মুর্শিদাবাদের রানিনগর। সরু পিচ রাস্তার মধ্যে দিয়ে একটু এগোলেই দেখা যাবে প্রায় তিন কাঠা জমি বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে ঘেরা। ভিতরে ঢুকলে মনে হবে, শুনশান গ্রামের মধ্যে হঠাৎই কোনও পাঁচতারা হোটেলে এসে পড়েছেন। কিংবা কোনও রিসর্টে! পেল্লাই আকৃতির তিন তলা বড় বাড়ি। বড় সুইমিং পুলের পাশাপাশি আরও কত্ত কিছু! যদিও, সুইমিং পুলটিকে পুকুর বলেই দাবি করেছেন ওই বাড়ির মালিক। আর বাড়ির ভিতর এতটাই বিলাস বহুল যে চোখ ধাঁধিয়ে যেতে বাধ্য। কিন্তু এই বাড়ির মালিক কে? মনে শুধু প্রশ্নটা আসতে হবে। উত্তর পেতে বিশেষ অপেক্ষা করতে বা সমস্যা পোহাতে হবে না। যে কেউ জানিয়ে দেবেন, মালিক হলেন তৃণমূল নেতা শাহ আলম সরকার। বর্তমানে রানিনগর ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান। এ যাবৎ সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া বহুচর্চিত বাড়িগুলির অন্যতম। তবে বাড়ি নিয়ে প্রশ্ন করতেই বেজায় চটলেন চেয়ারম্যানমশাই। এতটাই ক্ষেপে যান যে অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে শুরু করেন TV9 বাংলার সাংবাদিককে।
শাহ আলমের সম্পত্তির ফিরিস্তি
নেতার নিজের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি দু’টো ইট ভাটার মালিক। এ ছাড়া পৈতৃক সম্পত্তি ছিলই। এরপর নিজে দু’টি গাড়ি কিনেছেন। তবে সূত্র বলছে, রানিনগরের এই বাড়ি ছাড়াও মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে তাঁর আরও একটি ফ্ল্যাট রয়েছে।
শাহ আলমের উত্থান
রাজনীতিতে আসার আগে ইট ভাটার শেয়ার হোল্ডার ছিলেন। ২০১১-১২ সালে কংগ্রেস করতেন শাহ আলম। তারপর ২০১৫ নাগাদ তৃণমূলে যোগদান করেন তিনি। লোকে বলে, সেদিন থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। ধীরে-ধীরে এলাকায় পরিচিতি বাড়ে তৃণমূল নেতা হিসেবে। এরপর কালক্রমে রানিনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের চেয়ারম্যান।
বাড়ি নিয়ে প্রতিক্রিয়া তৃণমূল নেতার
TV9 বাংলার সাংবাদিক তাঁর সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন করতেই ক্ষেপে যান আলম। সাফ বলেন, ‘ওটা সুইমিং পুল নয়, পুকুর। আমি ইনকাম ট্যাক্স দিই। জমির বৈধ দলিল রয়েছে আমার কাছে। আমার বাপের ১০০ বিঘা জমি ছিল। ২০০৩ সাল থেকে আমার দু’টো ইটভাটা আছে। দুটো গাড়ি রয়েছে। কারও বাপের টাকায় এই সম্পত্তি কিনিনি।’
যদিও, বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা। জেলা কংগ্রেস মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, “বাংলায় তৃণমূলের নেতারা আজ বিশ্বের দরবারে বিশেষ দর্শনীয় বস্তু হয়ে উঠেছে। সামান্য জীবন হঠাৎ কেমন করে অসামান্য হয়ে যেতে পারে, তারাই বঙ্গবাসীকে জানিয়েছেন। যার কথা আপনারা বলছেন তাঁর বাড়িতে সুইমিং পুল কেন, হঠাৎ যদি গঙ্গাও চলে আসে তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ পঞ্চায়েত সমিতি, পুরসভা, কয়লা পাচার, গরুপাচার এই গুলো এখন তৃণমূলে দস্তুর। এদের আলাদা করে রেজিস্টার নম্বর আছে। স্বাভাবিক কারণেই এখানে অবাধ সন্ত্রাস, লুঠ হচ্ছে।”
বাড়ি বিতর্কে স্থানীয় বিজেপি নেতা লাল্টু দাস বলেন, “সর্বত্র তৃণমূলের ছোট-বড়-মাঝারি নেতারা একেবারে তোলাবাজে পরিণত হয়ে গিয়েছে। হঠাৎ করে কীভাবে ওনাদের এত বড় বাড়ি হয়ে যাচ্ছে? কী করে হয় এমন ঘটনা? তোলাবাজি আর দুর্নীতিতে ভর্তি পঞ্চায়েত সমিতির কোনও কাজ নেই। এদের একটাই কাজ দুর্নীতি”
বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের জেলা স্তরের পদস্থ নেতারা কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি।
আরও পড়ুন: Bachchu Hansda: মন্ত্রী হয়েছিলেন একবার, বাচ্চু হাঁসদার বাড়ি দেখলে চমকে যাবেন আপনিও
আরও পড়ুন: Modasser Hossain: ‘কাটা তেলের’ ব্যবসায়ী থেকে পঞ্চায়েত প্রধান, তৃণমূল নেতার ‘লাভ হাউসের’ খরচ জানেন?