তাঁর রায়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতেন চাকরিপ্রার্থীরা। বিগত দু’বছর ধরে একাধিক দুর্নীতি মামলার গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছিলেন তিনি। হয়ে উঠেছিলেন ‘ভগবান’ । প্রাক্তন সেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কেই তমলুক লোকসভা আসনে প্রার্থী করে চমকে দিয়েছিল পদ্ম শিবির। রাজ্যে যখন বিজেপি-র একাধিক তাবড় নেতা সবুজ ঝড়ে ঘায়েল হয়ে গিয়েছেন সেই সময় ‘অধিকারী গড়’ হিসাবে পরিচিত তমলুক আসন বাঁচিয়ে রাখলেন প্রাক্তন বিচারপতি।
কত ভোট পেয়েছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়?
নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রাপ্ত ভোট ৭,৬৫,৫৮৪। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্য পেয়েছেন ৬,৪৭,৮৫১ ভোট।
কীভাবে উত্থান অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের?
হাজরা ল কলেজে পড়া শুরু তাঁর। এরপর উত্তর দিনাজপুর জেলার পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিসের ‘এ’ গ্রেডের অফিসার হিসেবে। তবে সেই চাকরি থেকে পদত্যাগ করার পর কলকাতা হাইকোর্টে অধ্যয়ন শুরু করেন। এরপর প্রথমে অতিরিক্ত বিচারপতি ও পরে স্থায়ী বিচারপতি হিসাবে নিযুক্ত হন তিনি।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-র বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। এছাড়ও নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত একাধিক মামলার রায় দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর একাধিক পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছিল শিরোনামে। তবে বিচারপতি থাকাকালীন তাঁকে বিতর্কও কম হয়নি।
এরপর চলতি বছরের মার্চ মাসে হঠাৎই বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা সংবাদ মাধ্যমে জানান। আর যেমন কথা তেমন কাজ। ইস্তফা দেওয়ার পরই শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে বিজেপি-তে যোগদান করেন। রাজনীতির ময়দানে নামার প্রথম দিনই শাসকদলের উদ্দেশ্যে ছুড়ে দেন চ্যালেঞ্জ। ‘লড়াইয়ের ময়দানে দেখা হবে’ বলেও কটাক্ষ করতে দেখা যায় তাঁকে।
তাঁর অভিযোগ ছিল, আদালতে থাকাকালীন একাধিকবার তাঁকে বিভিন্ন কটাক্ষের শিকার হতে হয়েছে তৃণমূলের পক্ষ থেকে। তাঁর উদ্দেশে কখনও কখনও ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করা হয়েছে। কটুকথা বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ‘চ্যালেঞ্জের’ মুখে তাঁকে ফেলা হয়েছে। বলা হয়েছে, মাঠে নেমে যেন তিনি কথা বলেন। এরপর তৃণমূলকে ধন্যবাদ জানিয়ে কার্যত ‘লড়াইয়ে’ নামেন অভিজিৎ। তবে ময়দানে নামার পর তাঁকেও কিন্তু শুনতে হয়েছে ‘চোর’ স্লোগান। পড়তে হয়েছে চাকরিহারাদের বিক্ষোভের মুখে।
অপরদিকে, তৃণমূলও অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দৌড়’ থামাতে তথা অধিকারী গড় দখল করতে ভরসা রেখেছিল যুবনেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যের উপর। তরুণ, স্বচ্ছ এই যুবনেতা হয়ত ঘাসফুল ফোটাতে পারবে ভেবেছিল শাসকদল। লড়াইও দিয়েছেন দেবাংশু। কিন্তু ফলাফল বলল অন্য কথা। প্রায় ৭৭ হাজার ভোটের মার্জিনে পরাজিত হলেন যুবনেতা। অভিজিৎ জিতলেন ৭ লক্ষের অধিক ভোটে।