হুগলি: নিজেদের শক্ত ঘাঁটিতে তৃণমূলের সঙ্গে মাটি কামড়ে লড়াই করলেন আইএসএফ কর্মীরা। ভাঙর থেকে দেগঙ্গা – একই ছবি ধরা পড়ল ভোট সপ্তমীতে। আক্রান্ত হলেন আইএসএফ কর্মীরা। গাড়ি ভাঙল দলীয় প্রার্থীর। কিন্তু দলের প্রধান? দলের মুখ চেয়ারম্যান নওশাদ সিদ্দিকী কোথায়? শনিবার সারাদিনে একবারও আক্রান্ত দলীয় কর্মীদের পাশে প্রকাশ্যে দাঁড়াতে দেখা গেল না নওশাদকে। রাত ১১ টা নাগাদ একটি প্রেস বিবৃতি দিয়ে সারাদিনের ঘটনা প্রবাহে কর্মীদের মনোভাবকে অভিনন্দন জানালেন আইএসএফ রাজ্য নেতৃত্ব। হঠাৎ কী এমন হল লড়াকু নওশাদ সিদ্দিকীর? কিছুটা দায়সারা মনোভাব কি?
লোকসভা ভোট পর্বে নওশাদ সিদ্দিকীর সঙ্গে তৃণমূলের ‘সেটিং ‘ নিয়ে ফিসফাস, চর্চা, আলোচনা হয়েছে বিভিন্ন মহলে। সেই আলোচনাকে আরও জল বাতাস দিল না ভোট সপ্তমে নওশাদ সিদ্দিকীর এমন নিখোঁজ হওয়ার মনোভাবে? চর্চা চলছে বিভিন্ন মহলে। সত্যিই কি তাই? সত্যিই কি কোনও ‘সেটিং’ রয়েছে এখানে? যদিও নওশাদ সিদ্দিকী এক্ষেত্রে পুরোটাই বিরোধীদের চক্রান্ত বলেই দাবি করছেন। ‘সেটিং’ তত্ত্ব নস্যাৎ করে টিভি নাইন বাংলাকে নওশাদ বলেন, “সেটিং তত্ত্ব বাংলার মানুষ আর খাবে না। এতদিন বলা হচ্ছিল বিজেপির সঙ্গে সেটিং, এখন বলা হচ্ছে তৃণমূলের সঙ্গে সেটিং। আর তৃণমূলের সঙ্গে সেটিং তো বেশি বলছেন বামপন্থী বন্ধুরা। এটা বাংলার মানুষ খাবে না।”
আইএসএফ চেয়ারম্যানের আরও সংযোজন, “আমার অন্তত ৩০টি কর্মসূচি করতে দেয়নি তৃণমূল। যদি সেটিং থাকত, সেগুলি তো আমি বের করে নিতাম। গত নির্বাচনের থেকে এবারের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। কিন্তু যে অত্যাচার হয়েছে, তার একটি বড় অংশ আমাদের কর্মীদের উপর হয়েছে।”
গতকাল ভোটের দিন কেন তাঁকে দেখা যায়নি মাঠে-ময়দানে, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন নওশাদ। তাঁর যুক্তি, তিনি ভাঙড়ের বিধায়ক হলেও সেখানকার (যাদবপুর লোকসভা) ভোটার নন। অন্য লোকসভা কেন্দ্রের ভোটার। সেই কারণেই এলাকার বিধায়ক হয়েও সেখানে যাননি নওশাদ। তবে গোটা বিষয়টি তিনি রাজ্য অফিস থেকে নজরদারি চালিয়েছেন এবং প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছেন বলেও দাবি ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়কের। তাঁর কথায়, “আমার কর্মীদের মনোবল এতটা দুর্বল নয় যে প্রতিটি ক্ষেত্রে ভাইজানকে ছুটে আসতে হবে। আমাদের কর্মীরা ভাল করেই জানে, তাদের ভাইজান একজনই আছেন এবং তাঁকে গোটা রাজ্যে ছুটে বেরাতে হচ্ছে।”
নওশাদের এই ‘সেটিং’ তত্ত্ব যখন ঘোরাঘুরি করছে বিভিন্ন মহলে, তখন তাঁর ‘মন্ত্রী পদ’ পাওয়া নিয়েও কানাঘুষো শুরু হয়েছে। যদিও সেই তত্ত্বও উড়িয়ে দিয়েছেন নওশাদ। তাঁর বক্তব্য, “আমি তো বেশ ক’টা দিন অত্যাচার, জেল, ভোট পরবর্তী হিংসা পার করে আসলাম। এখন তো যথেষ্ট ভাল জায়গায় আছি। সেই সময় আমার কাছে একাধিক এই ধরনের অফার ছিল। সেগুলি প্রত্যাখ্যান করেছি। আর দুই-আড়াই বছর বাকি। বাংলার মানুষের সঙ্গে আমি প্রতারণা করতে পারব না।” সিপিএম, তৃণমূল, বিজেপিকে একযোগে আক্রমণ শানিয়ে নওশাদের দাবি, “আমার সম্পর্কে ভোটারদের মনে বিভ্রান্তি তৈরি করার অভিপ্রায়েই এসব করা হয়েছে। যাতে ভোটটা আমাদের দিকে না আসে, সেই চেষ্টা করা হয়েছে। এর জন্য তৃণমূল, বিজেপি আছে। এদিকে সিপিএমের বামপন্থীরা বন্ধুরা আছেন। হয়ত এদের চক্রান্ত হতে পারে। এসব ভিত্তিহীন কথা।”