Bankura: জানেন বোনের স্মৃতিতে এখানকার ভাইরা ফুটন্ত ঘিয়ে হাত ডুবিয়ে তৈরি করেন পিঠে?

Bankura:বোনের একক চেষ্টা, অক্লান্ত পরিশ্রম আর সেবাযত্নে ধীরে ধীরে নির্ঘাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন সাত ভাই। সেবার প্রতীক সেই আদিবাসী বোন তাঁর আত্মত্যাগের জন্য আদিবাসী সমাজে দেবী রূপে প্রতিষ্ঠা পায়। পাকুড়ডিহা গ্রামে সেই বোনের স্মৃতিতেই শুরু হয় 'সাত ভায়া মিট্টাং মেশ্রা মতান্তরে সাত ভাইয়া মিট্টাং বেহানা' উৎসবের ।

Bankura: জানেন বোনের স্মৃতিতে এখানকার ভাইরা ফুটন্ত ঘিয়ে হাত ডুবিয়ে তৈরি করেন পিঠে?
পিঠে বানাচ্ছেন যুবকরাImage Credit source: Tv9 Bangla
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 19, 2024 | 10:30 AM

বাঁকুড়া: সাত ভাই এর জীবন বাঁচাতে শত শত বছর আগে জীবন বাজি রেখেছিলেন একমাত্র বোন। সেই বোনের স্মৃতিতে আজও কৃচ্ছ্রসাধন করেন গ্রামের আদিবাসী পুরুষরা। বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে গ্রামের অদূরে পুজো অর্চনার পাশাপাশি ফুটন্ত ঘিয়ে হাত ডুবিয়ে গুড়পিঠে তৈরি করেন পুরুষরা। বোনের জন্য প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পুরুষদের এমন কৃচ্ছ্রসাধন ইতিহাস শুধু এদেশে নয় সারা বিশ্বেই বিরল।

‘সাত ভাই চম্পা’র গল্প এ বিশ্বে বিরল নয়। দেশে দেশে বিভিন্ন ভাষায় ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে রূপকথায় বর্ণিত হয়েছে সেই গল্প। কিন্তু বাঁকুড়ার তালডাংরা ব্লকের পাকুড়ডিহা গ্রামে আদিবাসীদের ‘সাত ভাই চম্পার’ গল্পটা একটু ভিন্ন। বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত এই গ্রাম আপাদমস্তক জঙ্গলে ঘেরা। কয়েক শত বছর আগে গ্রামকে ঘিরে ছিল আরও ভয়ঙ্কর জঙ্গল। ভর্তি ছিল সাপে।

সেই জঙ্গলের উপরেই নির্ভরশীল ছিল গ্রামের মানুষের জীবন জীবিকা। পুরুষেরা জঙ্গল থেকে পশু পাখি শিকার করে এবং ফলমূল, কাঠ সংগ্রহ করে বাড়ি ফিরলে পরিবারের সকলে মিলে তাই ভাগ করে খেতেন। কথিত আছে, আজ থেকে কয়েকশো বছর আগে পাকুড়ডিহা গ্রামে সাত ভাই ও এক বোনের এক সংসার ছিল । সাত ভাই সকাল হলেই বের হতেন পশু শিকারে। দক্ষ শিকারী ভাইরা একদিন জঙ্গলে শিকারে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। একমাত্র বোনের বুঝতে দেরি হয়নি তাঁর ভাইরা বিপদে পড়েছেন। এরপর সেই বোন একাই জঙ্গল তন্ন তন্ন করে খুঁজে বের করেন। দেখেন বন্যপ্রাণীর আঘাতে গুরুতর আহত সাত ভাইকে উদ্ধার করে বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন।

বোনের একক চেষ্টা, অক্লান্ত পরিশ্রম আর সেবা-যত্নে ধীরে ধীরে নির্ঘাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন সাত ভাই। সেবার প্রতীক সেই আদিবাসী বোন তাঁর আত্মত্যাগের জন্য আদিবাসী সমাজে কার্যত ‘দেবী’ রূপে প্রতিষ্ঠা পান। পাকুড়ডিহা গ্রামে সেই বোনের স্মৃতিতেই শুরু হয় ‘সাত ভায়া মিট্টাং মেশ্রা মতান্তরে সাত ভাইয়া মিট্টাং বেহানা’ উৎসবের ।

শত শত বছর পরও আজও সেই বোনকে ভোলেনি পাকুড়ডিহা গ্রাম। আপামর বোনেদের মঙ্গলকামনায় গ্রামের পুরুষেরা একমাস ধরে কঠোর ব্রত পালন করেন। তারপর ৩ রা মাঘ এলেই সকলে মিলে জড়ো হন গ্রামের প্রান্তের একটি মাঠে। সেখানে রীতি মেনে বিভিন্ন পুজো অর্চনার পাশাপাশি মাটির খোলায় ফুটন্ত ঘিয়ের মধ্যে হাত ডুবিয়ে গুড় পিঠে ভেজে তা প্রসাদ হিসাবে নিবেদন করেন পুরুষরা।

তাঁরা যখন এই কৃচ্ছ্রসাধন করেন তখন গ্রামের মহিলারা ধামসা মাদলের তালে তালে অভিবাদন জানাতে থাকেন পুরুষ ব্রতীদের। প্রসঙ্গত, এ সমাজে নারী নির্যাতনের সংখ্যা প্রতিদিন নতুন রেকর্ড গড়ছে তখন প্রত্যন্ত পাকুড়ডিহা গ্রামের আদিবাসীদের সাত ভায়া মিট্টাং মেশ্রা নিসন্দেহে নতুন করে ভাবতে শেখায় আধুনিক সমাজকে।