হুগলি: উৎসবে ধর্মের বিভেদ থাকে না। বহু ধর্ম ও ভাষাভাষীর এই দেশে উৎসব সবার। মুখ্যমন্ত্রী মমতাা বন্দ্যোপাধ্যায়ও (CM Mamata Banerjee) প্রায়শই বলেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আর সেই উৎসব যদি বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসব হয় তা হয় সকল ধর্মের মানুষের মিলন ক্ষেত্র। যেমন, শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের বুর্জ খালিফা প্যান্ডলের আলোক শিল্পী রিয়াজ আহমেদের মত অনেক মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের ছোঁয়া থাকে এই প্রাণের উৎসবে। এমন উদাহরণ অনেক আছে। ঠিক যেমনটা দেখা গেল চুঁচুড়ার এক আশ্রমে। মুসলিম মেয়ের কুমারী পুজো করা হল চুঁচুড়া ঝিঙেপাড়ার সারদা রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমে।
সাহাগঞ্জ ওয়াজিদনগরের বাসিন্দা মহম্মদ আজহারউদ্দিনের ছোট মেয়ে সাহেবা খাতুন। আট বছরের কুমারী সাহেবা খাতুন কে এবার কুমারী রূপে পুজিত হচ্ছে রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমে। গত চার বছর ধরে এখানেই তার বড় দিদি-ও কুমারী রূপে পুজো পেয়েছে।এবার কুমারী পুজো পাচ্ছে আট বছরের সাহেবা।
কুমারীর মধ্যে দুর্গা থাকেন। হিন্দুশাস্ত্র মতে মুনিঋষিরা কুমারীর মধ্যে প্রকৃতি দেখতেন। প্রকৃতি মানে নারী। সৃষ্টি চণ্ডীর একাদশ অধ্যায়ে সমস্ত অসুর বিজয়ের পর দেবতারা দেবীকে বন্দনা করার সময় বলেন, মা যা কিছু বিদ্যা সব তুমি, আর জগতের যত নারী সব তোমার চলন্ত বিগ্রহ। সেখান থেকে কুমারীতে মা দুর্গার আবির্ভাব হয়। বেলুর মঠে স্বামী বিবেকানন্দ কুমারী পুজো শুরু করেছিলেন। তার পর বেলুর মঠ ও তার শাখাগুলিতে কুমারী পুজো হয় দুর্গা অষ্টমীতে।
চুঁচুড়া মঠের মহারাজ স্বামী দুর্গাৎমানন্দ বলেন, কুমারীরা মাতৃ রূপে পুজিত হন। আমরা রামকৃষ্ণের তত্বে বিশ্বাসী, তাঁর অনুগামী।তাই মানুষে মানুষে বিভেদ মানি না। বিবেকানন্দ চণ্ডীর কথার সূত্র ধরে প্রথম কাশ্মীরে একটি মুসলিম মেয়ের পুজো করেন। আজ যাকে পুজো করা হল, সে মা দুর্গার প্রতীক। রামকৃষ্ণ বলেছিলেন, ‘যত মত তত পথ।’ সেই মতে আমাদের এখানে বহু মুসলিম ছেলেমেয়ে কাজ করছেন। তেমনই আজ যাকে কুমারী রূপে পুজো করা হচ্ছে সে মুসলিম ঘরের মেয়ে। সে কার ঘরের মেয়ে, কী নাম, সেটা বড় কথা নয়। আমাদের কাছে বড় কথা সে দুর্গা। তার মৃন্ময়ী প্রতিমা চিন্ময়ী রূপ।
আর সাহেবার পরিবারের কথায়, আগে বড় মেয়ের কুমারী পুজো হয়েছে। গত চার বছর ধরে সেই সে মহাষ্টমীতে পূজিত হয়েছে। এবার বাড়ির ছোট সদস্যা পূজিক হচ্ছে কুমারী পুজোয়। এই মুসলিম পরিবারও জানাচ্ছে, জাতপাতের ধর্মে তাঁরা বিশ্বাসী নন। শারদ উৎসব তো সবার।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: মুসলিম ও হরিজন অংশগ্রহণ করায় মেলেনি পুজোর সরকারি অনুদান! মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি