Canning Polio: কুর্নিস! হাঁড়িতে ভাসিয়ে ১৫ দিনের শিশুকে আনলেন বাবা, বুক সমান জলে পোলিও খাওয়ালেন ‘আশাকর্মীদিদি’

Canning Polio: আশাকর্মী সোনালি প্রধান ও নমিতা প্রধান ততক্ষণে ভ্যালায় করে এগিয়ে এসেছেন পোলিও খাওয়াতে।

Canning Polio: কুর্নিস! হাঁড়িতে ভাসিয়ে ১৫ দিনের শিশুকে আনলেন বাবা, বুক সমান জলে পোলিও খাওয়ালেন 'আশাকর্মীদিদি'
ক্যানিংয়ে হাঁড়িতে করে শিশুকে পোলিও খাওয়াতে আনলেন বাবা (নিজস্ব চিত্র)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 27, 2021 | 12:56 PM

দক্ষিণ ২৪ পরগনা: একটা ছবি। আসলে বলা ভালো দুটো। যে ছবি ভরসা জোগায়। দিশা দেখায় অন্ধকারের মধ্যে আলোর। মনে মনে গুনগুন করতে ইচ্ছা হয়, ‘হাম হোঙ্গে কামিয়াব একদিন’ কিংবা বলতে শেখায় ‘লাভ ইউ জিন্দেগি…’

প্রথম ছবি, একটা বড় মুখওয়ালা হাঁড়ির মধ্যে কাপড় প্যাঁচানো অবস্থায় শুয়ে ফুটফুটে এক শিশু। জলে ভাসছে হাঁড়ি। আরেক ছবি, দুটো-তিনটে চ্যালা কাঠে পেরেক পুঁতে জুড়ে একটা ভেলা গোছের তৈরি করা। আর ছাতার হ্যান্ডেল নিয়ে জল কাটিয়ে সেই ভেলা ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া। তাতে বাক্সবন্দি ‘জীবনবিন্দু’ আর সঙ্গে তার বাহক-রক্ষক। গলা যতটা উঁচুতে তোলা সম্ভব, তাতে কসুর করেননি তিনি। ‘পোলিয়ো (Polio) খাওয়ানোর বাচ্চা থাকলে নিয়ে এসো গো…।’ এতক্ষণে হয়তো কিছুটা স্পষ্ট হল ব্যাপারটা! স্বাস্থ্যকর্মী ভ্যালায় ভেসে এসেছেন পোলিও খাওয়াতে। আর কোমর সমান জলের মধ্যে নিজের সদ্যোজাতকে পোলিও খাওয়াতে হাঁড়িতে ভরেই নিয়ে এসেছেন নিজামুদ্দিন। ২৬ তারিখ, পোলিও রোববারে ক্যানিং ২ নম্বরের এই ছবি আজ ভাইরাল। ঘুরছে মোবাইলে, আপ্লুত হচ্ছেন নেটাগরিকরা আর কুর্নিস কুড়োচ্ছেন সেই স্বাস্থ্যকর্মী আর সন্তানের জনক।

ক্যানিং (Canning) দুই নম্বর ব্লকের সিংহেশ্বর সাবসেন্টার গত কয়েকদিন ধরেই প্লাবিত। কোমর সমান জলের তলায় বিস্তীর্ণ গ্রাম। বহু মাটির বাড়ির প্রায় ছাদ সমান জল। সেই গ্রামেরই বাসিন্দা পেশায় ব্যাগের কারিগর নিজামুদ্দিন। কিছু দিন আগে তাঁর কোলে এসেছে দ্বিতীয় সন্তান। বড় ছেলের বয়স আড়াই বছর।

রবিবার পোলিও খাওয়ার দিন ছিল। ঘরে বসেই আশাকর্মী দিদিদের ডাক শুনছিলেন। কিন্তু দুই সন্তানকে কোলে নিয়ে যাবেনও বা কীভাবে। বুদ্ধি আসে মাথায়। ঘরে ছিল বড় অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি। আচ্ছামতো কাপড় পেঁচিয়ে সেই হাঁড়িয়ে শুইয়ে দেন ছোটটাকে। আর পাশের বাড়ি থেকে ডাক দেন বন্ধুকে। তাঁর কাঁধে চাপিয়ে দেন ছোটটাকে। হাঁড়ি ভাসিয়ে দেন জলে। জল কাটিয়ে পৌঁছে যান আশাকর্মী দিদিদের কাছে।

আশাকর্মী সোনালি প্রধান ও নমিতা প্রধান ততক্ষণে ভেলায় করে এগিয়ে এসেছেন পোলিও খাওয়াতে। কিন্তু তাঁরা তাঁদের কাজ করেছেন। মনের জোর আর সততার সঙ্গে। আর নিজামুদ্দিন, এক অত্যন্ত দেহাতি বাবা অটুট ছিলেন তাঁর কর্তব্যজ্ঞানে। তাঁরা ভাবেননি আজ ভাইরাল হবে এই ছবি। শুধু কাজটাই করে গিয়েছেন। কিন্তু আজ সেই ছবিকেই কুর্নিস জানাচ্ছে গোটা সমাজ।

বছর সাতাশের নিজামুদ্দিনের সহজ সরল কথা, “আমার বউয়ের তো সাহসই নেই। আর সাহস থাকলেও ক্ষমতা নেই এখন। আমারই বুক সমান জল। ১৫ দিনের বাচ্চাটাকে কোলে ওইভাবে জলের মধ্যে আনতে ভয় হচ্ছিল। তাই হাঁড়িতে আনলাম। আর বড়টাকে বন্ধুর কাঁধে চাপিয়ে দিয়েছি।” আর স্বাস্থ্যকর্মী দিদিদের কথায়, “বাচ্চাগুলোকে পোলিও না খাওয়ালে তো চলত না। হাঁটু সমান জল অবধি গিয়েছিলাম। বাকি যতটা গলার জোর হয় চিত্কার করে ডাকি। অনেকেই আসে। এরপর জলে আর যাওয়া যেত না। পোলিও বাক্সটাই ডুবে যেত…”

কি ঠিক এই কথাটাই বলতে ইচ্ছা হচ্ছে না? ‘হাম হোঙ্গে কামিয়াব একদিন’… ভাইরাল ছবি ভরসা জোগায় সমাজের বুকে। ক্যানিং ২ বিডিও প্রণব মণ্ডল বলেন, “১৬ টি গ্রাম পূর্ণ জলমগ্ন, ১৪ টি গ্রাম আংশিক জলমগ্ন। স্বাস্থ্যদফতরের কর্মীরা সবাই মানুষের কাছে পৌঁছেছেন। দুর্যোগকে জয় করেছেন তাঁরা।”

আরও পড়ুন: Unknown Fever: অজানা জ্বরের বলি ২৫ দিনের শিশু, সেপ্টিসেমিয়ায় মৃত আরও ১!