কেন ডবল ইঞ্জিন সরকার গড়তে হবে? গাজোলে গেরুয়া বসনধারীর মুখে পাটিগণিতের হিসাব
ভোটের (West Bengal Assembly Election 2021) আবহে মালদায় (Malda) যোগীর (Yogi Adityanath) সভা। দিয়ে গেলেন 'ডবল ইঞ্জিন সরকার' তত্ত্বের পাঠ
মালদা: ভোট মঙ্গলে (West Bengal Assembly Election 2021) যোগীর সভা স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রেই বিশেষ অঙ্ক দেখিয়ে দিয়েছিল বিজেপি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে তা ছিল অত্যন্তই স্পষ্ট। সেই মালদাতে (Malda) দাঁড়িয়েই আরও একবার ডবল ইঞ্জিন সরকারের পাঠ পড়ালেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ (Yogi Adityanath)। বিশ্লেষকরা বলছেন, গেরুয়াধারী নেতা হিন্দু ভোট একমুখী করার পাঠ পড়ানোর সঙ্গে আসলে বোঝাতে চাইলেন কেন্দ্র ও রাজ্যে একই সরকার থাকলে, কতটা এগিয়ে থাকবে রাজ্যে। বললেন, “বাংলার আসল পরিবর্তন আনতে হবে, আর তার জন্য প্রয়োজন ডবল ইঞ্জিন সরকার।”
একুশের নির্বাচনে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের স্লোগান ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকার। অর্থাৎ কেন্দ্র ও রাজ্যে একই সরকার। এবং তাতে কী সুবিধা পাবেন রাজ্যবাসী? মালদার গাজোলের মাঠে দাঁড়িয়ে তারই পাঠ পড়ালেন যোগী। পুরনো একই ইস্যুতে শাসকদলকে বিঁধেছেন তিনি। কিন্তু সঙ্গে তুলে ধরেছে তাঁর নিজ রাজ্যের পরিসংখ্যানও। নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে যে সব জেলাকে রাজ্য বিজেপি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন, তার অন্যতম মালদা। ফলে ভোট মঙ্গলে মালদাবাসী টানতে খুব বেছে বেছে ইস্যুগুলিকে তুলে ধরলেন যোগী। ‘ডবল-ইঞ্জিন সরকার’ তত্ত্বকে তুলে তো ধরলেনই, বরং আরও বেশি করে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুললেন বিজেপির ইস্যুগুলিকে।
বাকি বিজেপি নেতৃত্বের মতো যোগী আদিত্যনাথ অভিযোগ করলেন– মমতা সরকার কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা বঙ্গবাসীকে পেতে দেয় না। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প কেন চালু হল না? কিসান সম্মান নিধি কেন চালু হল না?” কথা প্রসঙ্গেই নিজের রাজ্যের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি।
আত্মবিশ্বাসের সুরে যোগী বলেন, “আমি উত্তরপ্রদেশে এমন কিছু পরিবর্তন এনেছি, যা লক্ষ্যণীয়। জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যে বাংলায় এনসেফালাইটিসে হাজার জনের মৃত্যু হয়েছে। তৃণমূল অজ্ঞাত রোগ দেখিয়ে সব তথ্য লুকিয়ে যাচ্ছে।” স্বচ্ছ ভারত অভিযানে উত্তরপ্রদেশের প্রত্যেক গরিব বাড়িতেও শৌচালয় রয়েছে বলে এ দিন তুলে ধরেন যোগী। তারপরই তিনি বলেন, যোগী দাবি করেন, “তিন বছরে উত্তর প্রদেশে ৪০ লক্ষ লোক আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়েছেন। আর এখানে গরিবদের বাড়ি নেই, ঘর নেই। উত্তর প্রদেশে ৬ কোটি গরিব আয়ুষ্মান যোজনার ভোক্তা।” বাংলার সঙ্গে তুলনা করে বলেন, “আমি বাগডোগরা থেকে আসার পথে দেখেছি মালদায় কোনও গরিব পরিবার এখনও পাকা বাড়ি পায়নি।”
যোগীর আরও তথ্য, “উত্তরপ্রদেশের ৬ কোটি গরিব আয়ুষ্মান ভারতে ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বিমা রয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্য একসঙ্গে মিলে এই কাজকে এগোচ্ছে। কিন্তু বাংলা কেন বঞ্চিত?” তাঁর অভিযোগ, “তৃণমূল সরকার ভয় পাচ্ছে। যদি মানুষকে এই প্রকল্পে সুবিধা দেওয়া হয়, তাহলে তৃণমূল ভোটব্যাঙ্ক হারাবে।”
কিসান সম্মান নিধি প্রসঙ্গে যোগীর তুলনা, “উত্তরপ্রদেশে ২ কোটি ৪২ লক্ষ কৃষক প্রতি বছর কৃষক সম্মান নিধি প্রকল্পে ৬ হাজার টাকা করে পাচ্ছে। তাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা পড়ছে। কিন্তু বাংলার কৃষকরা তো পেলেনই না। তাঁদের টাকা পেতে দেওয়া হল না।” তেমনভাবেই রেশন কার্ড ইস্যুতেও সরব হন যোগী। তিনি বলেন, “মোদীজি এক দেশ এক রেশন কার্ড চালু করেছেন। তা উত্তরপ্রদেশের মানুষের আছে। কিন্তু তৃণমূল এক দেশ এক রেশন কার্ড এখানে চালুই করতে দিল না। এটা চালু হলে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা ভিন রাজ্যে গিয়েও ওই কার্ড দিয়ে রেশন তুলতে পারতেন।”
আরও পড়ুন: নিমতিতা কাণ্ড: ভোটের মুখে বিস্ফোরণের তদন্তভার নিল এনআইএ
গত লোকসভা নির্বাচনে গাজোলে ভাল ফল করেছিল বিজেপি। সেক্ষেত্রে এই স্থানে যোগীর সফরে ভোট যোগের অঙ্কটাও অত্যন্ত স্পষ্ট বিশ্লেষকদের কাছে। তবে যোগী এ দিন ডবল ইঞ্জিন সিলেবাসের যে পাঠ দিয়ে গেলেন, তা মালদা তথা বালুরঘাট, রায়গঞ্জবাসীর কাছে কতটা স্পষ্ট হল, সেটাই দেখার।