২ বছরে মৃত্যু ২, আহত ৬০! একা ‘ভোলা’র তাণ্ডবে দরজায় খিল দিয়েছে মোস্তাফাপুরবাসী

2 died and 60 injured: বন দফতরের আধিকারিক সুকান্ত ওঝার বক্তব্য, "গরু, ষাঁড় এগুলো গৃহপালিত পশু। এরা বন দফতরের আয়ত্তে নেই। তাই এখানে আমাদের কিছু করার নেই।'' এই প্রেক্ষিতে গ্রামবাসীরা সকলে এবার একজোটে বিহিত চাইলেন প্রশাসনের কাছে। খবর পৌঁছেছে বিধায়কের কানেও।

২ বছরে মৃত্যু ২, আহত ৬০! একা 'ভোলা'র তাণ্ডবে দরজায় খিল দিয়েছে মোস্তাফাপুরবাসী
ভোলার ভয়ে ঘুম ছুটেছে এলাকাবাসীর। নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 14, 2021 | 7:00 PM

কাটোয়া: ‘যমালয়ে জীবন্ত মানুষ’ ছবির সিধু ওরফে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই ষাঁড়কে মনে পড়ে? সিধুর কথায় তাঁর বাধ্য ষাঁড় ‘ভোলা’ স্বয়ং যমরাজকে শিঙে চড়িয়ে বনবন করে ঘুরিয়েছিল। কিন্তু এই ভোলা কাল্পনিক নয়, বাস্তবের ষাঁড়। যার ভয়ে তটস্থ কাটোয়ার মোস্তাফাপুর। তার আক্রমণে ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন দু’জন মানুষ। ভোলা আহত করেছে প্রায় ৬০ জনকে। তার ভয়ে এখন প্রাণ হাতে করে বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন কাটোয়ার মোস্তাফাপুরের বাসিন্দারা। একান্ত দরকার ছাড়া আর কেই বাড়ি থেকে বেরচ্ছেন না।

আদতে শান্ত স্বভাব ‘ভোলা’র। কিন্তু মাঝেমাঝেই তার মেজাজ বিগড়োয়। তখন আগেপিছু সে কিছু জানেনা। যাকেই দেখে তাকেই আক্রমণ করে। গত বছর ভোলার আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে এক নিরীহ গ্রামবাসীর। ফের এই ষাঁড়ের হামলায় প্রাণ গেল একজনের।  আর তার জেরে রাস্তায় বেরনো একপ্রকার বন্ধ হয়ে গিয়েছে কাটোয়ার মোস্তাফাপুর গ্রামের বাসিন্দাদের।

গত সোমবার ভোলার অতর্কিত হামলায় পেটে শিং ঢুকে মৃত্যু হয়েছে এক গ্রামবাসীর। যখন-তখন যেখানে সেখানে শিং উঁচিয়ে ভোলা তেড়ে আসায় রাস্তায় বেরোতে ভয় পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অভিযোগ, প্রশাসনকে বারবার জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। তারা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর। অন্যদিকে বনবিভাগের আধিকারিকের বক্তব্য, “ষাঁড় গৃহপালিত পশু, হিংস্র নয়।” তাই তাঁদের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না ভোলা। তাহলে কার কাছে যাবেন তাঁরা? প্রশ্ন আতঙ্কিত গ্রামবাসীর।

কাটোয়ার মোস্তফাপুর, গোটা গ্রাম এখন একা শাসন করছে ভোলা। তার দাদাগিরিতে অতিষ্ট গ্রামের শিশু থেকে বৃদ্ধ। কয়েক বছর আগে হঠাই ওই গ্রামে আবির্ভাব হয় এই ষাঁড়ের। এমনিতে সে বেশ শান্ত শিষ্ট সে। গ্রামবাসীরা আদর করে নাম রেখেছিল ভোলা। তবে মাঝে মধ্যেই মেজাজ হারিয়ে ফেলে সে। তখন রণমূর্তি তার। গত সোমবার ভোলার আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছে গ্রামের ৬৫ বছরের বৃদ্ধ রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাসের। গোয়াল ঘরে গরুর দেখভাল করছিলেন তিনি। সেই সময় হঠাৎই পিছন থেকে ভোলা এসে তাঁকে একেবারে আছাড় মেরে ফেলে সিং দিয়ে। তারপর গোঁতাতে গোঁতাতে বৃদ্ধকে ঠেলে নিয়ে যায় দেওয়ালে। সেখানেই মৃত্যু হয় রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাসের। স্থানীয়রা বলছেন, বছর দুয়েক আগেও একই ভাবে মৃত্যু হয় এক গ্রামবাসীর। এছাড়াও আরও ৬০ জনের বেশি গ্রামের মানুষকে জখম করেছে ভোলা।

আগে যে ভোলাকে আদর করে এলাকায় রেখেছিলেন গ্রামবাসী। এখন তাঁরা সবাই চাইছেন ভোলার একটা ব্যবস্থা করুক প্রশাসন। নাহলে আরও কত অঘটন হতে পারে তো! এখন গ্রামের শিশুরা বাড়ির বাইরে ভোলার ভয়ে বার হচ্ছে না। বেশির ভাগ বাড়ির দরজাও বন্ধ। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এর আগেও ভোলার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল। তখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। এখনও কোনও ভার নিতে নারাজ তারা। বারবার বন দফতরকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। তবে বন দফতরের আধিকারিক সুকান্ত ওঝার বক্তব্য, “গরু, ষাঁড় এগুলো গৃহপালিত পশু। এরা বন দফতরের আয়ত্তে নেই। তাই এখানে আমাদের কিছু করার নেই।” এই প্রেক্ষিতে গ্রামবাসীরা সকলে এবার একজোটে বিহিত চাইলেন প্রশাসনের কাছে। খবর পৌঁছেছে বিধায়কের কানেও। কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় সব শুনে ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: Shootout: কথা বলে মোবাইলটা হাতেই রেখেছিলেন, আর তাতেই বিপত্তি! রক্তাক্ত হয়ে কাতরাতে থাকেন যুবক