Potato Cold Storage: একতরফা সিদ্ধান্তে ‘না’, হিমঘরে মজুত আলুর জন্য অতিরিক্ত মূল্য দিতে নারাজ ব্যবসায়ী সমিতি

Bankura: প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সম্পাদক বরেন মণ্ডল জানিয়েছেন, সরকারি নির্দেশ ছাড়া কোনওভাবেই কেবল হিমঘর মালিকদের সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে বরাদ্দ অতিরিক্ত ভাড়া দেওয়া হবে না।

Potato Cold Storage: একতরফা সিদ্ধান্তে 'না', হিমঘরে মজুত আলুর জন্য অতিরিক্ত মূল্য দিতে নারাজ ব্যবসায়ী সমিতি
হিমঘরে ভর্তি আলুর বস্তা, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 28, 2021 | 11:56 PM

বাঁকুড়া: বঙ্গে এখনও দেখা মেলেনি শীতের। মরসুম এসে গেলেও চাষে বিশেষ সুবিধা করতে উঠতে পারেননি আলুচাষিরা। একদিকে সারের কালো বাজারি আর অপর দিকে আলুর দাম না পাওয়া। সব মিলিয়ে আলু চাষদের মাথায় হাত। এরউপরে আরও বিপদের নাম হিমঘর। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে হিমঘর থেকে মজুত আলু বের না করলে অতিরিক্ত ভাড়া চেয়ে বসেছে হিমঘর কর্তৃপক্ষ। আর তাতেই বেঁকে বসেছে রাজ্যের আলু ব্যবসায়ী সমিতি।  তাঁদের দাবি, সরকারি নির্দেশ ছাড়া কোনওভাবেই  হিমঘরে মজুত আলুর জন্য বেশি ভাড়া দেওয়া যাবে না। রবিবার, সমিতির বৈঠকে এমনই জানালেন প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সম্পাদক বরেন মণ্ডল।

ঠিক কী নির্দেশ দেওয়া হয়েছে হিমঘর মালিকদের পক্ষ থেকে? বলা হয়েছে, রাজ্য সরকারের কৃষি বিপনন দফতরের নির্দেশ অনুযায়ী ৩০ নভেম্বর মধ্যে সারা রাজ্যের হিমঘর থেকে আলু নিকাশি করে হিমঘর ফাঁকা করে দিতে হবে। চলতি বছরে হিমঘরে সর্বকালের রেকর্ড আলু সংরক্ষিত হয়েছে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে হিমঘর থেকে সংরক্ষিত আলু না বের করলে ১ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর কুইন্ট্যাল প্রতি অতিরিক্ত ২২ টাকা ভাড়া দিতে হবে। হিমঘর কর্তৃপক্ষের এই নির্দেশিকা জারির পর থেকেই বিপাকে পড়েছেন জেলার আলু চাষী, আলু সংরক্ষণকারী থেকে ব্যবসায়ীরা।

কিন্তু, এ বছর, যেভাবে একের পর এক দুর্যোগ ও কোভিড কাঁটায় জেরবার হয়েছেন কৃষক থেকে ব্যবসায়ীরা, তাতে মজুত আলুই তাঁরা বিক্রি করে উঠতে পারেননি। নতুন চাষ করতে গিয়েও আবহাওয়ার জেরে বিস্তর বাধা পেয়েছেন। সেখানে ফের যদি হিমঘরেও অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয়, তাহলে সমস্যায় পড়বেন তাঁঁরাই। তাই রাজ্য সরকারের কাছে হিমঘরে আলু সংরক্ষণের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে। সেই আবেদনের উত্তর এখনও আসেনি। এদিকে রাজ্য সরকারের পূর্ব নির্ধারিত নির্দেশ অনুযায়ী, একাধিক হিমঘরই অতিরিক্ত ভাড়া বৃদ্ধির নোটিস দিয়ে দিয়েছে। এরই বিরুদ্ধে রবিবার বৈঠক করেন রাজ্য আলু ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যরা।

প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সম্পাদক বরেন মণ্ডল জানিয়েছেন, সরকারি নির্দেশ ছাড়া কোনওভাবেই কেবল হিমঘর মালিকদের সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে বরাদ্দ অতিরিক্ত ভাড়া দেওয়া হবে না। সেক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। প্রয়োজনে হিমঘর কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে বলেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বরেনবাবু।

অন্যদিকে, হিমঘর মালিকেরা জানান, ২৭ নভেম্বর রাজ্য সরকার নির্দেশিকা দিয়ে সোমবারের মধ্যে আলু বার করতে বলে। পূর্ব বর্ধমান জেলায় ২ কোটি ৩৩ লক্ষ বস্তা (প্রতি বস্তা ৫০ কেজি) আলু মজুত হয়েছিল। মঙ্গলবার পর্যন্ত তার প্রায় ১০% হিমঘরে মজুত রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। জেলার আলু ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, রবিবার থেকে পাইকারি বাজারে আলুর দাম বস্তা প্রতি ১০০ টাকা করে কমছে। খুচরো বাজারেও তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

রাজ্যে প্রতি মাসে পাঁচ লক্ষ টন আলু লাগে। ভিন্‌ রাজ্যে যায় প্রায় এক লক্ষ টন। নতুন আলু উঠতে দেরি আছে। অন্তর্বর্তী সময়ে রাজ্যের মানুষের জন্য ওই আলু প্রয়োজন। ফলে, আলু যত দ্রুত বের করে নেওয়া যায় তত ভাল। নয়ত পড়ে যোগানের অভাব দেখা দিতে পারে বলেই মনে করছেন হিমঘর মালিকদের একাংশ। আলু ব্যবসায়ী সমিতির পূর্ব বর্ধমানের সভাপতি সাগর সাহা জানান, এক-একটি হিমঘরের বাইরের আচ্ছাদনে পাঁচ-সাত হাজার বস্তা আলু রাখা যায়। সেখানে অনেক হিমঘরে ৩০-৪০ হাজার বস্তা আলু রয়েছে। ওই সব হিমঘর থেকে নির্দিষ্ট সময়ে আলু বার করতে সমস্যা হবে। সেক্ষেত্রে ভাড়া বৃদ্ধি করলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বেন আলুচাষিরা।

এমনিতেই, জেলায় সার অমিল। সারের দাম অগ্নিমূল্য।আবার এই সুযোগে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী কালোবাজারি শুরু করে দিয়েছেন। তাতেই নাজেহাল চাষিরা। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে রাসায়নিক সারের দাম। প্রিন্ট প্রাইসে রাসায়নিক সার পাওয়া যাচ্ছে না। প্রিন্ট প্রাইস থেকে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা বেশি মূল্যে রাসায়নিক সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। যার ফলে চাষিরা আলু চাষ কমিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন। এখনও মাঠ থেকে কাটা ধান বাড়িতে ওঠেনি বাড়িতে। আবার আলু বসানোর তোড়জোড়ের শুরুতেই বড় সড় ধাক্কা চাষিদের। সেখানে হিমঘরের ভাড়া বাড়লে বিপদ বাড়বে বলেই মনে করছে আলু ব্যবসায়ী সমিতি।

আরও পড়ুন: Dengue: আপনার সর্বনাশ, মশার পৌষমাস! রাজ্যে ক্রমেই থাবা বসাচ্ছে ডেঙ্গু