Bangladesh: জলদস্যুদের সঙ্গে যোগ কাউন্সিলরের! হাত-পা বাঁধা ১০ জনের দেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর মোড়

Bangladesh Cox's bazar 10 bodies in trawler: বাংলাদেশের কক্সবাজারে ডুবন্ত ট্রলার থেকে ১০ জনের পচা-গলা দেহ উদ্ধারের ঘটনায় নয়া মোড়। বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ট্রলারে ডাকাতি করতে গিয়েই ওই ট্রলারের ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে, এই বিষয়ে নিশ্চিত বাংলাদেশের পুলিশ। তবে, এক সন্দেহভাজনকে জেরা করে জানা গিয়েছে, সাগরে ট্রলারে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত কক্সবাজারের মহেশখালী পৌরসভার এক কাউন্সিলরও।

Bangladesh: জলদস্যুদের সঙ্গে যোগ কাউন্সিলরের! হাত-পা বাঁধা ১০ জনের দেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর মোড়
এই সেই অভিশপ্ত ট্রলার
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 05, 2023 | 9:58 PM

ঢাকা: বাংলাদেশের কক্সবাজারে ডুবন্ত ট্রলার থেকে ১০ জনের পচা-গলা দেহ উদ্ধারের ঘটনায় নয়া মোড়। বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ট্রলারে ডাকাতি করতে গিয়েই ওই ট্রলারের ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে, এই বিষয়ে নিশ্চিত বাংলাদেশের পুলিশ। তবে, এক সন্দেহভাজনকে জেরা করে জানা গিয়েছে, সাগরে ট্রলারে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত কক্সবাজারের মহেশখালী পৌরসভার এক কাউন্সিলরও। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ছয় জন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা কক্সবাজার জেলা কারাগারে তাদের রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মহম্মদ রফিকুল ইসলাম। এর মধ্যে চারজন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। সকলকেই পাঁচ ও তিন দিন করে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়, কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে জবানবন্দি দেন গিয়াস উদ্দিন ওরফে মুনির নামে এক জলদস্যুও। সে জানিয়েছে, পাঁচ বছর ধরে ট্রলার ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত সে, তবে, ওই ১০ জনের হত্যাকাণ্ডের সময় সে ঘটনাস্থলে ছিল না। তবে তার কাছ থেকেই ট্রলারে ডাকাতির ঘটনায় কাউন্সিলর-যোগের তথ্য পাওয়া গিয়েছে।

