Jalpaiguri news: কিডনি পাচারের অভিযোগ পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে, রোগী মৃত্যু ঘিরে তুলকালাম জলপাইগুড়িতে
Jalpaiguri news: পুতুলরানী মোদক নামে এক মহিলাকে ধরে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ। ওই মহিলার বিরুদ্ধে কিডনি পাচারের অভিযোগ তুলছে পরিবার। যদিও জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি পরিবার।
জলপাইগুড়ি : রোগী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনা জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। পুতুলরানী মোদক নামে এক মহিলাকে ধরে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ। ওই মহিলার বিরুদ্ধে কিডনি পাচারের অভিযোগ তুলছে পরিবার। যদিও জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি পরিবার। যে মহিলার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে পরিবারের লোকেরা, তিনি ময়নাগুড়ির স্থানীয় বিজেপি নেত্রী এবং পঞ্চায়েতের সদস্য। ময়নাগুড়ি চুড়া ভান্ডার এলাকার বাসিন্দা বছর পঞ্চান্নর কিরণ মণ্ডল কয়েকদিন আগে ওই পঞ্চায়েত সদস্যের হাত ধরে ধূপগুড়ির একটি নার্সিং হোমে ভর্তি হন।
জানা গিয়েছে, পূর্বে ওই নার্সিংহোমে আয়ার কাজ করতেন পুতুলরানী মোদক। পরে বিজেপির টিকিটে পঞ্চায়েত সদস্য হওয়ার পর নার্সিংহোমের কাজ ছেড়ে দেন তিনি। এদিকে কিরণ মণ্ডলের পরিবারের বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে কিরণ মণ্ডলের গলব্লাডার অপারেশনের করানোর মতো সামর্থ্য ছিল না। দিন মজুরির কাজ করে কোনওরকমে সংসার চলে তাঁদের। তাই তাঁরা সাহায্য চান ওই পঞ্চায়েত সদস্যের। ভেবেছিলেন, যেহেতু তিনি ওই নার্সিংহোমে আগে কাজ করতেন, তাই হয়ত কিছু একটা সুরাহা করতে পারবেন।
পুতুলরানী মোদকের কাছে কিরণ মণ্ডলের পরিবারের গেলে তিনি রোগীর পরিজনদের বোঝান, স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড কোনও জায়গায় নেবে না। ওই বেসরকারি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন তিনি। ২৪ হাজার টাকায় অপারেশন করিয়ে দেবেন, এমনও বলেন। সেই মতো রোগীর পরিজনরা ওই পঞ্চায়েত সদস্যের হাতে ২৪ হাজার টাকা দেন। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডটিও চেয়ে নিয়েছিলেন পুতুলরানী মোদক। অপারেশনের পর বুধবার কিরণ মণ্ডলের হাসপাতাল থেকে ছুটি হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু আচমকাই তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে। তড়িঘড়ি তাঁকে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। জলপাইগুড়ি হাসপাতালের চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর ওই মহিলার বিরুদ্ধে কিডনি পাচারের অভিযোগ তুলে মৃতের পরিবার। পঞ্চায়েত সদস্যকে বেধড়ক মারধর করে মৃতের আত্মীয়রা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার পুলিশ। অভিযুক্ত ওই মহিলাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। যদিও পরিবারের তরফে এখনও কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি বলে জানা গিয়েছে।
এই ঘটনায় জেলা বিজেপির তরফে জানানো হয়েছে, “যে অভিযোগ উঠেছে, সেটি গুরুতর অভিযোগ। দলীয়ভাবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। যদি কোনওভাবে ওই পঞ্চায়েত সদস্যকে দোষী দেখা যায়, তাহলে দল তাঁর বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেবে। বিজেপি সব সময় সাধারণ মানুষের হয়ে কাজ করে।” এর পাশাপাশি বিজেপির তরফে আরও দাবি করা হয়েছে ওই নার্সিং হোমটি তৃণমূলের এক প্রভাবশালী নেত্রীর নার্সিংহোম। ফলে যে কিডনি পাচারের অভিযোগ উঠছে, সেক্ষেত্রে কোন চিকিৎসক অপারেশন করেছেন, তাও তদন্ত হওয়া দরকার।
যদিও ওই নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষের তরফে দেবার্ঘ্য চৌধুরী জানিয়েছেন, “শনিবার ওই ব্যক্তি আমাদের নার্সিংহোমে ভর্তি হন। রবিবার তাঁর গলব্লাডারের অপারেশন করানো হয়। গলব্লাডার অপারেশনের পর তাঁর শারীরিক অবস্থার কোনও অবনতি হয়নি। তিনি একেবারে স্থিতিশীল ছিলেন। খাওয়া দাওয়াও করেছেন। আজ তাঁর ছুটির সময় তিনি অসুস্থ বোধ করাতে চিকিৎসকের পরামর্শে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে রেফার করা হয়। পরে সংবাদ মাধ্যম মারফত জানতে পারি, তাঁর মৃত্যু হয়েছে। রোগীর পরিজনরা আমাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন। হয়ত রোগীর পরিজনদের কেউ বা কারা ভুল বোঝাচ্ছেন। বিষয়টির তদন্ত হওয়া উচিত। যদি আমাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে আমাদের যে শাস্তি দেবে, সেটাই আমরা মাথা পেতে নেব।”
এদিকে যুব তৃণমূল সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “বিজেপির সর্বোচ্চ নেতা নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ দেশটাকেই বিক্রি করে দিচ্ছেন। বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য যে কিডনি পাচারের সঙ্গে যুক্ত হবে, এটা তো স্বাভাবিক ঘটনা। তবে ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসার পরেই বোঝা যাবে, শরীরে কিডনি আছে কি না। যে বিজেপির উপর সারা বাংলার মানুষ আস্থা হারাচ্ছেন, সেই বিজেপির নেত্রীর উপর ভরসা করে, কেন ওই নার্সিং হোমে ভর্তি করতে গেলেন মৃতের পরিবারের লোকেরা? নার্সিংহোমের ত্রুটি বিচ্যুতি কী আছে, তা তদন্তে বেরোক।”