Body Recover: মা তো আমার সব, মা চলে গেলে কী হবে? সেই ভয়েই কি ছেলের এমন কাণ্ড… কেন বারবার হয় এমন?
Howrah: পুলিশ সূত্রে খবর, চুনাভাটির দেবাশিস তেমন কিছু কাজকর্ম করতে পারেন না। বাড়িতেই থাকেন। মা তাঁর সবটুকু।
হাওড়া: তিনদিন ধরে মায়ের মৃতদেহ আগলে বসে থাকার অভিযোগ উঠল ২৫ বছর বয়সী ছেলের বিরুদ্ধে। এবার ঘটনাস্থল হাওড়ার নাজিরগঞ্জ। তিনদিন ধরে মৃত মায়ের পচাগলা দেহের পাশে শুয়েই রাত কাটিয়েছেন দেবাশিস পাত্র নামে ওই যুবক। কেন এমনটা করেছেন তিনি, তা স্পষ্ট নয়। হতে পারে প্রিয়জনকে চিরতরে হারিয়ে ফেলার ভয় থেকেই এভাবে ‘লুকিয়ে’ রাখার চেষ্টা। নাজিরগঞ্জের চুনাভাটি। শনিবার রাতে সেখানকারই একটি ফ্ল্যাটে হানা দেয় সাঁকরাইল থানার পুলিশ। রাত তখন প্রায় ১০টা। প্রথমে কিছুতেই ভিতর থেকে দরজা খুলছিলেন না কেউ। পরে পুলিশ গিয়ে ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে তাপসী পাত্র (৫৮) নামে এক মহিলার দেহ উদ্ধার করে। সেই ঘর থেকেই উদ্ধার করা হয় দেবাশিসকেও। পুলিশ সূত্রে খবর, দরজা ভাঙতেই মায়ের মাথার কাছে বসে থাকতে দেখা যায় দেবাশিসকে। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধারের পাশাপাশি দেবাশিসকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়।
প্রথমবার প্রিয়জনের মৃতদেহ আগলে বসে থাকার অভিযোগ উঠেছিল কলকাতার রবিনসন স্ট্রিটে। ২০১৫ সাল। এরপর এই সাত বছরে কলকাতার পাশাপাশি একাধিক জেলায় সেই ছায়া দেখা গিয়েছে। প্রিয়জনের দেহ আগলে বসে থাকা, অতি সহজেই তাঁকে দাগিয়ে দেওয়া হয় মনোরোগী বলে। কিন্তু মনোবিদরা বলেন, এ এক অদ্ভুত অসহায়তা কাজ করে বুকের ভিতর। মনে হয়, প্রিয়জনের হাত ছুটে গেলে আর তো কোনওদিন দেখা হবে না। সেই হারিয়ে ফেলার ভয় থেকেই কেউ কেউ আগলে ধরেন নিথর মানুষটিকেও। এইসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, সাধারণত যাঁরা এই ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছেন, তাঁদের বাইরের জগতের সঙ্গে খুব একটা যোগাযোগ নেই। বন্ধু-আত্মীয় সকলের থেকেই নিজেদের সরিয়ে রাখেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, চুনাভাটির দেবাশিস তেমন কিছু কাজকর্ম করতে পারেন না। বাড়িতেই থাকেন। মা তাঁর সবটুকু। পুলিশের অনুমান, দিন তিনেক আগে মৃত্যু হয়েছে তাপসীদেবীর। কিন্তু দেবাশিস কাউকে তা জানতে দেননি। পুলিশের অনুমান, বিছানায় মায়ের পাশেই শুয়ে রাত কাটান ছেলে। পুলিশ মনে করছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হতে পারে এই মহিলার।
হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে অস্বাভাবিক কিছু ঘটেনি। তবে তাপসীদেবীর দেহ হাওড়া জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পরই বোঝা যাবে কীভাবে এই ঘটনা। দেবাশিসের সঙ্গেও কথা বলছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, আন্দুলের চুনাভাটির একটি বহুতলের চারতলায় থাকতেন মা-ছেলে। তাপসীদেবী বাইরে বেরোলেও ছেলেকে খুব একটা বাইরে দেখা যায় না। স্থানীয়দের বক্তব্য, গত কয়েকদিন তাপসীদেবীর কোনও সাড়াশব্দ পাননি। এরইমধ্যে শনিবার খুব বাজে গন্ধ বের হতে থাকে ফ্ল্যাট থেকে। এরপরই সাঁকরাইল থানায় খবর দেওয়া হয়। রাতে পুলিশ এসে দেবাশিসদের দরজার কড়া নাড়লেও কেউ দরজা খোলেননি। এরপর দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে ভয়ঙ্কর ছবি দেখেন সকলে।