ব্যারাকপুর: সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী তিনি। যখন চিন্ময়কৃষ্ণের অন্য এক আইনজীবী আক্রান্ত হয়েছেন, তখন ভয় না পেয়ে ধৃত সন্ন্যাসীর জামিনের পক্ষে সওয়াল করেছেন তিনি। বাংলাদেশের প্রবীণ সেই আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ চিকিৎসার জন্য কলকাতায় এসেছেন। রয়েছেন ব্যারাকপুর। মঙ্গলবার তাঁর সঙ্গে দেখা করলেন ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিং, বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী এবং কার্তিক মহারাজ।
মাস চারেক আগে মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। হিন্দু-সহ সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হচ্ছে। এরই মধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ।
চিন্ময়কৃষ্ণের এক আইনজীবী আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। এই পরিস্থিতিতে ধৃত সন্ন্যাসীর হয়ে সওয়াল করছেন বছর অষ্টআশির রবীন্দ্র ঘোষ। আক্রান্ত হওয়ার ভয় পাননি? ব্যারাকপুরে ছেলের বাড়িতে বসে প্রবীণ আইনজীবী বললেন, “আমি জানি, আমাদের প্রাণ সংশয় রয়েছে। কিন্তু, আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। শেষ পর্যন্ত লড়ব। এক পাও পিছনে যাব না। আমাদের প্রথম চিন্তা, চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে মুক্ত করতে হবে। চট্টগ্রাম আদালতে মুক্তি না পেলে হাইকোর্টে যাব। সেখানে না হলে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে যাব।”
বর্তমানে চিন্ময়কৃষ্ণের শারীরিক অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, “আমি চট্টগ্রামের জেলে গিয়ে দেখা করেছিলাম।” জেলে মানসিকভাবে কিছুটা বিধ্বস্ত হলেও শারীরিকভাবে চিন্ময়কৃষ্ণ ভাল রয়েছেন বলে মন্তব্য করেন রবীন্দ্র ঘোষ। রান্না করে খেতে হয়। কষ্ট করে থাকতে হয়। তিনি আরও বলেন, “চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের সঙ্গে জেলে আরও দুই সন্ন্যাসী রয়েছেন। তাঁদের দুটি মশারি দেওয়া হয়েছিল। সেগুলোও চুরি হয়ে গিয়েছে।”
বাংলাদেশে হিন্দু-সহ সমস্ত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবে বারবার ইউনূস প্রশাসনকে বার্তা দিয়েছে ভারত। বাংলাদেশের প্রবীণ আইনজীবী সেকথাই ফের বললেন। বাংলাদেশের সমস্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে পদক্ষেপ করার জন্য ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানালেন।
চিকিৎসার জন্য ভারতে এসেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “২৭ ডিসেম্বর নাগাদ ফিরে যাব।” ২ জানুয়ারি চিন্ময়কৃষ্ণের জামিনের মামলায় ফের সওয়াল করবেন তিনি।
প্রবীণ আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করার পর অর্জুন সিং বলেন, “বাংলাদেশে হিন্দু-সহ সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হচ্ছেন। তাঁদের বাঁচাতে হবে। তার জন্য যা করা দরকার, সেই পদক্ষেপ করতে হবে ভারতকে। বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দিতে হবে। পাকিস্তানকে ঠান্ডা করে দিয়েছেন মোদীজি। তিনি সবই পারেন। সবাই তাঁর দিকে তাকিয়ে রয়েছে।” ভারত সরকারকে বাংলাদেশের হিন্দু-সহ সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়ানোর আবেদন জানিয়েছেন কার্তিক মহারাজও। চিন্ময়কৃষ্ণের হয়ে সওয়াল করার জন্য রবীন্দ্র ঘোষকে ধন্যবাদ জানান কার্তিক মহারাজ।
অন্যদিকে, কৌস্তভ বাগচী বলেন, “চিন্ময়কৃষ্ণের হয়ে যাতে কোনও আইনজীবী দাঁড়াতে না পারেন, তার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধেও মামলা দেওয়া হচ্ছে। মৌলিক অধিকার খর্ব হচ্ছে।”