আসানসোল: ফের নিজের বিধানসভা এলাকায় দামোদরের ওপর সেতু নির্মাণের দাবি জানালেন আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভার বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল (Agnimitra Paul)। নইলে অনশনে বসার হুঁশিয়ারি দিলেন রাজ্য বিজেপির মহিলা মোর্চার সভানেত্রী। এদিন হীরাপুরের কালাঝরিয়া পরিদর্শনে গিয়ে বাঁকুড়া ও আসানসোলের সংযোগকারী কাঠের সেতু ভেসে যাওয়ার পর মানুষের দুরবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন তিনি। দুই জেলার মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকোতে পারাপার করতে দেখে অগ্নিমিত্রা জানান, এখানে ব্রিজ নির্মাণ অত্যন্ত জরুরী। মানুষ ভীষন বিপদে পড়েছে।
তাঁর কথায়, “তৃণমূল সরকার ভাতা দিতে পারে, ক্লাবকে টাকা দিতে পারে। আর ১১ বছরেও একটা সেতু নির্মাণ করতে পারে না! এখানে ব্রীজ নির্মান করা না হলে পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মানুষদের নিয়ে অনশনে বসব”।
উল্লেখ্য, গত বর্ষায় অস্থায়ী সেতু জলের তোড়ে ভেসে যেতেই ফেরিঘাটই এখন ভরসা পশ্চিম বর্ধমান ও বাঁকুড়া জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বাসিন্দার। দামোদরের ওপর বিপজ্জনক ভাবে পারপার করছেন নিত্যযাত্রীরা। কেউ এভাবেই কারখানার কাজে যাচ্ছেন। কেউ কোলিয়ারি, কেউ হাটবাজারে জিনিস বিক্রি করতে যাচ্ছেনয এমনি বাধ্য হয়ে রোগী নিয়ে ঝুঁকির পারপার করতে হচ্ছে। এঁরা সবাই আসেন বাঁকুড়ার শালতোড়া থেকে বার্নপুর আসানসোলে। আবার উল্টোটাও হয়। বার্নপুরের বাসিন্দাদের শালতোড়া বা বিহারনাথ যাওয়ার জন্য মাঝে বাধা এই দামোদর নদী। নৌকাডুবি হলে বড় দুর্ঘটনা হতে পারে। কারণ, কোনও লাইফ জ্যাকেট বা টিউব পর্যন্ত থাকে না মাঝিদের কাছে। অথচ, ফেরিঘাটের উপর নির্ভরশীল প্রায় ১৫টির বেশি গ্রাম। বছরের পর বছর যায়, দামোদরের পাড়ের দুই জেলার গ্রামের বাসিন্দাদের দুর্ভোগের ছবিটা বদলায় না।
দামোদর তীরের রাউতোড়া, শালতোড়া বা রাধামোহনপুর এলাকাগুলি থেকে বাঁকুড়া সদর শহরের দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। কিন্তু আসানসোল ও বার্নপুরের দূরত্ব যথাক্রমে ১০ ও ৬ কিলোমিটার। ফলে সেতু তৈরি হলে বাজার-হাট, স্কুল, হাসপাতাল থেকে শুরু করে ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস— সবকিছুই নাগালের মধ্যে চলে আসবে। কিন্তু আসানসোল বা বার্নপুরে আসতে গেলে পেরোতে হয় দামোদর। দামোদরে ব্রীজ হোক দাবি সাধারণ মানুষের। ব্রিজ হলে উপকৃত হবেন তাঁরা। আর এই বিষয়টি নিয়ে সরব হলেন আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। জানান, দামোদরের উপর সেতু তৈরির বিষয়টি তিনি দিল্লিতেও জানিয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় সড়ক মন্ত্রী নীতিন গড়করি জানিয়েছেন জাতীয় সড়কের ওপর সেতু কেন্দ্র তৈরি করতে পারেন তাঁরা। দামোদরের উপর সেতু তৈরি করতে হবে রাজ্যকেই। রাজ্য চিঠি দিলে কেন্দ্র সাহায্য করতে পারে। এ নিয়ে অগ্নিমিত্রা বলেন, সেতুর দাবিতে তিনি রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী মলয় ঘটককেও চিঠি লিখবেন।
এদিকে আসানসোল দূর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা রানিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক তাপস বন্দোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “এঁরা অশান্তি, অসন্তোষ আর বিভাজন ছাড়া তো কিছু জানে না। উনি (অগ্নিমিত্রা) খোঁজ নিলে জানতে পারতেন রাজ্য সরকার সম্পত্তি জরিপের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আর সেই কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। এই সেতু নির্মাণ বিশাল বাজেটের ব্যাপার। অর্থনীতিবিদদের কথা শুনেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যের প্রান্তিক মানুষদের হাতে অর্থ তুলে দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে। উনি সেই প্রকল্পগুলো দেখতে পাচ্ছেন না।”