কাটোয়া: খুনের মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ। তারপর থেকেই জেলবন্দি। অবশেষে প্রায় ৬ বছর পর জেলমুক্তি। বেকসুর খালাস হলেন বর্ধমান জেলা পরিষদের প্রাক্তন তৃণমূল উপাধ্যক্ষ বিকাশ চৌধুরী। বেকসুর খালাস হয়েছেন ওই মামলায় নাম জড়ানো মোট ২৫ জন। শনিবার কাটোয়া মহকুমা আদালতের দ্বিতীয় অতিরিক্ত দায়রা এজলাসের বিচারক মধুছন্দা বসু এই নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৭ সালের ১৯ জুন। মঙ্গলকোট থানা এলাকার শিমুলিয়াচটিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হয়েছিলেন শিমুলিয়ার অঞ্চল সভাপতি ডালিম শেখ ওরফে শানাউল্লাহ শেখ। সেই ঘটনার নাম জড়িয়েছিল বিকাশের। মৃত ডালিম শেখের ভাই পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান, সেখানে অন্যতম মূল অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল তৎকালীন জেলা পরিষদের উপাধ্যক্ষ বিকাশ চৌধুরীর নাম। মোট ১৫ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ জানিয়েছিলেন মৃতের ভাই।
সেই মামলা পরবর্তী সময়ে তদন্তভার যায় সিআইডির হাতে। ২০১৭ সালেরই ১৪ সেপ্টেম্বর ডালিম শেখ খুনের মামলায় চার্জশিট জমা করে সিআইডি। কাটোয়া মহকুমা আদালতে জমা করা ওই চার্জশিটে বিকাশ-সহ মোট ২৮ জনের নাম ছিল। এদিকে ডালিম-খুনের মামলায় নাম জড়ানোর পর থেকেই একপ্রকার গা ঢাকা দিতেই থাকতে হচ্ছিল বিকাশ চৌধুরীকে। শেষে ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ বর্ধমানের বাইপাস থেকে মঙ্গলকোটের তৃণমূল নেতা বিকাশ চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছিল সিআইডি। সাত বছর ধরে খুনের অভিযোগ বয়ে যেতে হয়েছে তাঁকে। দীর্ঘ শুনানি প্রক্রিয়ার পর অবশেষে আজ, প্রায় ছয় বছর পর জেল থেকে ছাড়া পেলেন তিনি।
আজ আদালত বেকসুর খালাস করে দেওয়ার পর একপ্রকার আবেগতাড়িত হয়ে পড়লেন বর্ধমান জেলা পরিষদের প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ বিকাশ চৌধুরী। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই যে তাঁকে খুনের মিথ্যা অভিযোগে এতদিন জেলে থাকতে হল, সে কথাও ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিলেন তিনি। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘আমার সব হারিয়ে গিয়েছে। এই দল আমার সব কেড়ে নিয়েছে।’ যদিও পরক্ষণেই সেই মন্তব্য থেকে সরে গিয়ে বলেন, দলের ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে চাননি। বিকাশ চৌধুরী বলেন,’দীর্ঘ সাত বছরের লড়াইয়ের অবসান হল। সত্যের জয় হল।’ তবে তাঁকে যে ফাঁসানো হয়েছিল, সে কথা বলতে দ্বিধা করছেন না তিনি। কিন্তু কে ফাঁসিয়েছে, তা খোলসা করতে চান না সদ্য বেকসুর খালাস হওয়া এই নেতা। শুধু বললেন, ‘ও কেন কাদা দিল আমার সাদা কাপড়ে।’ কাকে বলতে চাইছেন তিনি? সেই প্রশ্ন শুনেই সঙ্গে সঙ্গে উত্তর, ‘আপনারা বুঝে নিন।’