AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

‘হোক সুন্দর, তবু ভয়ঙ্কর!’ মেক্সিকোর ‘রাক্ষুসে কচ্ছপ’ পাওয়া গেল জয়নগরে

প্রাণীবিশারদদের মতে, মিডল জুরাসিক পিরিয়ডের বিশেষ প্রজাতি 'টেস্টুডিয়ানস' থেকেই এরা বিবর্তিত হয়ে আজকের রেড ইয়ারড স্লাইডারে অভিযোজিত। সাধারণত, পুকুর, ছোট জলাশয়  এবং স্বাদু জলেই দেখা মেলে এই কচ্ছপ প্রজাতিটির।

'হোক সুন্দর, তবু ভয়ঙ্কর!' মেক্সিকোর 'রাক্ষুসে কচ্ছপ' পাওয়া গেল জয়নগরে
নিজস্ব চিত্র
| Updated on: Jun 24, 2021 | 12:06 AM
Share

দক্ষিণ ২৪ পরগনা: গায়ে তার হরেক রঙের বাহার। জ্বলজ্বলে সোনালি রঙে মনোমুগ্ধকর এই সরীসৃপ। পোষ্য হিসেবেও সুখ্য়াতি আছে এই কচ্ছপের। আদতে এর নাম ‘রাক্ষুসে কচ্ছপ’। নিবাস মেক্সিকো, দক্ষিণ আমেরিকা এবং মিসিপ্পি নদীতে। সেই ‘রাক্ষুসে কচ্ছপের’ হদিশ পাওয়া গেল জয়নগরে। বুধবার সকালে, জয়নগর থানার চালতাবেড়িয়া হাই স্কুলের পাশে এই বিরল প্রজাতির কচ্ছপটিকে দেখতে পান গ্রামবাসীরা। তৎক্ষণাৎ, সেই ‘বিরাট বপু’ কচ্ছপটিকে ধরে নিয়ে গিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন তাঁরা।

পুলিশ ও বনদফতর সূত্রে খবর, উদ্ধার হওয়া ‘বিরাট বপু’ কচ্ছপটির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন বারুইপুর রেঞ্জের বনকর্মীরা। রেঞ্জার অফিসার স্বপন ভাণ্ডারি জানিয়েছেন, এই বৃহৎ বপু রাক্ষুসে কচ্ছপটি ক্ষতিকারক। এই কচ্ছপ যে এলাকায় থাকে সেখানে মাছ বা অন্যান্য জলজ প্রাণী বাঁচতে পারে না। উদ্ধার হওয়া কচ্ছপটির বয়স ৫থেকে ৬ মাস। জানা গিয়েছে, আপাতত কচ্ছপটিকে কিছুদিন পর্যবেক্ষণে রাখার পর ঝড়খালি বন্যপ্রাণী উদ্য়ানে ছেড়ে দেওয়া হবে।

জয়নগরে কী করে এই ‘রাক্ষুসে কচ্ছপ’ এল তা নিয়ে রীতিমতো সংশয়ী প্রাণীবিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে পরিবেশের ক্ষতির দিকটিও ভাবাচ্ছে তাঁদের। কেন ক্ষতিকারক এই রাক্ষুসে কচ্ছপ? পরিবেশবিদ ও প্রাণী বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পৃথিবীতে মোট যে সাতটি প্রজাতির কচ্ছপ আছে তার মধ্যে সর্বাধিক ক্ষতিকর এই ‘জায়ান্ট টরটোয়েস’ বা ‘রাক্ষুসে কচ্ছপ’। বিশ্ব জুড়ে ‘রেড ইয়ারড স্লাইডার’ (Red Eared Slider) নামে বিখ্যাত এই কচ্ছপটির বিজ্ঞানসম্মত নাম ‘ট্রেকিমিস স্ক্রিপ্টা এলিগেন্স’ (Trachemys scripta elegans) । এই প্রজাতির কচ্ছপের কানের পাশে উজ্জ্বল লাল চক্রাকার বা আয়তাকার দাগের জন্য এদের ‘রেড ইয়ারড স্লাইডার’ বলা হয়। শিশু কচ্ছপগুলি রঙবেরঙের হয়ে থাকে বলে পোষ্য হিসেবে এদের খ্যাতি  আছে। আমেরিকা বা মেক্সিকোতে পোষ্য হিসেবে অনেকেই এই প্রজাতির কচ্ছপ কিনে আনেন।

