Daspur School: আজকের দিনে এমনটাও হয়! স্কুলে একজনও শিক্ষিকা নেই, নিজের সবটা দিয়ে গার্লস স্কুলটাকে বাঁচাচ্ছেন গ্রুপ ডি কর্মী
Daspur School: স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ হয়নি একজনও। এর ফলেই শিক্ষা দফতরের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকার মানুষ। ক্ষুব্ধ স্কুলের পরিচালন কমিটির সদস্যরাও।
পশ্চিম মেদিনীপুর: বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন গ্রুপ ডি’র কর্মী। স্কুল বাঁচিয়ে রাখতে মরিয়া চেষ্টা এলাকাবাসীর। স্কুল আছে, আছে পড়ুয়াও। কিন্তু নেই একজনও শিক্ষিকা। অগত্যা দ্বায়িত্বভার কাঁধে তুলে নিয়েছেন গ্রুপ ডি’র কর্মী। গ্রামে মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় দাসপুরে আনন্দময়ী জুনিয়ার বালিকা বিদ্যালয় গড়ে ওঠে। গ্রামের মানুষদের এটা দীর্ঘদিনের চাহিদা ছিল। এলাকার মানুষের চাহিদা মেনে নিয়ে সরকারি অনুমোদন পেয়েছে স্কুলটি। বর্তমানে সেই বালিকা বিদ্যালয়ে নেই কোনও শিক্ষক। বাধ্য হয়েই শিক্ষকের দায়িত্বভার সামলাচ্ছেন গ্রুপ ডির কর্মী। স্কুল টিকিয়ে রাখতে গ্রুপডির কর্মী নিজের মাসিক বেতনের টাকা ও স্কুল পরিচালন কমিটির দেওয়া কিছু টাকা দিয়ে অস্থায়ীভাবে শিক্ষিকা নিয়োগ করেই চলছে স্কুলের পঠনপাঠন। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনা হয়েছে। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ হয়নি একজনও। এর ফলেই শিক্ষা দফতরের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকার মানুষ। ক্ষুব্ধ স্কুলের পরিচালন কমিটির সদস্যরাও।
স্কুলের দেওয়ালে প্রতীয়মান ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ছবি। লেখা রয়েছে একাধিক বাণী, সেই বিদ্যাসাগরের নারীশিক্ষাকে প্রধান্য দিয়ে এলাকার মানুষের ১৯৮১ সালে দলমত নির্বিশেষে স্থাপন করেছিলেন বালিকা বিদ্যালয়। ২০১২ সালে সরকারিভাবে অনুমোদন পায় সেই বালিকা বিদ্যালয়। শতাধিক-ছাত্রী নিয়ে নিয়ে স্কুলের পঠনপাঠন শুরু হয়েছিল। প্রয়োজন মতো ছিল শিক্ষিকাও। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অবসর নেন অনেকে। ২০২১ সালে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার মৃত্য়ু হয়। এরপরই শিক্ষিকাহীন হয়ে পড়ে স্কুল।
স্কুলের খাতা কলমে একজন মাত্র স্থায়ী গ্রুপ ডির কর্মী। তিনিই স্কুলের শিক্ষার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার ভবিষ্যতের কথা ভেবে গ্রুপ ডির কর্মী ও স্কুল পরিচালন কমিটির সদস্যরা নিজেদের জমানো টাকা খরচ করে অস্থায়ীভাবে শিক্ষিকা দিয়েই চালাচ্ছেন স্কুল। এমনকি গ্রুপ ডির কর্মীকেও মাঝেমধ্যে নিতে হয় ক্লাস।
অপরদিকে শিক্ষিকা না থাকার জন্য শতাধিক ছাত্রী থেকে তা কমতে কমতে বর্তমানে ১৫ জন ছাত্রীতে দাঁড়িয়েছে। ক্লার্কের দাবি জেলা শিক্ষা দফতর থেকে শুরু করে শিক্ষামন্ত্রীর দারস্থ হয়েও স্কুলে কোনও শিক্ষিকা আসেননি। আর এর ফলেই যে কোনও মুহূর্তে হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে স্কুল, আশঙ্কায় স্কুল কর্তৃপক্ষ।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত এক জন শিক্ষক বলেন, “আমার এখানে পড়াতে ভালই লাগে। স্কুলে একটা অচলাবস্থা চলছে। মেয়েগুলো যাতে পড়াশোনা করতে পারে, তার জন্য সবাই আমরা চেষ্টা করছি। স্কুলটাকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছি।” আরও এক জন শিক্ষিকা পড়াতে আসেন। তিনি বললেন, “অবসর সময় রেখে কী লাভ! তার থেকে এই মেয়েগুলোকে পড়াই। স্কুলটাকে আমরা বাঁচিয়ে রাখতে চাই। আমাদের স্কুলে সব পরিকাঠামোই রয়েছে।”
স্কুলের গ্রুপ ডি কর্মী শিবপ্রসাদ বলেন, “এক জন মাত্র শিক্ষিকা ছিলেন। ২০২১ সালের ১৫ অগস্টে মৃত্যু হয় তাঁর। আমি ক্লার্ক, আমাকেই এখন স্কুল দেখাশোনা করতে হয়। পরিচালন কমিটি সাহায্য করে। আমাদের এখানকার কয়েকজন বিনা স্বার্থেই মেয়েদের পড়ান। আমার তরফ থেকে ম্যানেজিং কমিটির তরফ থেকে যৎ সামান্য পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। আমরা বিকাশভবন গিয়েছি। ডিআই অফিস গেছি। সবাই একই কথা বলছেন, এখন তো শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না। এখন ছাত্রী সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে।”