Indo-China War: বেঁচে ফিরেছিল মাত্র ৬ জন! চিনের কাছে এই যুদ্ধে হেরে গিয়েও জিতেছিল ভারত
Indo-China War: ১২০ জন ভারতীয় সেনার মধ্যে মাত্র ৬ জন বেঁচে ফিরেছিলেন। কিন্তু যুদ্ধে প্রথমবার চিনা সেনাকে পিছু হঠতে হয়েছিল। ভারতীয় সেনা দাবি করেছিল, ১ হাজার ৪০০ চিনা সেনার মধ্যে তেরোশো জনের মৃত্যু হয়। চিন এই দাবি মানেনি।
নয়াদিল্লি: ইতিহাসের একটা চাপা পড়া অধ্যায়। কয়েকটা ফাইল। ৬২ বছর ধরে সেইসব ফাইলে হয়তো প্রচুর ধুলো জমেছে। এতদিন পর, সেই ধুলো সরিয়ে ফাইলের খুঁটিনাটি প্রকাশ্যে আনার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। আর উদ্যোগটা নিয়েছেন ভারতীয় সেনার একদল অবসরপ্রাপ্ত অফিসার ও জওয়ান।
ব্যাটল অফ রেজাংলা – ১৯৬২’র ভারত-চিন যুদ্ধে একমাত্র উজ্বল বিন্দু। একমাত্র লড়াই যেখানে চিনকে হারিয়ে জয় পেয়েছিল ভারত। ১ হাজার ৪০০ চিনা সৈন্যের সঙ্গে সামনে ১২০ জন ভারতীয় সেনা-জওয়ানের লড়াই। লাদাখে, ১৭ হাজার ফিট উপরে টানা ৬-৭ ঘণ্টার অসম লড়াই। এর আগে কখনও এতটা উঁচুতে, বরফঢাকা খাড়াই পাহাড়ে লড়াই হয়নি। দুনিয়ার কোনও দেশ এর আগে রেজাংলার মতো ভৌগলিক পরিস্থিতিতে যুদ্ধ করেনি। ভারতীয় সেনা সেই অসাধ্যসাধন করেছিল।
১২০ জন ভারতীয় সেনার মধ্যে মাত্র ৬ জন বেঁচে ফিরেছিলেন। কিন্তু যুদ্ধে প্রথমবার চিনা সেনাকে পিছু হঠতে হয়েছিল। ভারতীয় সেনা দাবি করেছিল, ১ হাজার ৪০০ চিনা সেনার মধ্যে তেরোশো জনের মৃত্যু হয়। চিন এই দাবি মানেনি। তাঁরা বলেছিল, রেজাংলায় আড়াইশোর কাছাকাছি পিএলএ সদস্যের মৃত্যু হয়। ১৯৬২-র যুদ্ধে চিনের কাছে ভারতকে হারতে হয়েছিল।
কিন্তু, কেন হারতে হয়েছিল? কেন ভারতীয় সেনাকে কার্যত ঢাল-তরোয়ালহীন অবস্থায় এলএসি-র ওয়ার ফ্রন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়? ইদানিং এসব নিয়েও কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে। তবে ব্যাটল অফ রেজাংলা নিয়ে এখনও তেমন কোনও আলোচনা শোনা যায় না। অথচ ব্যাটল অফ রেজাংলায় যা হয়েছিল, তা প্রত্যেক ভারতীয়রা জানা দরকার। ৬ ঘণ্টার এই যুদ্ধ আমাদের জানিয়ে দেয়, ইতিহাসের বই সবসময় পুরোটা বলে না। বইয়ের বাইরেও অনেক কিছু, বহু ঘটনা চাপা পড়ে থাকে। যেমন রেজাং-লায় হয়েছে। ভারত- চিন যু্দ্ধের সময় ওখানে ঠিক কী হয়েছিল? ১৯৬২-র ১৮ নভেম্বর, রেজাংলায় ভারতীয় পোস্টে হামলা করে পিপলস লিবারেশন আর্মি। পরপর দুবার। ১৭ হাজার ফিট উঁচুতে রেজাংলা-য় তাপমাত্রা তখন মাইনস ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রেজাংলায় সেই সময় ভারতীয় সেনার মাত্র তিনটে চৌকি। কাছের আর্মি বেস বলতে চুশুল – গ্যারিসন ও লেহ। চুশুলের সঙ্গে লেহ’র পৌঁছনোর একমাত্র রেড লিঙ্ক বলতে রেজাংলা। ভারতীয় সেনার সাপ্লাই লাইন কেটে দিতেই ১৮ নভেম্বর ভোরে হামলা চালায় পিএলএ। ১২০ জনের সামনে ১ হাজার ৪০০ জন। সঙ্গে দু-ডজন ভারি কামান, গোলাগুলি। ভারতীয় সেনার কাছে কোনও কামান ছিল না। মর্টার ছিল, তবে সংখ্যায় অনেক কম। গোলাবারুদও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ছিল। রিজাংলা-য় কমান্ড পোস্টের দায়িত্বে মেজর শয়তান সিং। কয়েকজন সেনা জওয়ান তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, স্যার, এবার আমরা কী করব? মেজর শয়তান সিং জবাব দেন, যুদ্ধক্ষেত্রে একজন সেনার যা করা উচিত, করব। গুরু গোবিন্দ সিং যা বলে গিয়েছেন, করব।
ভোর থেকে লড়াই শুরু হয়েছিল। বেলা দেড়টা নাগাদ পিএলএ-র মর্টারে মারাত্মক আহত হন মেজর সিং। কিন্তু লড়াই থামাননি। বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ রিজাংলা ছেড়ে পিছু হটা শুরু করে পিএলএ। রেজাংলায় তখন ভারতীয় পোস্ট আঁকড়ে লড়াই চালাচ্ছেন হাতে গোণা ৬ জন সেনা-জওয়ান। কুলপ্রীত যাদবের ব্যাটল অফ রেজাংলা বইতে বহু খুঁটিনাটি রয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী, তাঁদের ডায়েরি ও সেনার নথিপত্র ঘেঁটে বইটি লিখেছিলেন কুলপ্রীত। কিন্তু এর বাইরে ব্যাটল অফ রিজাংলা – নিয়ে খুব একটা কাজ হয়নি। কোনও ওয়ার ডকুমেন্টস, কিংবা যুদ্ধের খুঁটিনাটি পাবলিক ডোমেনে নেই। তাই হয়তো আমাদের অনেকেরই ব্যাটল অফ রিজাংলা ঘটনা জানার বা শোনার সৌভাগ্য হয়নি। ৬২ বছর পর সেই কাজটাই করতে চাইছেন একদল আর্মি ভেটেরান। ব্যাটল অফ রিজাংলা নিয়ে ডকুমেন্টারি, ইউটিউব ভিডিও, সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেন ও ১২০ জন সেনা-জওয়ানকে নিয়ে একটা বই। একাধিক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা-কর্মীরা। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছে, ১৯৬২-এ চিন রিজাংলায় ধাক্কা খেয়েছিল। সময় সুযোগ মতো আবার আগ্রাসন দেখাবে। তাওয়াংয়ের মতোই চুশুল ও রিজাংলা দখলের খোয়াব ছাড়বে না পিপলস লিবারেশন আর্মি।