Naihati Mysterious Death: শাটার নামানো, ভিতরেই রয়েছেন কর্মীদের কয়েকজন, গাড়ির শোরুমে ক্রেতার রহস্যমৃত্যুতে রয়েছে বেশ কয়েকটি খটকা
Naihati Mysterious Death: প্রশ্ন হচ্ছে,শোরুমে ওত কর্মী ও ক্রেতার মাঝে কীভাবে আত্মঘাতী হন ওই যুবক? পরিবারের অভিযোগ,গাড়ি কেনার পর কিস্তির টাকা না দিতে পারাতেই মেরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই যুবককে। এই ঘটনায় বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঠছে।
উত্তর ২৪ পরগনা: গাড়ির শোরুম থেকে ক্রেতার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় ক্রমেই দানা বাঁধছে রহস্য। বুধবার রাতে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর থেকে বেপাত্তা নৈহাটির সংশ্লিষ্ট গাড়ি শোরুমের কর্মীরা। আর শাটার নামিয়ে ভিতরেই রয়ে গিয়েছেন নিরাপত্তারক্ষীরা। সকালেও তাঁরা সেখান থেকে বের হননি। দোকানের গেটের মুখে লাগানো সিসি ক্যামেরাটাকেও বন্ধ করে রাখা হয়েছে। সিসি ক্যামেরায় ধরা থাকতে পারে, ঠিক কোন সময়ে শোরুমে ঢুকেছিলেন সাদ্দাম নামে ওই ক্রেতা । কিছু লুকোতেই কি সেই ক্যামেরা বন্ধ? তবে সব থেকে উল্লেখ্যযোগ্য বিষয়, পরিবার অভিযোগ করছেন, এখনও পর্যন্ত ওই শোরুম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপই করেনি পুলিশ। কোনও কর্মীর সঙ্গেই কথাও বলেননি তদন্তকারীরা। উল্লেখ্য, বুধবার রাতে নৈহাটিতে গাড়ির শোরুম থেকে সাদ্দাম নামে ওই ক্রেতার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। জানা যায়, সাদ্দাম লোন নিয়ে ওই শোরুম থেকে গাড়ি কিনেছিলেন। দোকানে ৪৫ হাজার টাকার চেক দিয়েছিলেন। সেই চেক বাউন্স হয়। এরপর গত সোমবার তাঁকে শোরুমে ডেকে পাঠানো হয়। বুধবার রাতে ওই শোরুমের মধ্যে থেকেই তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। শোরুম কর্তৃপক্ষের দাবি, আত্মঘাতী হয়েছেন ওই যুবক। পরিবারের অভিযোগ,গাড়ি কেনার পর কিস্তির টাকা না দিতে পারাতেই মেরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই যুবককে। তবে এই ঘটনার কাটাছেড়া করতে গেলে বেশ কয়েকটি জায়গায় খটকা থেকেই যাচ্ছে।
খটকা ১. শোরুমে অত কর্মী ও ক্রেতার মাঝে কীভাবে আত্মঘাতী হন ওই যুবক?
খটকা ২. আত্মঘাতী হলেও, তাঁকে কি কেউ আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছে? সেক্ষেত্রেও তো অন্য ধারায় মামলা রুজু করতে পারে পুলিশ। কিন্তু এক্ষেত্রে পুলিশের তৎপরতা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
খটকা ৩. প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত সোমবার।সেদিন থেকেই নাকি তাঁকে ডেকে আটকে রাখা হয়েছিল। কেন দুদিন আটকে রাখা হয়েছিল যুবক? কেন প্রশাসনের দ্বারস্থ হননি শোরুম কর্তৃপক্ষ?
