এক রাতেই সিদ্ধান্ত মমতার! বজ্রাঘাতে মৃতদের পরিবারের পাশে সরকার, ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রদত্ত ২ লক্ষ টাকা

লক্ষ্যণীয়, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পর থেকেই বিশেষ তৎপর হয়েছে প্রশাসন। দুর্ঘটনার ফলে কারও জীবনহানি ঘটলেই সেখানে দ্রুত পৌঁছনোর চেষ্টা করছে প্রশাসন। তুলে দেওয়া হচ্ছে ক্ষতিপূরণও। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আমফান দুর্নীতির খানিকটা যেন সামাল দিতে আর জনগণের কাছে সরকারকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে কার্যত মরিয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেস।

এক রাতেই সিদ্ধান্ত মমতার! বজ্রাঘাতে মৃতদের পরিবারের পাশে সরকার, ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রদত্ত ২ লক্ষ টাকা
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Jun 07, 2021 | 1:02 AM

পশ্চিমবঙ্গ: ঘূ্র্ণিঝড় ইয়াসের পরেই ফের উপকূলে সৃষ্টি হতে চলেছে নিম্নচাপ। তার পূর্বাভাস্বরূপ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় শনিবার বিকেল থেকে শুরু হয় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিপাত। একইদিনে, তিন জেলায় বজ্রাঘাতে মারা যান ৯ জন, জখম হন বেশ কয়েকজন। শনিবার রাতে, সেই খবর পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) ওই রাতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে জানান,মৃতদের পরিবারের হাতে ক্ষতিপূরণ তুলে দেওয়া হবে। সেইমতো, রবিবার, জেলায় জেলায় মৃতদের পরিবারের হাতে ক্ষতিপূরণ তুলে দেন রাজ্যের মন্ত্রীরা।

মুর্শিদাবাদে, দৌতলাবাদের ছয়ঘড়ি এলাকার বাসিন্দা বাষট্টি বছরের ইনারানি দাস শনিবার বজ্রাঘাতে মারা যান। রবিবার, মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে পরিজনদের হাতে ২ লক্ষ টাকার চেক ও সমব্যাথি প্রকল্পের ২ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে তুলে দেন রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত সাহা। উপস্থিত ছিলেন ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরাও। এদিন, মন্ত্রী (State Minister) সুব্রত সাহা বলেন, “মাঝে মাঝেই বাজ পড়ে এই ধরনের মৃত্য়ু ঘটছে। শুধু দৌলতাবাদে নয়, ভাগলপুর-সহ একাধিক এলাকায় মাঝে মধ্য়েই এমন ঘটনার খবর পাচ্ছি। মুখ্যমন্ত্রী এই খবর গতকাল রাতে শোনার পরেই দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন যে মৃতদের পরিবারকে সাহায্য করতে হবে। যদিও, টাকা দিয়ে মানুষকে ফিরিয়ে আনা যায়না। তবে এই পরিস্থিতিতে এই সাহায্যটুকু করেই আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি। পাশাপাশি, গ্রামবাসীদের সতর্ক করা হচ্ছে, এই ধরনের আবহাওয়ায় যতদূর সম্ভব যাতে তাঁরা বাড়িতে থাকেন। রাস্তায় থাকলেও যেন তাঁরা নিরাপদস্থানে আশ্রয় নেন। সরকার মানুষের পাশে আছে।”

হুগলিতে, শনিবার বাজ পড়ে মারা যান চারজন। পাণ্ডুয়ায় গোবিন্দ ঘোষ এদিন বৃষ্টি থেকে বাঁচতে একটি গাছের নীচে আশ্রয় নেন। তখনই তাঁর উপর বাজ পড়ে। অন্যদিকে, সদানন্দ ঘোষ মাঠ থেকে ফিরছিলেন, সেইসময় বজ্রাঘাতে মারা যান তিনি। ধনিয়াখালির দাদপুরে, বছর একুশের আমিনুর রহমান বন্ধুদের সঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। সেই সময়ে বজ্রাঘাতে মারা যান তিনিও। আহত হন আরও দুজন। তাঁরা চূঁচূড়া সদর হাসপাতালে ভর্তি। ভাস্তারার বাসিন্দা শেখ মনসুর মাঠ থেকে গোরু আনতে গিয়ে গাছ তলায় দাঁড়িয়েছিলেন। সেই সময়ে বাজ পড়ে মৃত্যু হয় তাঁর। রবিবার, পাণ্ডুয়া বিডিও অফিসে মৃতদের পরিবারের হাতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকার চেক-সহ খাদ্য ও ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। উপস্থিত ছিলেন, শ্রমমন্ত্রী বেচারাম মান্না ,হুগলি জেলা শাসক পি দীপাপ প্রিয়া, হুগলি গ্রামীণ পুলিশ সুপার অমন্দীপ এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিবেশ মন্ত্রী তথা পাণ্ডুয়ার বিধায়ক রত্না দে নাগ, পাণ্ডুয়ার ব্লক আধিকারিক স্বাতী চক্রবর্তী। এদিন, শ্রমমন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, “অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। শনিবার রাতেই খবর পেয়ে মুখ্য়মন্ত্রী এক রাতের মধ্য়েই এই সিদ্ধান্ত নেন। তবে, আমাদের মুখ্য়মন্ত্রী এই প্রথম নয়, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আজ তাঁরই নির্দেশে এই সামান্য ক্ষতিপূরণের টাকা মৃতদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হল।”

পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে বজ্রাঘাতে (Thunderstorm) মারা যান চারজন। মৃত রঞ্জিত গোয়ালা,অরূপ বাদ, শম্ভুচরণ দাস ও অধীর মালিক শনিবার নিজেদের ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে বজ্রাঘাতে মারা যান। রঞ্জিত গোয়ালার শ্যালক মনু বাউড়ি গুরুতর জখম হন। রবিবার, চার মৃতের পরিবারের হাতে দুলক্ষ টাকার চেক এবং আহত মনু বাউড়ির পরিবারের হাতে ৫০হাজার চেক তুলে দেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা, জামালপুরের বিধায়ক অলোক মাঝি, জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহমুদ খান। এদিন, মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, “মুখ্য়মন্ত্রীর নির্দেশেই এই পরিবারগুলির হাতে ক্ষতিপূরণ তুলে দেওয়া হল। পরে যদি অন্য কোনও সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তাও সরকারের পক্ষ থেকে করা হবে। সরকার মানুষের পাশে আছে।”

লক্ষ্যণীয়, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পর থেকেই বিশেষ তৎপর হয়েছে প্রশাসন। দুর্ঘটনার ফলে কারও জীবনহানি ঘটলেই সেখানে দ্রুত পৌঁছনোর চেষ্টা করছে প্রশাসন। তুলে দেওয়া হচ্ছে ক্ষতিপূরণও। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আমফান দুর্নীতির খানিকটা যেন সামাল দিতে আর জনগণের কাছে সরকারকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে কার্যত মরিয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেস। ইয়াস মোকাবিলায় সেচ দফতরের কাজে মুখ্য়মন্ত্রীর উষ্মা প্রকাশ থেকে শুরু করে দলীয় বৈঠকে ত্রাণদানকে কেন্দ্র করে বারবার সতর্ক করে দেওয়ার পেছনে আসলে নিজের জমি শক্ত করতে চাইছেন মমতা এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

উল্লেখ্য, এদিনই হুগলি, পূর্ব বর্ধমানে ফের বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয় পাঁচ জনের। গুরুতর জখম একজন। জানা গিয়েছে, পূর্ব বর্ধমানের কালনা ও জামালপুরেই বাজ পড়ে মৃত্যু হয় দুইজনের। কালনায়, সন্ধ্যার পর মাঠে বাঁধা গোরু আনতে গিয়ে বাজ পড়ে মৃত্যু হয় বছর ঊনষাটের বেচারাম সাঁতরার। তাঁকে উদ্ধার করে কালনা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। অন্যদিকে, জামালপুরে মাঠে খেলতে গিয়ে বজ্রাঘাতে মারা যায় মন্দিরা পাখিরা নামে বছর দশের এক নাবালিকা। মৃতার বাড়ি জামালপুরে জ্যোৎশ্রীরাম পঞ্চায়েতের মাঠশিয়ালি গ্রামে। পাশাপাশি, হুগলির পাণ্ডুয়া ও সিঙ্গুরে বজ্রাঘাতে মৃত্যু হল দুইজনের। রবিবার, ঝড়বৃষ্টি চলাকালীন ক্ষেতের কাজ করতে গিয়ে বাজ পড়ে মৃত্যু হয় সাতান্ন বছরের নিধিরাম আদকের। এদিন, সিঙ্গুরের খাসেরভেড়িতে বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয়  দীপা দাস নাম্নী বছর চল্লিশের এক মহিলার। গুরুতর আহত হন তাঁর ছেলে অজয় দাস। অজয়কে চূঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনার খবর পেয়ে আহতকে দেখতে হাসপাতালে যান সিঙ্গুরের বিধায়ক বেচারাম মান্না ও হরিপালের বিধায়ক করবী মান্না।

আরও পড়ুন: দুই জেলায় বজ্রাঘাতে একইদিনে মৃত ৫, আহত ৩! নিম্নচাপের সিঁদুরে মেঘ দেখছে আবহাওয়া দফতর