পূর্ব বর্ধমান: বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা গিয়েছিলেন তাঁদের বাড়িতে। শঙ্খ, উলুধ্বনিতে তাঁকে বরণ করে নিয়েছিলেন চাষি পরিবারের সদস্যরা। নাড্ডার গেরুয়া ব্যাগে উপচে দিয়েছিলেন পেল্লায় কুমড়ো, চাল, সবজিতে। তাঁদের বাড়ির দেওয়ালে ‘কৃষক সুরক্ষা অভিযান’-এর স্টিকার সাঁটিয়েছিলেন নাড্ডা। আর মাটির মানুষগুলোকে সঙ্গে নিয়ে ক্যামেরার সামনে বলেছিলেন, “ঈশ্বরকে সামনে দেখলে যেমন চমকে যেতাম, এদিনও তেমন চমকালাম!” ২৪ ঘণ্টা এখনও কাটেনি। এবার পূর্ব বর্ধমানের (Purbo Bardhaman) কাটোয়ার মুস্থূলি গ্রামের সেই পাঁচ কৃষক পরিবারের সদস্যরাই আজ, রবিবার দেখা করলেন কাটোয়ার তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে।
তৃণমূল বিধায়ক নাড্ডার আসার আগেই দাবি করেছিলেন, “যে পাঁচ কৃষক পরিবার থেকে জেপি নাড্ডা অন্ন সংগ্রহ করবেন, তাঁরা প্রত্যেকেই তৃণমূলের সমর্থক।” গোটা এলাকাতেই যে তৃণমূলের রাশ সুদৃঢ়, তাও বারবার দাবি করেছেন বিধায়ক। এদিন সেই পাঁচ পরিবারের সদস্য ও তৃণমূল বিধায়কের সাক্ষাতের পর রাজনৈতিক বিতর্ক তুঙ্গে। তৃণমূলের তরফে বলা হয়েছে, নাড্ডার এই ‘কর্মসূচি’ ঘিরে যে ভুলভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, তা মেটাতেই এই সাক্ষাৎ। যদিও বিজেপির বক্তব্য, ওই পাঁচ কৃষক বিজেপির সমর্থক। তাঁদের উপর চাপ সৃষ্টি করে গ্রাম থেকে তুলে নিয়ে গেছে তৃণমূল।
তৃণমূল বিধায়ক বলেন, “পাঁচ কৃষক বাংলার সংস্কৃতি মেনে ভিক্ষা দিয়েছে। সকলে তৃণমূলের সমর্থক।” কৃষক মথুরা মণ্ডল, গৌতম মণ্ডল এদিন তৃণমূল কার্যালয়ে স্বীকার করেন, তাঁরা তৃণমূলের সমর্থক। তবে যে কৃষক পরিবারে নাড্ডা মধ্যাহ্নভোজ সেরেছিলেন, তাঁকে এদিন তৃণমূল কার্যালয়ে দেখা যায়নি।
উল্লেখ্য, এর আগেও এই ধরনের ঘটনা দেখা গিয়েছে। বঙ্গ সফরে এসে মধ্যাহ্নভোজ করার রেওয়াজ অমিত শাহই শুরু করেছিলেন। সপ্তাহ তিনেক আগে বোলপুরের বাসুদেব বাউলের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আর তিনি ফিরতেই বাড়িতে যান বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। বাসুদেবের মেয়ের ডিএড-এর ব্যবস্থা করেন তিনি।
আরও পড়ুন: শুভেন্দুর রোড শো-র মধ্যেই ঝড়ের গতিতে ঢুকে পড়ল ঘাস ফুল পতাকা লাগানো গাড়ি, তারপর…
রাজনৈতিক কুশীলবরা বলছেন, বঙ্গে এখন বাউল কিংবা চাষি বা মতুয়াদের নিয়ে নতুন করে রাজনীতি শুরু হয়েছে। এ রাজনীতি ভোটের ঝুলি পূর্ণ করতে দলে টানার লড়াই। সেক্ষেত্রে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বরা কখন বাউল বাড়িতে কখনও বা মতুয়া কিংবা চাষি পরিবারে মধ্যাহ্নভোজ করছেন। আর তাঁরা ফিরতেই তাঁদের বাড়িতে হাজির হচ্ছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। দড়ি টানাটানির এই খেলায় গ্রামের সাধারণ মানুষরা হচ্ছেন নাজেহাল, যা নিয়ে বিরক্ত রাজনৈতিক সচেতকদেরই একাংশ।