বেতনের অর্থে করোনা আক্রান্তদের জন্য ওষুধ-খাবার নিয়ে দুয়ারে শিক্ষক
পেশায় তিনি স্কুল শিক্ষক (School Teacher)। নাম দ্রোনাচার্য ব্যানার্জি। তবে করোনা (Corona) আবহে এলাকাবাসীর কাছে তাঁর পরিচয় বিট্টুদা। গ্রামের মধ্যে কারও করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবরে যখন ভয়ে সিঁটিয়ে যাচ্ছেন প্রতিবেশীরা। তখন করোনা আক্রান্তদের পাশে দিন-রাত রয়েছেন তাঁদের বিট্টুদা।
মালদহ: পেশায় তিনি স্কুল শিক্ষক (School Teacher)। নাম দ্রোনাচার্য ব্যানার্জি। তবে করোনা (Corona) আবহে এলাকাবাসীর কাছে তাঁর পরিচয় বিট্টুদা। গ্রামের মধ্যে কারও করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবরে যখন ভয়ে সিঁটিয়ে যাচ্ছেন প্রতিবেশীরা। তখন করোনা আক্রান্তদের পাশে দিন-রাত রয়েছেন তাঁদের বিট্টুদা। নিজেই রান্না করে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁদের কাছে। কারও ওষুধের প্রয়োজন হলে নির্দ্বিধায় ফোন করছেন বিট্টুদাকে। সঙ্গে সঙ্গে হাজির হচ্ছেন এই শিক্ষক।
করোনা আবহে দীর্ঘদিন বন্ধ স্কুল। স্নেহের পড়ুয়াদের ছেড়ে বাড়িতে বসে প্রায় ওষ্ঠাগত প্রাণ মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের এক প্রাথমিক স্কুলেপ শিক্ষক দ্রোণাচার্যের। তাই করোনা আবহে এলাকাবাসীর পাশে দাঁড়াতে পথে নেমেছেন তিনি। করোনা আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি নিজের বেতনের টাকা খরচ করে রান্না করা খাবার বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন। গরিব অসুস্থ মানুষের প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনেও ছুটে যাচ্ছেন তিনি। আর এই পুরো কাজটি তিনি করছেন একা। কোনও সংগঠন নয়। তিনি আর স্ত্রী মিলে এই অতিমারিতে তৈরি করেছেন তাঁদের ‘ছোট্ট’ সংগঠন। করোনা আক্রান্তদের জন্য নিজের হাতে রান্না করছেন স্ত্রী চৈতালী ব্যানার্জি। আর সেই সব রান্না নিয়ে বাড়ি বাড়ি ছুটছেন প্রাথমিক শিক্ষক দ্রোণাচার্য।
করোনা আবহে প্রতিদিন সকাল হলেই ব্যস্ততা তুঙ্গে ওঠে মাস্টার মশাইয়ের। ঢাউস বাজার ব্যাগটা হাতে করে বেরিয়ে যান। ফেরেন থলে ভর্তি সবজি আর মাছ নিয়ে। সকাল থেকেই স্ত্রীও বসে যান রান্না-বান্নার কাজে। ফুরসত নেওয়ার সময় নেই তাঁদের। বাড়ির উঠোনে দেখা গেল ভাত, ডাল, ভাজা, আলু ফুলকপির তরকারি ডিমের তরকারি, অ্যালুমিনিয়ামের ফয়েলে প্যাক করা হচ্ছে। গ্লাভস আর মাস্ক পরে সেগুলি প্যাকেটবন্দি করছেন মাস্টারমশাই। এদিকে তখন গ্রামের বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন আসা শুরু হয়েছে। সবার ঠিকানা জেনে নিয়ে বলে দ্রোণাচার্য বলে দিচ্ছেন আর একটু পরে পৌঁছে যাবেন। কারও প্রয়োজন হলে তাঁর সঙ্গে যাতে যোগাযোগ করতে পারেন এ জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ফোন নম্বর দিয়ে দিয়েছেন দ্রোণাচার্যবাবু।
দীর্ঘদিন ধরে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার কিরণবালা বালিকা বিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করছেন দ্রোণাচার্য ব্য়ানার্জি। ঠাকুরদা-ঠাকুরমা দু’জনেই ছিলেন গান্ধীবাদী এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী। খানিকটা তাঁদের থেকে আর্তের সেবা করার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন তিনি। জানালেন দ্রোণাচার্যবাবু।
স্কুল বন্ধ। কিন্তু সমাজ সেবার কাজে তিনি রয়েছেন। শুধু ভূমিকাটা বদলে গিয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে নাজেহাল সারা ভারত। প্রভাব পড়েছে মালদার ছোট্ট গ্রাম হরিশ্চন্দ্রপুরের মাটিতেও। এলাকার অনেক দরিদ্র দিনমজুর পরিবার আজ করোনা আক্রান্ত। তাঁদের দৈনিক আয় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে নিত্যদিনের খাবার জোগাড় করতেই তারা হিমশিম খাচ্ছেন। তার উপর এই ভাইরাসের কোপ শরীরে। এই পরিস্থিতি দেখে নিজের বেতনের বড় অংশ থেকে তাঁদের খাবার ওর ওষুধ যোগাচ্ছেন মাস্টার মশাই।
আরও পড়ুন: ‘কাজ না করে টাকা নিচ্ছি’, করোনায় কর্মহীন পরিবারকে বেতন দান শিক্ষকের
দ্রোণাচার্য বাবুর স্ত্রী চৈতালি দেবী জানালেন, স্বামী দীর্ঘদিন বিভিন্ন সময়ে সমাজসেবার সঙ্গে যুক্ত থাকেন। এটা নতুন কিছু না। তবে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে দায়িত্ব যেন বেড়ে গিয়েছে। মহামারির দাপটে জেরবার সারা দেশ। মানুষের অবস্থা শোচনীয়। একদিকে করোনার আতঙ্ক, অন্যদিকে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের আর্থিক সংকট। এরকম পরিস্থিতিতে দ্রোণাচার্য বাবুর মত লোকেরাই অসহায় মানুষদের আশা-ভরসা।