খটকা ৪. কেন গাড়িটিকে বাজেয়াপ্ত করা হয়নি, সে প্রশ্নও থাকছে।
খটকা ৫. কেন দুদিনে পরিবারের তরফে থানায় যাওয়া হয়নি? (উল্লেখ্য, পরিবারই দাবি করছে, সাদ্দাম ফোন করে তাঁদের জানিয়েছিলেন, তাঁকে মারধর করা হচ্ছে।) কিন্তু তখনই কেন শোরুম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলেন না পরিবারের সদস্যরা? বারবার যখন ফোন করে তাঁর ওপর অত্যাচারের কথা বাড়িতে জানিয়েছিলেন সাদ্দাম, তাহলে তাঁর বাবা ও পরিবারের সদস্যরা কীভাবে নিস্পৃহ থাকলেন?
খটকা ৬. নিয়ম অনুযায়ী, লোন নেওয়ার পর যদি ক্রেতা কিস্তির টাকা না মেটাতে পারেন, যদি চেক বাউন্স হয়, তাহলে ব্যাঙ্কের সঙ্গেই প্রথমে যোগাযোগ করবেন শোরুম কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এক্ষেত্রে কেন গাড়ির মালিককেই আগে ডেকে দুদিন আটকে রাখা হল? কেন গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হল না?
সব কটি বিষয়ই তদন্তসাপেক্ষে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলছে পুলিশ।
ঘটনার প্রেক্ষাপট
সাদ্দাম বারাসতের ছোট জাগুলিয়ার বাসিন্দা। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এস কে বাজাজের শোরুম নৈহাটি থেকে একটি গাড়ি দিন কুড়ি আগে কিনেছিলেন তিনি। লোনের মাধ্যমে গাড়িটি কেনেন তিনি। লোনের কিস্তি বাবদ সাদ্দাম ৪৫ হাজার টাকার একটি চেক দেন কোম্পানিকে। কিন্তু সেই চেকটি বাউন্স হয়ে যায়। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সোমবার সাদ্দামকে ডেকে পাঠায় নৈহাটি শোরুম। মঙ্গলবার বিকালে সেখানে যান সাদ্দাম হোসেন। পরিবারের দাবি, সাদ্দাম শোরুম থেকেই তাঁর পরিবার ও বন্ধুদের ফোন করেছিলেন। বিস্ফোরক অভিযোগ, সাদ্দাম ফোনে জানিয়েছিলেন শোরুমে তাঁর ওপর চাপ তৈরি করা হচ্ছে। তাঁকে মারধর করা হচ্ছিল বলেও জানান। এমনকি তিনি বলেছিলেন, বাড়ি থেকে যতটা দ্রুত সম্ভব টাকা নিয়ে আসতে, যাতে টাকা দিয়ে তাঁকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান তাঁরা। খবর পেয়ে ওই শোরুমে গিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা। অভিযোগ, তখন শোরুমে লোকজন তাঁদের সঙ্গে ভালো ভাবে কথা বলেননি। সাদ্দাম কোথায়, সেই উত্তরও ঠিকভাবে দিতে পারেননি তাঁরা। এরপর শোরুমের একটি ঘরে সাদ্দামের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান পরিবারের সদস্যরা। বিষয়টি দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান শোরুমের কর্মীদের একাংশ। তাঁদের দাবি, আত্মাঘাতী হয়েছেন সাদ্দাম। কিন্তু পরিবারের অভিযোগ, সাদ্দামকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। নৈহাটি থানার পুলিশ গিয়ে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
পরিবারের সদস্য ও বন্ধুরা কয়েকটি কল রেকর্ডিং প্রকাশ্যে এসেছেন। তাতেই শোনা গিয়েছে সাদ্দাম ফোন করে তাঁর এক বন্ধুকে বলছেন, “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব টাকা পাঠা। ওরা আমাকে এমন মারছে ভাই, মেরে দেবে। আর সহ্য করতে পারছি না। সাত-আট জন মিলে মারছে। টাকাটা ম্যানেজ করে পাঠা।” এই কল রেকর্ডিংয়ের সত্যতা অবশ্য যাচাই করে নি TV9 বাংলা। তবে পরিবার এই সূত্র ধরেই অভিযোগ দায়ের করেছে।