৮টিতে জয়লাভ করে বিজেপি। জয়লাভের পরই প্রতিটি বিজেপি বিধায়ককে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়া হয়। পরে বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষ তৃণমূলে যোগ দেন। বাকি সাত বিজেপি বিধায়কের এখনও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা রয়েছে। জানা গিয়েছে, প্রতি বিধায়কের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন পাঁচজন করে সিআইএসএফ।
সূত্রের দাবি, সম্প্রতি সেই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষী ছাড়ার আবেদন জানিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি দেন ওন্দার বিধায়ক অমরনাথ শাখা ও ইন্দাসের বিধায়ক নির্মল কুমার ধাড়া। ওন্দার বিধায়ক অমরনাথ শাখা দাবি করেন, প্রথম থেকেই তিনি এই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষী নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন না। এখন ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণে সেই নিরাপত্তারক্ষী ছাড়তে চাইছেন। কিন্তু কী সেই ব্যক্তিগত অসুবিধা এদিন তা খোলসা করেননি বিধায়ক। তবে এই তথ্য সামনে আসতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক জল্পনা। অন্যদিকে নির্মল ধাড়ার দাবি, তিনি এরকম কোনও আবেদন কোথাও করেননি।
অমরনাথ শাখা বলেন, “আমার ব্যক্তিগত অসুবিধা থাকার জন্য আমি আগেই বলেছিলাম কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা ছেড়ে দেব। আমি আর নির্মল ছাড়া চিঠি দিয়েছি কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়ার জন্য।” তাহলে কি এবার ফুল বদলের সময় এল? অমরনাথ শাখার স্পষ্ট জবাব, এরকম কিছুই নয়। অমরনাথ বলেন, “এরকম কোনও ব্যাপার নয়। সময় বলবে ওটা। আমরা প্রথম থেকেই নিরাপত্তারক্ষী না নেওয়ার পক্ষে ছিলাম।”
বাঁকুড়ার দুই সাংগঠনিক জেলা বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুরে গত ২৫ ডিসেম্বর সাংগঠনিক সভাপতি পদে রদবদল হয়। বাঁকুড়ার সাংগঠনিক জেলার জেলা সভাপতি হিসাবে বিবেকানন্দ পাত্রকে সরিয়ে সেখানে বসানো হয় অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতা সুনীল রুদ্র মণ্ডলকে। বিষ্ণুপুরেও একই ঘটনা ঘটে। সেখান সুজিত অগস্তিকে সরিয়ে বিল্বেশ্বর সিংহকে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপরই দলের অন্দরে ক্ষোভ বাড়তে শুরু করে। বিশেষ করে বিজেপির যে আট বিধায়ক (যদিও তন্ময় ঘোষ এখন তৃণমূলে) রয়েছেন তাঁরা এ নিয়ে অসন্তোষের বার্তা দেন বলে অভিযোগ ওঠে।
প্রথমে কয়েকজন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে দেন বলে জানা যায়। এরপরই বুধবার শোনা যায় বাঁকুড়ার চার বিধায়ক কয়েকদিন আগে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়েছিলেন, তাঁরা এবার দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাকে চিঠি দিয়েছেন। দুই সভাপতি বদলের আর্জি নিয়েই এই চিঠি বলে জানা যায়। যা ঘিরে নতুন করে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।
এ প্রসঙ্গে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “যেদিন থেকে খবর হতে শুরু করেছে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়ার, সেদিন থেকে গ্রুপ ছাড়াটা বেড়ে গিয়েছে। আবার নতুন গ্রুপে ওনারা যাচ্ছেন। এরকম বহু লোক করেছেন। এটা রাজনীতির খবর হচ্ছে। সংবাদমাধ্যম দেখাচ্ছে, তাই মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। আমাদের দলে নিরাপত্তারক্ষী নির্বাচনের আগে সবাইকে দেওয়া হয়েছিল। অনেকের তুলেও নেওয়া হয়েছে। ছ’মাস অন্তর রিভিউ হয় এটা। গতবার কয়েকজনের তুলে দেওয়া হয়েছিল। কয়েকজনের উঠেও যাবে। সে জন্য হয়ত অনেকে রিফিউজ করছেন। উত্তরবঙ্গের কয়েকজন বিধায়ক বলেছেন ওনাদের লাগবে না। গিমিকের রাজনীতি বেশিদিন চলে না। কারও কোনও সমস্যা থাকলে দলে এসে কথা বলবেন।”
আরও পড়ুন: পিছনে পড়ে রইল বাইডেন-বরিস, জনপ্রিয়তার নিরিখে ফের ‘বিশ্বসেরা’ প্রধানমন্ত্রী মোদীই