‘আমরা ট্যাক্স দিই না?’ ভাঙা সাঁকো পেরিয়ে হাসপাতাল না যেতে পেরে তীব্র ক্ষোভ ‘বাইক-অ্যাম্বুল্যান্স দাদা’ করিমুলের

Karimul Haque: সেই ১৯৯৮ সাল থেকে সমাজসেবা করে আসছেন। ২৩ বছর পেরিয়েও মানুষের সেবায় সর্বদা তিনি সক্রিয়। নিজের গ্রামে হাসপাতালও গড়েছেন। তাঁর এই সমাজসেবার স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করেছে ভারত সরকার। সারা দেশে চেনে এই 'বাইক অ্যাম্বুলেন্স দাদা'কে। তিনিই এবার ক্ষোভ উগরে দিলেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে।

'আমরা ট্যাক্স দিই না?' ভাঙা সাঁকো পেরিয়ে হাসপাতাল না যেতে পেরে তীব্র ক্ষোভ 'বাইক-অ্যাম্বুল্যান্স দাদা' করিমুলের
রোগী নিয়ে ,সাঁকোতেই আটকে গেলেন করিমুল হক। নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 14, 2021 | 7:43 PM

জলপাইগুড়ি: রোগী নিয়ে বাঁশের সাকো পেরিয়ে হাসপাতালে পৌঁছতে পারলেন না পদ্মশ্রী করিমুল হক (Karimul Haque)। ‘বাইক অ্যাম্বুল্যান্স দাদা’ নামে খ্যাত করিমুল অসুস্থ রোগী সহ চেল নদীর পারেই আটকে গেলেন এদিন। বাঁশের সাঁকো পার হয়ে মালবাজার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে পৌঁছতে না পারায় হতাশ তিনি। প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন তিনি। রোগী নিয়ে নদীর পাড়ে  আটকে করিমুল বললেন,” ট্যাক্স কি আমরা গ্ৰামের মানুষ দিই না। বিভিন্ন বড়ো বড়ো শহরে ব্রিজ, ওভারব্রিজ, ফ্লাইওভার হচ্ছে। অথচ আমাদের এখানে নদীর ওপর একটা ব্রিজ হচ্ছে না। আমি চাই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এখানে দ্রুত সেতু তৈরির উদ্যোগ নিক।”

একই পরিবারে তিন সদস্যের করোনা (COVID-19)। আক্রান্তরা হাসপাতালে। শিশু সন্তানকে নিয়ে বাড়িতে রয়েছেন একা গৃহবধূ। খবর পেয়ে নিজেই গিয়ে আক্রান্তদের বাড়ি স্যানিটাইজ করেছেন তিনি। ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসায় দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গও উত্তপ্ত। কী ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায় সেই বৈঠকেও আমন্ত্রিত হন পদ্মশ্রী করিমুল হক।

সেই ১৯৯৮ সাল থেকে সমাজসেবা করে আসছেন। ২৩ বছর পেরিয়েও মানুষের সেবায় সর্বদা তিনি সক্রিয়। নিজের গ্রামে হাসপাতালও গড়েছেন। তাঁর এই সমাজসেবার স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করেছে ভারত সরকার। সারা দেশে চেনে এই ‘বাইক অ্যাম্বুলেন্স দাদা’কে। তিনিই এবার ক্ষোভ উগরে দিলেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে।

নতুন গঠিত হওয়া ক্রান্তি ব্লক কিছুদিন আগে পর্যন্ত মাল ব্লকের অন্তর্গত ছিল। আর এই মালবাজার ও ক্রান্তির মাঝ দিয়েই বয়ে গেছে দুরন্ত চেল নদী। বছরের বেশিরভাগ সময় এই চেল নদীতে জল কম থাকে। তাই ক্রান্তি এলাকার মানুষ এই সময়ে পায়ে হেটে, বাইকে কিংবা সাইকেলে চিকিৎসা, শিক্ষা ও ব্যবসা সহ বিভিন্ন প্রয়োজনে মালবাজারে আসেন। কিন্তু বর্ষার মরসুমে ফুলে ফেঁপে ওঠে চেল নদী। তখন ক্রান্তি এলাকার মানুষজন কাঠামবাড়ি, ওদলাবাড়ি হয়ে প্রায় ৩৮ কিমি ঘুরপথে মালবাজারে আসে। যদিও স্থানীয় বাসিন্দারা গ্ৰাম পঞ্চায়েতের সাহায্যে অস্থায়ী বাঁশের সাকো বানিয়ে পারাপার করে। এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে বাইক ও সাইকেল পারাপার হলেও গাড়ি পার হয় না।

আর এদিন বাইক অ্যাম্বুল্যান্সে রোগী নিয়ে এই বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে পার হবেন বলে মালবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন পদ্মশ্রী করিমুল হক। কিন্তু রোগী নিয়ে পার হতে পারলেন না সাঁকো। এতেই আক্ষেপ ঝরে পড়ে তাঁর গলায়ষ বলেন, “এখানে সেতুর দাবি বহু দিনের। বর্তমানে আমাদের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের দুই মন্ত্রী এখানে আছেন। তাদের রাজনৈতিক মতভেদ থাকতেই পারে। আমি দুই মন্ত্রীর কাছেই অনুরোধ করছি আপনারা দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে এখানে সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা করুন। তাতে বহু মানুষের কল্যাণ হবে। বর্ষায় সময়ে আর ঘুরপথে যেতে হবে না।”

তিনি আরও যোগ করেন,” এই ডুয়ার্সে প্রচুর পর্যটক ঘুরতে আসেন। আনন্দ উপভোগ করেন। কিন্তু ডুয়ার্সের বেশ কিছু জায়গায় এখনও এরকম হাজারো সমস্যা রয়েছে। এই সমস্যা গুলোর সমাধান হলে ডুয়ার্স আরও সুন্দর হয়ে উঠবে।”

এদিকে এ নিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী তথা সেচমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ফোনে বলেন, “ওই এলাকায় বাঁশের সাঁকোর দুরবস্থার কথা আমাদের কেউ জানায়নি। যদি এলাকার থেকে গ্রামবাসীরা চান এবং যদি সরকারিভাবে তাঁরা আমাদের কাছে প্রস্তাব দেন, আমরা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের তরফ থেকে এই সেতুটি করে দেওয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করব।”

আরও পড়ুন: ২ বছরে মৃত্যু ২, আহত ৬০! একা ‘ভোলা’র তাণ্ডবে দরজায় খিল দিয়েছে মোস্তাফাপুরবাসী