বাঁকুড়া: ছয় আসন। ছ’টিতেই বড় জয় নিশ্চিত করেছে ঘাসফুল শিবির। সব জায়গাতেই উড়েছে তৃণমূলের জয়ধ্বজা। কার্যত খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছে বিরোধীরা। বিরোধী শিবির থেকে কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে হারের কারণ নিয়ে। কয়েক মাস আগে হওয়া লোকসভা নির্বাচনে যেখানে বিধানসভা ভিত্তিক ফলে তালডাংরা বিধানসভায় এগিয়ে ছিল তৃণমূলই। তবে ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছিলেন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী। বিজেপি প্রার্থীর থেকে ব্যবধান ছিল মাত্র ৭৪৮৩টি ভোট। কয়েকমাস পর হওয়া বিধানসভা উপনির্বাচনে সেই ব্যবধানই বেড়ে হল ৩৪ হাজার ৮২ টি ভোট। উপনির্বাচনে তালডাংরা বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের কেন এই দাপট? কেনই বা কমল গেরুয়া শিবিরের ভোট? নিজেদের প্রত্যাশাই বা কেন পূরণ করতে পারল না বামেরা? ফলাফল ঘোষণা হতেই তার ময়নাতদন্তে নেমেছে ডান-বাম সব দল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বড় অংশের মতে গত কয়েক মাসে এলাকায় অনেকটাই ঘর গোছাতে সমর্থ হয়েছে তৃণমূল। সেখানে পিছিয়ে পড়েছে বাম-বিজেপি। অন্যদিকে, উপনির্বাচনে বামেরা একলা চলো নীতি নিয়েও অল্প কিছু ভোট বৃদ্ধি করেছে। তালডাংরা বিধানসভা একসময় ছিল বামেদের শক্ত ঘাঁটি। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে গোটা রাজ্যে যখন সবুজ ঝড় তখনও এখানে ছিল বামেদের দাপট। কিন্তু ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকে এই তালডাংরার দখল নেয় ঘাসফুল শিবির। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির তুলনায় ১২৩৩৭ টি বেশি ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সেই ব্যবধান কমে দাঁড়ায় ৭৪৮৩ ভোটে। স্বাভাবিকভাবেই এই উপনির্বাচনে তালডাংরা আসন নিয়ে যথেষ্ট প্রত্যাশা ছিল গেরুয়া শিবিরের। কিন্তু, শনিবার গণনা শুরু হতেই তালডাংরা বিধানসভা জুড়ে শুরু হয় সবুজ সুনামি। সেই সুনামির তোড়ে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গিয়ে দাঁড়ায় ৩৪ হাজার ৮২ ভোটে।
বিজেপির দাবি, তৃণমূলের ভোট বাড়ার পিছনে শুধু লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের প্রভাব নয়, তার পাশাপাশি অন্যান্য কিছু সমীকরণও কাজ করছে। বিজেপি নেতাদের অভিযোগ, শাসকদলের অধীনে থাকা পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে তৃণমূলকে ভোট না দিলে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। সঙ্গে ভোটারদের সিঁদূর কৌটো এবং তার ভিতরে টাকা দিয়ে প্রভাবিত করা হয়েছিল। বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে বহিরাগত ও দলবদলু প্রচারও কাজ করেছে বলে দাবী বিজেপির। তবে তৃণমূলের দাবি, এই ইস্যুগুলি ছাড়াও আরজি কর নিয়ে বিজেপির অবস্থান এবারের ভোট বাক্সে ব্যুমেরাং হয়েছে।
অন্যদিকে তালডাংরা বিধানসভার উপনির্বাচনে বাম ও কংগ্রেস আলাদাভাবে লড়াই করলেও লোকসভা নির্বচনের তুলনায় বামেদের প্রাপ্ত ভোট বেড়েছে প্রায় ৩ হাজার। বামেদের দাবি, তৃণমূল ও বিজেপি, উভয় দলের উপর থেকেই ধীরে ধীরে মানুষ ভরসা হারাচ্ছে। তার ফলেই এই ভোট বৃদ্ধি।