পূর্ব মেদিনীপুর: স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে না, দরকার নেই শারীরিক দূরত্ববিধির। এমনকী মাস্ক খুলে গলায় মাদুলি হলেও চাপ নেই। একটা মাদুলিই মুশকিল আসান। কাছে ঘেঁষবে না করোনাভাইরাস (Coronavirus)! এভাবেই পনেরো হাজারি মাদুলি বেচে ভাল ব্যবসা জমিয়েছিলেন মাদুলিবাবা। তবে সোমবার প্রশাসনের নজরে আসতেই সব শেষ। আপাতত নিখোঁজ তিনি।
মাত্র ১৫ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। একটা মাদুলি কিনলেই ঘেঁষতে পারবে না করোনা। সঙ্গে অবশ্য আর কিছু উপাচার পালন করতে হবে। এমনই দাবি নিয়ে রীতিমতো ব্যবসা ফেঁদে বসেছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের পার্শ্ববর্তী সুতাহাটার রামচন্দ্রপুরের বাসিন্দা সৈয়দ আব্দুল কাদের (৭৭)। মাদুলিবাবা পরিচয়ে যিনি রীতিমতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন কলকাতা থেকে শহরতলী ও গ্রামগঞ্জ এলাকা।
মাদুলিবাবার দাবি, “আমি হলফ করে বলতে পারি, করোনা কোনও ভাইরাস ঘটিত রোগ নয়, এটা আল্লাহ্-র গজব। আমার মাদুলিতেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি সম্ভব। ইতিমধ্যে কলকাতা, বাটানগর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরের বহু মানুষ এই মাদুলি নিয়েছেন। তাঁরা সকলেই সুস্থ আছেন”।
ব্য়বসা ফাঁদতে মাদুলিবাবার বিজ্ঞাপনী চমক ছিল, “ছোট্ট ছেলে থেকে পরিবারের সদস্যের জীবন আগে নাকি ১৫ হাজার টাকার মূল্য বেশি? আমি হলফ করে বলছি, এই মাদুলি নেওয়ার পর জলপড়া, তেলপড়া এবং করোনা বিতাড়নের কিছু মন্ত্র লেখা কাগজ দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখলেই করোনা ভ্যানিশ হয়ে যাবে”।
এই ব্যবসার কথা ছড়িয়ে পড়তেই সোচ্চার হন জেলার চিকিৎসক মহল থেকে বিজ্ঞান মঞ্চ। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির সম্পাদক নকুল চন্দ্র ঘাঁটি বলেন, “মাস্ক পরা, একটানা চিকিৎসা, ভ্যাকসিন নেওয়ার মতো গাইডলাইন মেনে চললে করোনা নিরাময় সম্ভব। মাদুলি বা তুকতাক দিয়ে এই মারণ রোগের বিরুদ্ধে লড়াই অসম্ভব। মানুষের অন্ধবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি এমন কারবার চালাচ্ছে। প্রশাসনের উচিত এখনই এই কারবার বন্ধ করা। অন্যথায় বহু মানুষ এই প্রতারণার শিকার হয়ে যাবেন”।
মাদুলিবাবার এহেন কারবারের খবর ছড়িয়ে পড়তে খুব বেশি সময় লাগেনি। তবে দেরিতে হলেও টনক নড়েছে প্রশাসনের। তারপরেই মাদুলিবাবার সন্ধানে ময়দানে নামে সুতাহাটা থানার পুলিশ। তবে সোমবার সকাল থেকে বারবার তাঁর বাড়িতে গিয়েও দেখা মেলেনি মাদুলিবাবার। তাঁর পরিবারের দাবি, বিশেষ কাজে উনি বাইরে গিয়েছেন। তবে কাজটা কোথায় তাঁরা কেউ জানেন না। যদিও পুলিশ জানাচ্ছে মাদুলিবাবার খোঁজ চলছে।
আরও পড়ুন: Asok Bhattacharya: বুদ্ধদেব নিয়ে নানা অজানা তথ্য, নিজের লেখা বই প্রকাশ করলেন অশোক ভট্টাচার্য