Fraud Case: ৪০ লক্ষ টাকা পেতে ৫ বছরে ১৭ লক্ষ জমা, সর্বস্ব খুইয়ে মর্মান্তিক পথ বাছলেন প্রৌঢ়

Purba Medinipur: পাঁচ বছরে ধাপে-ধাপে সব টাকা দিয়েছিলেন তিনি।

Fraud Case: ৪০ লক্ষ টাকা পেতে ৫ বছরে ১৭ লক্ষ জমা, সর্বস্ব খুইয়ে মর্মান্তিক পথ বাছলেন প্রৌঢ়
মৃত শ্রীকান্ত ওঝা (নিজস্ব ছবি)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 23, 2022 | 8:29 PM

পূর্ব মেদিনীপুর: রাজ্য তথা দেশ জুড়েই চলছে সাইবার অপরাধ। কোথাও সিমের কেওয়াসি আবার কখনও  এটিএম দুর্নীতি। প্রায় সব ক্ষেত্রেই চলছে অনলাইনে জালিয়াতির বড়সড় চক্র। যার জেরে ক্ষতির মুখে পড়ছে সাধারণ গরিব, মধ্যবিত্ত মানুষ।

রইল ঘটনার বিবরণ

একটি ফোন এসেছিল পূর্ব মেদিনীপুরের শ্রীকান্ত ওঝার কাছে। ফোনের ওপার থেকে বলা হয়, ‘লটারিতে ৪০ লক্ষ টাকা জিতেছেন আপনি। আর এই টাকা পেতে গেলে আপনাকে আয়কর বাবদ দেড় লক্ষ টাকা দিতে হবে।’ সেই দেড় লক্ষ টাকা দিয়ে শুরু করেছিলেন শ্রীকান্ত ওঝা। তারপর আরও দেড় লক্ষ, তারপর আরও। ভেবেছিলেন টাকা পেয়ে চমকে দেবেন পরিবারের সবাইকে।

মেয়ের বিয়ে, ছেলেকে একটা ব্যবসাও করে দেবেন। তাই বাড়ির কাউকেই কিছু জানাননি। আর এভাবেই গত ৫ বছর ধরে মোট ১৭লক্ষ টাকা দেওয়ার পর বুঝতে পেরেছেন ওই টাকা পাওয়ার আশা নেই। আর যখন বুঝলেন তখন সব শেষ। ততদিনে চলে গিয়েছে সমস্ত পুঁজি। বাজারে ধারদেনা ছাড়াও চলে গিয়েছে ৭৩ ডেসিমেল জমি। স্ত্রী আর ছেলে মেয়েকে পথে বসিয়েছেন বুঝতে পেরে শেষ অবধি আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন বছর পঞ্চান্নের শ্রীকান্ত ওঝা।

পুলিশ সূত্রের খবর, সকালে পূর্ব মেদিনীপুরের মারিশদা থানার মশাগাঁ গ্রামে নিজের বাড়ির পাশের একটি গাছ থেকে লাইলন দড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায় দেহ মিলেছে শ্রীকান্তর। তাঁর একটি স্টেশনারি দোকান ছিল। একটি সুইসাইড নোটও উদ্ধার হয়েছে তাঁর কাছ থেকে। আর সেখান থেকেই প্রকাশ্যে এসেছে সাইবার ক্রাইমের এই প্রতারণা পদ্ধতি।

বছর পাঁচেক আগে শ্রীকান্তবাবুর কাছে ফোন আসে। যেখান থেকে তাঁকে প্রথম লটারি জেতার খবর দেওয়া হয়। এরপর কখনও ফোন পে, কখনও গুগুল পে আবার কখনও পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের কলকাতার একটি ব্রাঞ্চে টাকা পাঠিয়েছেন তিনি। কবে কোন নম্বরে ফোন পে বা কোন আ্যকাউন্টে টাকা পাঠিয়েছেন সেই বিবরণও পুঙ্খাপুঙ্খ বিবরণ ও হিসাব দিয়ে গেছেন শ্রীকান্ত।

ওই আত্মহত্যা লিপি থেকে কলকাতার ওই ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চে ১৫ জনের আ্যকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। ওই ১৫টি আ্যকাউন্ট ও ১৫জন ব্যক্তির নাম পাওয়া গিয়েছে। অন্যদিকে প্রায় ১৪টি ফোন নম্বর পাওয়া গিয়েছে যে নম্বরে ফোন পে অথবা গুগুল পে পদ্ধতিতে টাকা পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও মোট ৮টি ফোন নম্বর পাওয়া গিয়েছে যেখান থেকে ফোন করে টাকার জন্য তাগাদা দেওয়া হত। পুলিশ প্রাথমিকভাবে এই সব তথ্য জোগাড় করে তা পূর্ব মেদিনীপুর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চে পাঠিয়েছে। পুলিশের ধারণা ওই সুইসাইড নোটে লিখে রাখা বিবরণ এই তদন্তে বড় সহায়ক হবে।

শ্রীকান্ত তাঁর সুইসাইড নোটে আরও বলে গিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের আর কোনও মানুষের যেন এমন অবস্থা না হয়। ‘ওদের প্রতারণা ধরার পর আমি যখন ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিলাম তখন ওরা আমাকে বলেছিল, বাংলার বুকে দাঁড়িয়েই আমরা এই কারবার করছি। কেউ আমাদের একটা চুলও সোজা করতে পারবে না।’ তবে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাওয়ার পরও পরিবারের কাউকে কিছুই বুঝতে দেননি শ্রীকান্ত বাবু।

আরও পড়ুন: Percel Blast Update: কথায় একাধিক অসঙ্গতি! গ্রেফতার পার্সেল সরবরাহকারী সেই টোটোচালক