হুগলি: প্রথমে রবীন্দ্রনাথ, পরে স্বামী বিবেকানন্দ। প্রথমে অমিত শাহ, পরে দীনদয়াল উপাধ্যায়-শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। প্রথমে বোলপুর, পরে চুঁচুড়া। ‘সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে।’ বাংলায় রাজনৈতিক ইস্যু জলাঞ্জলি দিয়ে মনীষী প্রেমের রাজনৈতিক জোয়ার চোখ পড়লেও মনীষীদের স্থান রাজনীতিকদের নীচেই রক্ষিত হচ্ছে। শান্তিনিকেতনে অমিত শাহের ছবির নীচে রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতি দেখে প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিল বাংলা। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই এবার দীনদয়াল-শ্যামাপ্রসাদের নীচে ‘বীর সন্ন্যাসী’ বিবেকানন্দ। হুগলির চুঁচুড়াতে বড় বির্তকে জড়িয়ে পড়েছে বিজেপি। স্বামী বিবেকানন্দের (Swami Vivekananda) জন্মজয়ন্তীতে তাঁর মাথার উপর স্থান পেয়েছেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও দীনদয়াল উপাধ্যায়। স্বামীজীর ছবিতে আবার দেখা গিয়েছে পদ্মফুল। বিজেপি যদিও এতে ভুল কিছু দেখছে না।
গোটা রাজ্যে এদিন রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে স্বামীজীর জন্মদিবস পালনের হিড়িক দেখা গিয়েছে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে। যেন কেউ কাউকে এক সেন্টিমিটার জমি ছাড়তে রাজি নয়। তবে এই সবের মধ্যেই হুগলির চুঁচুড়ার ঘড়ির মোড়ে দেখা গেল স্বামীজীকে বিজেপির শ্রদ্ধা অর্পণ করার মঞ্চ। কিন্তু, ছোট আকারের সেই মঞ্চে স্বামীজীর ছবির উপরে দেখতে পাওয়া যায় বিজেপির পোস্টার। এবং সেই পোস্টারের শোভা বর্ধনের জন্য সেখানে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও দীনদয়াল উপাধ্যায়ের ছবি ব্যবহার করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, স্বামীজীর ছবিতে আবার তাঁর মাথার দু’ধারে ব্যবহার করা হয় বিজেপির প্রতীক দু’টি পদ্মফুল। যা নিয়ে গোটা জেলায় তীব্র বিতর্ক ছড়ায়।
এই ঘটনার জেরে এলাকায় ক্ষোভ প্রদর্শন করে তৃণমূল। শাসকদলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, “স্বামীজীকে বিজেপি অপমান করছে।” তাঁর জন্মজয়ন্তীকে কলুষিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন চুঁচু্ড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার। তিনি বলেন, “স্বামী বিবেকানন্দ কে, সেটা বিজেপি জানেই না। ওরা খালি সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ জানে। স্বামী বিবেকানন্দ কবে বিজেপি করতেন আমি জানি না। তাঁর ছবিতে পদ্ম ফুল, এটা ভাবা যায়!”
বিজেপি যদিও এতে ভুল কিছুই দেখছে না। এই প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য নেতা স্বপন পাল বলেন, “এসব আমাদের তৃণমূলে কাছে শিখতে হবে না। পদ্মফুল শুধু বিজেপির প্রতীক নয়। ভারতের জাতীয় ফুল এটা। তাই পদ্মফুলের ছবি সব জায়গায় শোভা পেতে পারে।” অন্যদিকে স্বামীজীর মাথার উপর শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও দীনদয়াল উপাধ্যায়ের ছবি নিয়ে তাঁর সাফাই, “শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় একজন মনীষী। উনি পৃথিবীতে এসেছিলে বলেই পশ্চিমবঙ্গ নিজের জায়গায় রয়েছে। পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় একাত্ম মানববাদের জনক। তাই তাঁদের ছবি থাকায় অন্যায় কিছু নেই, এরাও এক একজন মহাপুরুষ।”
আরও পড়ুন: লোকসভার থেকেও বেশি বাহিনী বিধানসভা ভোটে, স্বরাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে বৈঠক কমিশনের
তবে মনীষীদের অপমান করার অভিযোগ এই প্রথমবার ওঠেনি বিজেপির বিরুদ্ধে। মাসখানেক আগেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বোলপুরে আসার আগে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। এমন একাধিক পোস্টার রাস্তায় ছেয়ে গিয়েছিল যেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে অমিত শাহের ছবি দেখা যায়। কিন্তু সেখানে মাঝখানে ছিলেন রবিঠাকুর। তাঁর উপরে অমিত শাহ। নীচে বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা। প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, তবে কি অমিত শাহ রবীন্দ্রনাথেরও উপরে?
সেই সময় অবশ্য এই ধরনের ফ্লেক্সের দায় শাসকদলের উপরই চাপিয়েছিলেন অনুপম। তাঁর দাবি ছিল, ‘এটা তৃণমূলের ষড়যন্ত্র’। তবে এবার আর দোষারোপ করা হয়নি। উল্টে বিজেপি বলে দিয়েছে, ‘এতে অন্যায় কিছু নেই।’
আরও পড়ুন: একুশের ‘হোমওয়ার্ক’ কদ্দুর, পরখ করতে শহরে কড়া ‘হেড স্যর’ সুদীপ জৈন