Balurghat Hospital: ভর্তি করে দায় সেরেছে পরিবার, এখন ওঁদের ‘স্থায়ী ঠিকানা’ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড

Balurghat Hospital: হাসপাতালে ভর্তি করানোর সময় যে নম্বর দিয়েছিলেন আত্মীয়রা, তাও ভুল। ফলে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি হাসপাতালের।

Balurghat Hospital: ভর্তি করে দায় সেরেছে পরিবার, এখন ওঁদের 'স্থায়ী ঠিকানা' হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড
বালুরঘাট হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডই ঠিকানা ওঁদের
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 28, 2022 | 11:53 AM

দক্ষিণ দিনাজপুর: বছর দুয়েক আগে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিল পরিবার। সুস্থ হওয়ার পরও বাড়ির লোক নিয়ে যায়নি আর তাঁদের। চারজন অসহায় রোগীর বর্তমান ঠিকানা বালুরঘাট হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড।

ওঁদের কেউ মানসিকভাবে, আবার কেউ শারীরিকভাবে অসুস্থ। বাড়ির লোক ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন বালুরঘাট জেলা সদর হাসপাতালের মানসিক বিভাগে। এদিকে ভর্তির পর ২ বছর পেরিয়েছে৷ চিকিৎসায় অনেকটা সুস্থ হয়েছেন তাঁরা। বর্তমানে প্রায় সুস্থ হলেও এখনও পর্যন্ত তাঁদের হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়নি৷ এক বা দু’জন নয়। বর্তমানে বালুরঘাট হাসপাতালে ৪ জন রয়েছেন, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে রয়েছেন৷ তাঁদের মধ্যে তিন জন দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে হাসপাতালে রয়েছেন।

অন্যদিকে আর একজন ২০১৩ সাল থেকে বালুরঘাট হাসপাতালে রয়েছেন৷ প্রথম দিকে মানসিক ও অন্য বিভাগে থাকলেও বর্তমানে তাঁরা অনেকটায় সুস্থ হওয়ায় তাঁদের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে৷ বর্তমানে ওই চারজনের বাড়ি ঘর বলতে হাসপাতালের দোতলার আইসোলেশন ওয়ার্ড। সেখানে দুটি ঘরে চারজন থাকেন৷ ওই চারজনই বর্তমানে একে অপরের আপনজন।

বর্তমানে হাসপাতালের উদ্যোগে তাঁদের আইসোলেশন ওয়ার্ডের দোতলায় থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। এখন সেখানেই ওই রোগীরা থাকেন। হাসপাতালের খাবার খান, হাসপাতালের পোশাক পরেন। আর সেখানেই ঘুমোন। কিন্ত এভাবে হোমের মতো করে ঘরের ব্যবহার কি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করতে পারেন? কোনও রোগীকে কি বছরের পর বছর, এভাবে রেখে দেওয়া যায়, এই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।

বছর ৮২ এর বৃদ্ধ লোকেন সরেন। হাসপাতালের তথ্য ঘাঁটলে দেখা যায় বালুরঘাট শহর লাগোয়া মালঞ্চা গ্রামের বাসিন্দা লোকেন সরেনকে ২০২০ সালের লকডাউনের সময় শারীরিক দুর্বলতা ও জ্বর নিয়ে কেউ বা কারা হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে গিয়েছিলেন। বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে মেন মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু এরপর থেকে তাঁর পরিবারের লোকের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। ফলে তাঁকে আর হাসপাতাল থেকে বের করাও যায়নি।

একইভাবে পারপতিরাম এলাকার ঠিকানা দেওয়া ৫২ বছর বয়সী ফজলুকেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রেখে দিতে বাধ্য হয়েছেন। বছর দুয়েক আগে মানসিক ভাবে অসুস্থ থাকায় তাঁকে বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ পরে তাঁরও পরিবারের পক্ষ থেকে কেউই আর খোঁজ খবর নিতে আসেনি। এখন তিনি অনেকটাই সুস্থ৷ বাড়ি ফিরতে চান। কিন্তু বাড়ির লোক তো কেউই যোগাযোগ করেন না। যার ফলে লকডাউনের সময় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে যাওয়ার পর থেকে, আর তাঁর আত্মীয়দের খোঁজ মেলেনি।

হাসপাতালে ভর্তি করানোর সময় যে নম্বর দিয়েছিলেন আত্মীয়রা, তাও ভুল। ফলে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি হাসপাতালের।

এদিকে হাসপাতালে রেকর্ডে লোকেন ও ফজলুর তাও কিছু ঠিকানা দেখা যাচ্ছে, কিন্তু ৩২ বছর বয়সী এক যুবকের তো কিছুই তথ্য মিলছে না। এরমধ্যে ওই যুবক কথা বলতে পারেন না। তাঁর সম্পর্কে কিছুই জানেন না। ফলে অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবেই থেকে গিয়েছেন ওই যুবক। তাঁকেও করোনার ওই লকডাউনের সময় কেউ বা কারা হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়েই চলে গিয়েছিলেন।

এদিকে ২০১৩ সাল থেকে হাসপাতালে রয়েছেন সুদীপ দাস নামে বছর পঞ্চাশের এক ব্যক্তি। তাঁর পায়ে গ্যাংগ্রিন। তাঁরও আত্মীয়দের খোঁজ মেলেনি। তাঁদের প্রত্যেকেরই ঠিকানা হয়ে উঠেছে বালুরঘাট হাসপাতাল। এতদিন পর্যন্ত জেলা হাসপাতালে কোন না কোনও বেডে রাখা হলেও বর্তমানে তাঁদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে আইসোলেশন ভবনে। ওই ভবনে রোগীর চাপ না থাকায়, ওই ভবনের দোতলায় এই চার জনকে রেখে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কতদিন এভাবে ওই সুস্থ ব্যক্তিদের রেখে দেওয়া হবে, সেই প্রশ্নে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

এবিষয়ে হাসপাতাল সুপার কৃষ্ণেন্দু বিকাশ বাগ বলেন, “আমি মাত্র একমাস হল এই হাসপাতালে কাজে যোগ দিয়েছি। আমার নজরে ওই রোগীরা এসেছেন। তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। রিপ্লাই পাইনি। তাই এবারে এই মানুষদের কী ব্যবস্থা করা যায়, তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিচ্ছি। তাঁরা এখন প্রায় সুস্থ৷ কিন্তু বাড়ির লোক নিয়ে যাচ্ছে না।”

ফজলু জানান, তাঁকে অনেক দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এখন সুস্থ৷ কিন্তু বাড়ির লোক কেউ তাঁকে আর নিতে আসেননি। বাড়ি ফিরতে চান তিনি।