গিয়াস উদ্দিন জানিয়েছে, তার প্রধান পেশা লবণ চাষ। তবে, সংসারে অভাব-অনটন দূর করতে মাঝেমধ্যেই সে সাগরে গিয়ে মাছ ধরার ট্রলারে ডাকাতি করে। গত চার-পাঁচ বছরে বহু ট্রলারে হামলা চালিয়ে মাছ, জাল, জেলেদের মোবাইল ফোন লুট করেছে সে। তাকে এই কাজে নামিয়েছিল মহেশখালীর এক জলদস্যু, মহম্মদ সুমন। গিয়াস উদ্দিন আরও জানিয়েছে, রোজার মাসে শেষবার সে আরও কয়েকজন জলদস্যুর সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে ডাকাতি করতে গিয়েছিল। তাঁর দাবি, সেই ডাকাতির জন্য ট্রলার দিয়েছিলেন মহেশখালী পৌরসভার কাউন্সিলর খায়ের হোসেন। তার সঙ্গে জলদস্যু সুমনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। সেই ডাকাতির সময়ে গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল মহেশখালীর নুরুল কবিরের সঙ্গে। ডুবন্ত ট্রলারটির নিহত ১০ জনের মধ্যে একজন ছিলেন এই নুরুল। তার সঙ্গে ছিল সাইফুল ইসলাম-সহ আরও সাত জলদস্যু। সাইফুলের দেহও পাওয়া গিয়েছে ডুবন্ত ট্রলারটি থেকে।
গিয়াস উদ্দিন জানিয়েছেন, প্রথম রাতেই একটি মাছ ধরার ট্রলার থেকে, মাছ ধরার জাল, এক ব্যারেল ডিজেল ও পাঁচ-ছয়টি মোবাইল ফোন লুঠ করেছিল তারা। পরের রাতে আরেকটি ট্রলার থেকে প্রায় ৬০০টি ইলিশ মাছ এবং পাঁচ-ছয়টি মোবাইল ফোন লুঠ করা হয়। পরদিন দুপুরে লুঠের মাল নিয়ে কক্সবাজারের নাজিরারটেক উপকূলে ফিরে এসেছিল গিয়াস উদ্দিনরা। সেই সময় কাউন্সিলর খায়ের হোসেন ও জলদস্যু সুমন আরেকটি ট্রলার নিয়ে এসে লুঠের মালগুলি আরেকটি ট্রলারে তুলে মহেশখালীর দিকে চলে গিয়েছিল। ডাকাতির ভাগ হিসাবে গিয়াস উদ্দিনকে আট হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। তবে, ডুবন্ত ট্রলারটির ১০ জনকে হত্যা করার ঘটনায় সে ছিল না বলেই দাবি করেছে গিয়াস উদ্দিন। তার দাবি, সেখনে সে থাকলে, তাকেও হত্যা করা হত। বস্তুত, ৭ এপ্রিল ট্রলার নিয়ে সাগরে ডাকাতি করতে যাওয়ার জন্য জলদস্যু সুমন ও নিহত নুরুল কবির তাকে বেশ কয়েকবার ফোন করেছিল বলেও জানিয়েছে সে। কিন্তু, লবণ চাষের কাজে ব্যস্ত থাকায় সে ডাকাতি করতে যায়নি। ওই ১০ জনের দেহ উদ্ধারের পর, সে সুমনকে ফোন করেছিল। সুমন তাকে বলেছিল, সেই নিহত ব্যক্তিদের সাগরে পাঠিয়েছিলেন লুঠপাট করতে।
এর আগে কামাল হোসেন ওরফে বাইট্যা কামাল নামে আরেক জলদস্যু জানিয়েছিল, ওই ঘটনার সময় সে কক্সবাজারে ছিল। তবে অন্যান্য ট্রলারের মাঝিদের সঙ্গে কথা বলে সে জানতে পেরেছে যে, ওই ১০ জন ট্রলারটি নিয়ে সাগরে ডাকাতিই করতে গিয়েছিল। ডাকাতির একপর্যায়ে ৪-৫টি ট্রলার ডাকাতদের ট্রলারটিকে ঘিরে ফেলেছিল। এরপর ৫০-৬০ জন জেলে, ওই ১০ জনকে বন্দি করে প্রথমে জেলেরা তাদের গণপিটুনি দেয়। এরপর তাদের হাত-পা বেঁধে ট্রলারের বরফ রাখার কক্ষে রেখে, কক্ষের দরজা বাইরে থেকে পেরেক দিয়ে আটকে দেওয়া হয়। এরপর, ট্রলারটি ফুটো করে ডুবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এই মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে আবু তৈয়ূব ও ফজল নামে দুই মৎস্যজীবীকেও। তারা জানিয়েছেন, ঘটনাটি তাঁদের চোখের সামনেই ঘটেছে। তবে, হত্যার ঘটনায় তাঁরা জড়িত নন।
গত ২৩ এপ্রিল বিকেলে কক্সবাজারের নাজিরারটেক উপকূলে ওই ডুবন্ত মাছ ধরার ট্রলারটি থেকে মোট ১০ জনের পচা-গলা দেহ উদ্ধার করেছিল স্থানীয় পুলিশ। ২৫ এপ্রিল কক্সবাজার সদর মডেল থানায় বাইট্যা কামাল, করিম সিকদার, আনোয়ার হোসেন ও বাবুল মাঝি নামে ৪ জন এবং আরও ৫০ থেকে ৬০ জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন ডুবন্ত ট্রলারের মালিক, নিহত সামশুল আলমের স্ত্রী রোকিয়া আকতার। সামশুলের সঙ্গে ওই চার আসামির পূর্বশত্রুতা ছিল বলে দাবি করেছেন রোকিয়া।