আজ শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বঙ্গ সফরের দ্বিতীয় দিন। শুক্রবার আরামবাগের পর আজ কৃষ্ণনগরে জনসভা রয়েচে মোদীর। সকালেই রাজভবন থেকে বেরিয়ে যান মোদী। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ তাঁর হেলিকপ্টার পৌঁছেছে কৃষ্ণনগরে। প্রথমে একটি প্রশাসনিক সভায় যোগ দেবেন মোদী। তারপর যোগ দেবেন জনসভায়।
মোদী বলেন, ‘২৫ লক্ষ মনরেগা জব কার্ড তৈরি করা হয়েছে, যার জন্ম হয়নি তারও জব কার্ড বানানো হয়েছে। গরিব মানুষের টাকা তোলাবাজ লুটে নিয়েছে। সব স্কিমকে স্ক্যামে বদলে দিচ্ছে। এতে তৃণমূল মাস্টার।’
সন্দেশখালি প্রসঙ্গে মোদী বলেন, “আজ মা-মাটি-মানুষ তৃণমূলের শাসনে কাঁদছে। সন্দেশখালির মা-বোনেরা কাঁদছে। কিন্তু তৃণমূল তাঁদের কথা শুনছে না। এখানে পুলিশ নয়, অপরাধী ঠিক করে, কবে আত্মসমর্পণ করবে, কবে গ্রেফতার হবে। রাজ্য সরকার তো চাইছিল না অপরাধী গ্রেফতার হোক। কিন্তু বাংলার নারী শক্তি দুর্গা হয়ে লড়াই করেছে। তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিজেপি কর্মীরা।”
আয়ুষ্মান ভারতের কথা উল্লেখ করে মোদী বলেন, “তৃণমূল সরকার এই যোজনা কার্যকর হতে দিচ্ছে না। বিজেপি দরিদ্র মানুষের সেবার জন্য কাজ করছে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত রাজ্যে মাত্র ১৪টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ছিল। গত ১০ বছরে সেটা বেড়ে সংখ্যাটা ২৬ হয়েছে।”
রাজ্য সরকার কী কাজ করছে, তার উদাহরণ হল বাংলার প্রথম এইমস। মোদী গ্যারান্টি দিয়েছিলেন বাংলায় তৈরি হলে এইমস। বাংলায় মোদী বলেন, ‘বুঝলেন মোদীর গ্যারান্টি হল পূরণ হওয়ার গ্যারান্টি।’
মোদী বলেন, “কিছুদিন আগেই ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে কল্যাণীর এইমস উদ্বোধন করেছি। ১০০০ বেডের এই হাসপাতালে মানুষের অনেক সুবিধা হবে, আরও বেশি রোজগারের সুযোগ এনেছে। কিন্তু এতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এইমস তৈরি হওয়া নিয়ে সমস্যা রয়েছে। রাজ্য় সরকার বলছে, অনুমতি নেওয়া হয়নি কেন? তৃণমূলের তোলাবাজদের, গুণ্ডাদের অনুমতি লাগে না। আর এত বড় হাসপাতাল নিয়ে অনুমতির প্রশ্ন তুলছেন মোদী। কমিশন না দিলে অনুমতি দেয় না তৃণমূল। আগে কমিশন, তারপর পারমিশন।”
তৃণমূলকে আক্রমণ করে মোদী বলেন, ‘অত্যাচার ও বিশ্বাসঘাতকতার দ্বিতীয় নাম তৃণমূল। তৃণমূলের জন্য দুর্নীতি আর পরিবারবাদই গুরুত্বপূর্ণ, মানুষের উন্নয়ন নয়। তৃণমূল বাংলার মানুষকে গরিব করেই রেখে দিতে চায়, যাতে তৃণমূলের রাজনীতি চলতে থাকে, খেলা চলতে থাকে।’
এবার এনডিএ সরকার, ৪০০ পার। কৃষ্ণনগরে বললেন মোদী। মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২২০০০ কোটি টাকার প্রকল্প সূচনা করেছি। এই সব প্রকল্প বাংলায় যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, বন্দরের উন্নয়ন ঘটাবে। এর ফলে মানুষের রোজগার বাড়বে।’
এটা শ্রীকৃষ্ণের প্রচারক চৈতন্যদেবের জন্মস্থান। আমি চৈতন্য মহাপ্রভুকে প্রণাম জানাচ্ছি। শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকা নগরী তৈরি করেছিলেন, যেটা সমুদ্রে ডুবে গিয়েছিল। কয়েকদিন আগে সমুদ্রের নীচে গিয়ে সেই দ্বারকা নগরীর মাটি স্পর্শ করার সৌভাগ্য় হয়েছিল আমার: মোদী।
‘মাঠটা ছোট হয়ে গিয়েছে। আপনাদের সমস্যা হচ্ছে। তাই আপনাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।’ মঞ্চে উঠেই বললেন মোদী। বললেন, ‘আপনাদের ভালবাসা ও আশীর্বাদের জন্য আপনাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’
‘কৃষ্ণনগরের সাংসদ এখন নেই, প্রাক্তন হয়েছেন। পাসওয়ার্ড বিক্রি করেছিলেন। তার বদলা হবে তো? সন্দেশখালির বদলা হবে তো?’ মঞ্চ থেকে বললেন শুভেন্দু অধিকারী।
কৃষ্ণনগরের সভা থেকে মহুয়া মৈত্রকে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করলেন সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, ‘একজন সামান্য টাকার লোভে, লিপস্টিকের লোভে সাংসদের লগ ইন আইডি দিয়ে দিলেন অন্য কাউকে, তাঁকে সাংসদ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’
কৃষ্ণনগরে বিজেপির বিজয় সঙ্কল্প সভায় যোগ দিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রশাসনিক সভা থেকে সভাস্থলে যাওয়ার পথে রোড শো করলেন মোদী। হুড খোলা গাড়িতে হাত নাড়তে নাড়তে গেলেন প্রধানমন্ত্রী। বহু সমর্থকও হাত নেড়ে অভিবাদন জানান তাঁকে।
প্রকল্প সম্পর্কে মোদী জানান, ফরাক্কা ও রায়গঞ্জের মধ্যে জাতীয় সড়ক উদ্বোধন করা হয়েছে। এর জন্য ২০০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। এর ফলে বহু মানুষের যাতায়াত সহজ হবে। মোদী বলেন, ‘চার রেল যোজনার সূচনা করলাম আজ।’
মোদী জানিয়েছেন, এই সব প্রকল্প থেকে পশ্চিমবঙ্গে আর্থিক উন্নয়ন হবে। বাড়বে কর্মসংস্থান। রয়েছে বিদ্যুৎ, রেল সংক্রান্ত প্রকল্প। এর ফলে আশপাশের এলাকাতেও উন্নয়ন হবে।
আজিমগঞ্জ-মুর্শিদাবাদ নতুন লাইন, বাজারসৌ-আজিমগঞ্জ ডবল লাইন সহ একাধিক প্রকল্পের সূচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী। মোট ১৫০০০ কোটি টাকার প্রকল্পের সূচনা হল এদিন।
শনিবার সকালেই সভাস্থলে পৌঁছে যান বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সভাস্থল পরিদর্শন করেন তিনি। লোকসভা নির্বাচনের আগে কৃষ্ণনগরকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। নদিয়া সাংগঠনিক জেলাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিজেপির কাছে। পঞ্চায়ে নির্বাচনেও হয়েছিল ভাল ফল। তাই এই কেন্দ্রকে পাখির চোখ করা হচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।