AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Jalpaiguri: ‘পিপাসা দেবী যেন মা…’, বৃহন্নলাদের উপহারে কান্নায় ভেঙে পড়ল স্কুলছুট ছাত্রীরা

Jalpaiguri: এই কাজ করতে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন জলপাইগুড়ি দেশবন্ধুনগড় উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের বেশ কিছু ছাত্রী রয়েছে যাঁরা অত্যন্ত মেধাবী হওয়া স্বত্তেও পরিবারের আর্থিক সংগতি না থাকায় সমস্ত বই কিনতে পারছে না। এরফলে অনেকেই মাঝ রাস্তায় পড়া ছেড়ে দিচ্ছে।

Jalpaiguri: 'পিপাসা দেবী যেন মা...', বৃহন্নলাদের উপহারে কান্নায় ভেঙে পড়ল স্কুলছুট ছাত্রীরা
স্কুল ছুটদের হাতে বই তুলে দিলেন বৃহন্নলারা (নিজস্ব চিত্র)
| Edited By: | Updated on: Jan 19, 2023 | 7:30 PM
Share

নীলেশ্বর সান্যাল, জলপাইগুড়ি: কথায় বলে যেই সমাজে মহিলারা যত বেশি শিক্ষিত সেই সমাজ তত বেশি এগিয়ে যায়। আর এবার সেই কাজ করতে এগিয়ে এলেন জলপাইগুড়ি বৃহন্নলা আস্থা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সদস্যরা। স্কুল ছুটদের (ড্রপ আউট) দেশবন্ধুনগড় উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দুস্থ মেধাবী ছাত্রীদের হাতে বই তুলে দিলেন তাঁরা। উল্লেখ্য, বৃহন্নলা আস্থা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সদস্যরা নিজেদের দিন গুজরান করতে এলাকাবাসীর দুয়ারে-দুয়ারে গিয়ে অর্থ সংগ্রহ করেন। এই কাজ করতে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন জলপাইগুড়ি দেশবন্ধুনগড় উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের বেশ কিছু ছাত্রী রয়েছে যারা অত্যন্ত মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও পরিবারের আর্থিক সংগতি না থাকায় সমস্ত বই কিনতে পারছে না। এরফলে অনেকেই মাঝ রাস্তায় পড়া ছেড়ে দিচ্ছে।

ছাত্রীদের এই অসহায় পরিস্থিতির কথা মনে দাগ কেটে যায় তাঁদের। এরপর নিজেরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন নিজেদের সামর্থ্য মতো এই স্কুলের মেধাবী ছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের বই উপহার দেবেন। আর যেমনি ভাবা তেমনি কাজ। স্কুলে এসে যোগাযোগ করে অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের ছাত্রীদের বইয়ের তালিকা নিয়ে যান তাঁরা। এরপর স্কুলে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের হাতে বইগুলি তুলে দেন। ‘ব্রাত্যজনীদের’ হাত থেকে মহা মূল্যবান উপহার পেয়ে রীতিমত কান্নায় ভেঙে পড়ল ছাত্রী থেকে অভিভাবকরা।

জলপাইগুড়ি নেতাজী পাড়ার বাসিন্দা পেশায় টোটো চালক প্রতাপ সরকার। তিনি জানান যে তাঁর স্ত্রী এবং দুই মেয়েকে নিয়ে রাজস্থানের একটি কোম্পানিতে হিসাব রক্ষকের কাজ করতেন। তাঁর দুই মেয়ে সেখানকার ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ত। করোনাকালে লকডাউন হয়ে যায়। কাজ হারান তিনি। এরপর পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে তিনি জলপাইগুড়ি ফেরত চলে আসেন। বর্তমানে টোটো চালিয়ে খুব কষ্টে সংসার চালাচ্ছেন। তার পক্ষে দুই মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে সরকারি বইয়ের বাইরে বাড়তি বই কিনে দেওয়া কার্যত অসম্ভব ছিল। বৃহন্নলাদের এই দান তার মেয়েদের পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

স্কুলের ছাত্রী তথা প্রতাপ সরকারের কন্যা প্রতিমা সরকার কাঁদতে কাঁদতে ক্যামেরা সামনে জানায়, তার বাবার পক্ষে বই কিনে দেওয়া সম্ভব ছিল না। এই বই পেয়ে আগামীতে সে আরও পড়াশুনা করে ভাল ফল করবে।

স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী মৌসুমি রায় বলেন, “আমার বাবা রং মিস্ত্রী। সামান্য আয়ে সংসার চলে। তাই তাঁর পক্ষে সংসার চালিয়ে দামি বই কিনে দেওয়া বাবার পক্ষে অসম্ভব ছিল। সেখানে এই বইগুলি পেয়ে আমার খুব উপকার হয়েছে। আগামীতে আমি আরও ভাল ফল করার চেষ্টা করব। বড় হয়ে আমি চিকিৎসক হতে চাই।”

বৃহন্নলা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সম্পাদিকা পিপাসা জানান, “ছোটবেলায় আমরা স্কুলে পড়ার সুযোগ পাইনি। সেই আক্ষেপ আমাদের মনে রয়েছে। পাশাপাশি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সকল প্রকার মানুষের কর্তব্য। সেই কর্তব্যবোধের তাগিদেই আমরা এই ছাত্রীদের পাশে দাঁড়ালাম। আমরা এখানে এসে দেখলাম এই প্রবল ঠান্ডায় অনেকের সোয়েটার নেই। তারা শুধু জামা পরে স্কুলে এসেছে। আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি আগামী দিনে আমরা ফের বই দেব। পাশাপাশি যাদের সোয়েটার নেই তাদের সোয়েটার দেব। একইসাথে যারা স্কুলে ভর্তি হওয়ার টাকা দিতে পারেনা তাদের ভর্তীর টাকা আমরা দেব।”

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সোমা পাল রায় বলেন, “আমাদের স্কুলের ছাত্রীদের মধ্যে একটা বড় অংশ ফার্স্ট জেনারেশন লার্নার। এরা অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের। এদের অনেকের পক্ষেই স্কুলে ভর্তির জন্য ২৪০ দেওয়া অসম্ভব। আমাদের দিদিমণিরা অনেকের ভর্তির টাকা দেওয়া সহ অন্যান্য কাজ করে থাকেন। এদের পক্ষে ভাল ফল করার জন্য অতিরিক্ত বই কেনা অসম্ভব। তাই অনেকেই মাঝ পথে পড়া বন্ধ করে দেয়। ফলে ড্রপ আউটের সংখ্যা বাড়ে। এদের অসহায় অবস্থার কথা জানতে পেরে বৃহন্নলা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সদস্যরা এবার যেভাবে এদের পাশে দাঁড়ালো তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। নইলে এরাও হয়তো ড্রপ আউট হয়ে যেত। পিপাসা দেবী আজ থেকে এদের সকলের মা হয়ে গেলেন। আমরা এদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।”