কাটোয়া: দুর্গাপুজোয় (Durga Puja 2021) চাহিদা বেড়েছে কাটোয়ার লোহার তৈরি ঢাকের। একে তো দামে সস্তা। কার উপর আবার ওজনেও হালকা। ফলে এবার পুজোয় কদর বেড়েছে লোহার ঢাক তৈরির কারিগর উত্তম দাসের সৃষ্টির। আর্থিক সাশ্রয়ের পাশাপাশি ঢাকের ভারের কষ্ট লাঘব হওয়ায় এবার পুজোয় লোহার ঢাকের চাহিদা তুঙ্গে।
ঢাকের বাদ্যি, কাশের দোলা ছাড়া পুজো ভাবাই যায় না। চারটে দিন শুধুই ঢাকের বোলে মুখরিত চারপাশ। বাঙালির আবেগের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রয়েছে এই বোল। তবে ঢাকের শব্দ যতই আম-বাঙালির আবেগকে উস্কে দিক না কেন, যাঁরা ঢাক বাজান, তাঁদের কষ্টটা কিন্তু আড়ালেই থেকে যায়।
দীর্ঘক্ষণ ভারী কাঠের ঢাক কাঁধে ঝুলিয়ে বোল তোলেন ঢাকি। তাতে তাঁদেরও ধরে যায় হাত। কিন্তু কিছু করারও নেই। বায়না করে নিয়ে যায় যে পুজো কমিটিগুলি। ছাড় নেই তাই। বছর কুড়ি আগে কাটোয়ার মাধবী তলায় লোহার ব্যবসায়ী উত্তম দাসের বাড়িতে বিশ্বকর্মা পুজোয় ঢাক বাজাতে আসেন এক বৃদ্ধ ঢাকি। ভারী কাঠের ঢাকের ভারে কাহিল বৃদ্ধ ঢাকি লোহার ব্যবসায়ী উওম দাসকে অনুরোধ করেছিলেন, ‘একটা হালকা লোহার ঢাক বানিয়ে দাও না’। বৃদ্ধ ঢাকির অনুরোধে সাড়া দিয়ে উত্তম দাস বানিয়ে ফেলেন লোহার পাতের তৈরি ঢাক। যার ওজন হালকা, কাঠের ঢাকের তুলনায় খরচও কম। লোহার তৈরি করা ঢাকে কাঠি ছোঁয়াতেই হুবহু কাঠের ঢাকের মতো আওয়াজ বের হয়।
সেই প্রথম লোহার ঢাক তৈরি করেছিলেন উত্তম দাস। এরপর ধীরে ধীরে লোহার ব্যবসায়ী থেকে লোহার ঢাক তৈরির শিল্পী হিসাবে নামযশ হয় কাটোয়ার উত্তম দাসের। এতটাই পসার হয়, তিনি লোহার ব্যবসা বন্ধ করে মন দিয়ে লোহার ঢাকই তৈরি করেন এখন। কয়েকজনকে নিয়ে কাটোয়ার মাধবীতলায় তৈরি করেছেন লোহার ঢাক তৈরির কারখানা। সারা বছরই তৈরি হয় লোহার ঢাক। দুর্গাপুজোর সময় চাহিদা বেশি থাকায় চাপও বাড়ে কাজের।
উত্তম দাস জানান, শুধু কাটোয়া বা পূর্ব বর্ধমান জেলাই নয়, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে ঢাকের বরাত আসে তাঁর কাছে। এমনকী পড়শি রাজ্য থেকেও উৎসবের মরসুমে খোঁজ পড়ে তাঁর। উত্তম দাসের কথায়, “কাঠের ঢাকের দাম বেশি। ওজনেও ভারী। সেই তুলনায় লোহার তৈরি ঢাকের দামও কম। ওজনেও হালকা। আওয়াজ অবিকল কাঠের ঢাকের মতন। তাই এর চাহিদাও বেশ বাজারে।”
আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: দেবী এসেছিলেন সাঁওতাল রমণীর বেশে, ভোগও খান! শুধু পাননি মুখশুদ্ধি…