প্রাণীবিশারদদের মতে, মিডল জুরাসিক পিরিয়ডের বিশেষ প্রজাতি ‘টেস্টুডিয়ানস’ থেকেই এরা বিবর্তিত হয়ে আজকের রেড ইয়ারড স্লাইডারে অভিযোজিত। সাধারণত, পুকুর, ছোট জলাশয়  এবং স্বাদু জলেই দেখা মেলে এই কচ্ছপ প্রজাতিটির। খুব দ্রুত যেকোনো পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে অভিযোজিত হওয়া ও বংশবিস্তার করার বিশেষ ক্ষমতা রাখে এই কচ্ছপ। শুধু তাই নয়, সামুদ্রিক কচ্ছপের তুলনায় খুব দ্রুত বৃ্দ্ধি ঘটে এদের। এই কচ্ছপের আরও একটি উপজাতি হল ‘স্ন্যাপিং টার্টল’ নামে পরিচিত। এই প্রজাতির কচ্ছপগুলি ওজনে প্রায় ১০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু কেন ক্ষতিকর এই বিশেষ প্রজাতির কচ্ছপ?

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিউন ফর কনজারভেশন অব নেচার বা আইইউসিএন-র (IUCN) বিশ্বের ১০০টি ‘অনিষ্টকারী বহিরাগত প্রজাতি’র তালিকায় রয়েছে রেড ইয়ারড স্লাইডার। এই রাক্ষুসে কচ্ছপগুলি দ্রুতহারে ছোট মাছ, পোকামাকড় এবং কাদা থেকে কেঁচো, শামুক ইত্যাদি খেয়ে বাঁচে। ফলে নষ্ট হয় অনেক জৈব পদার্থ। ক্ষতি হয় বাস্তুতন্ত্রের যা মূলত আঘাত হানতে পারও জীব বৈচিত্র্যেও। পাশাপাশি, এই কচ্ছপ সরীসৃপ প্রাণীদের রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া সালমোনেলার অন্যতম বাহক। এই বিশেষ ব্যাকটেরিয়া কেবল প্রাণীদের ক্ষতি করে না, ক্ষতি করে মানুষেরও। সাধারণত, ভালভাবে রান্না না করা মাংস, কাঁচা ডিম, দুধ এবং অন্য দুগ্ধজাত পণ্যে পাওয়া যায় এই বিশেষ ব্যাকটেরিয়াটি। এটি দেহে প্রবেশ করার ১২ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আক্রান্ত করে। উপসর্গের মধ্যে রয়েছে ডায়রিয়া, পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি এবং জ্বর। এই ব্যাকটেরিয়ার দীর্ঘসূত্র প্রভাবে মানব শরীরে বিপাকীয় কোষের ক্ষতি হয়, যা আদতে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

বঙ্গে প্রথম রেড ইয়ারড স্লাইডারের দেখা মেলে ২০১৫ সালে রাজারহাটের একটি জলাশয়ে। পরে ২০২০ সালে রবীন্দ্র সরোবরে এই ‘রাক্ষুসে কচ্ছপের’ দেখা মেলে। ভারতে সর্বপ্রথম কেরলের কলথোড খালে দেখা মেলে এই কচ্ছপের। কেরল ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট কচ্ছপটিকে উদ্ধার করে ও পর্যবেক্ষণে রাখে। পশ্চিমবঙ্গে এই নিয়ে তৃতীয়বার দেখা মিলল রেড ইয়ারড স্লাইডার বা রাক্ষুসে কচ্ছপের।

আরও পড়ুন: ভক্তদের জন্য সুখবর! বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকেই খুলছে দক্ষিণেশ্বর মন্দির, মিলবে মায়ের দর্শনও