China’s Covid Policy: চিনের ‘জ়িরো কোভিড’ নীতির কারণে দেশ ছাড়ছেন প্রবাসীরা?
Zero Covid Policy: অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নিরাপত্তা। বেজিংয়ের দমনমূলক নতুন নিরাপত্তা নীতি আরেকটি কারণ যাঁর ফলে অনেকেই দেশ ছেড়ে দিচ্ছেন। বেজিং নিয়ন্ত্রিত হংকং সরকার মিডিয়ার উপর ব্যাপক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে
দু’বছর ধরে করোনা ভাইরাসের দাপটে তটস্থ বিশ্ব। চিনের উহানেই প্রথম এই ভাইরাসের খোঁজ মিলেছিল। চিন থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। চিন থেকে ভাইরাসের উৎপত্তি হলেও অন্যান্য দেশের তুলনায় ভাইরাসের ধাক্কা অনেকটাই সামলে উঠেছে চিন। যেখানে আমেরিকার মত দেশে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, সেখানে করোনা পরিস্থিতিতে চিনে বৃদ্ধির হার বেড়েছে। করোনার দাপট সামাল দিতে ‘জ়িরো কোভিড’ নিয়েছেন চিনা রাষ্ট্রপতি শি জিংপিং। এই নতুন নীতির কারণে বিদেশি পেশাদার হারাচ্ছে চিন। নতুন চিন গঠনে বিদেশি পেশাদারদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। নতুন কোভিড নীতিতে সমস্যা বাড়তে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, বেজিং ও সাংহাইতে এর প্রভাব সবথেকে বেশি। রাজধানী বেজিংয়ে যেসব প্রবাসীরা কর্মসূত্রে থাকতেন সেই সংখ্যা গত ১০ বছরের মধ্যে এবার ৪০ শতাংশ কমেছে। রাজধানী বেজিংয়ে বর্তমানে মাত্র ৬৩ হাজার বিদেশি রয়েছেন। চিনের বাণিজ্য রাজধানী সাংহাইয়ের অবস্থাটাও একই রকম। সেখানে কর্মরত প্রবাসীদের সংখ্যা কমে ১ লক্ষ ৬৩ হাজারে দাঁড়িয়েছে, গত বছর সংখ্যাটা ছিল ২ লক্ষ ৮ হাজার।
আরও একটি কারণ এখানে উল্লেখযোগ্য। চিন ক্রমশই অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। প্রেসিডেন্ট শি জিংপিংয়ের আমলে সংস্কৃতি ও মুক্ত বাজারের তুলনায় বিদেশি কোনও কিছুর থেকে চিনের তৈরি পণ্যের ওপর বাড়তি জোর দেওয়া শুরু হয়েছে। এই রাজনৈতিক অবস্থানের কথা বিভিন্ন বক্তব্যে বারবার জানিয়েছেন শি জিংপিং।
শির শব্দচয়ন কমিউনিস্ট “বিশুদ্ধতার” প্রতি অনিবার্য অগ্রযাত্রার দিকে ইঙ্গিত করে। গত এক বছরে, শি “বিশৃঙ্খল পুঁজি সম্প্রসারণ” নিয়ন্ত্রণের দিকে মনোনিবেশ করেছেন এবং “সাধারণ সমৃদ্ধি” শব্দটি উদ্ভাবন করেছেন। প্রযুক্তির মত শিল্পের বিষয়েও শি দেশকেই গুরুত্ব দিয়েছেন। তার কারণে গত একবছরে চিনের ১ লক্ষ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষয় হয়েছে। তিনি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম, উচ্চ প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষা খাতে চীনা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান প্রদানকারী কোম্পানি এবং ই-হেলিং এবং ফুড ডেলিভারি কোম্পানিগুলোর ওপরও নজর রেখেছেন। কাছ থেকে বোঝা যাবে পুঁজিবাদী মানসিকতা থাকা অব্যাহতির জন্যই শি জিংপিং এই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন চিন স্বনির্ভর বিদেশে থেক বিভিন্ন জিনিস আমদানি বন্ধের সময় এসেছে।
অনেকের মতে কোভিডকে হাতিয়ার করে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবেই বিদেশিদের চিন ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। কারণ এরফলে চিনা নাগরিকদের বিদেশিদের জীবনযাত্রার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ কমবে এবং দেশে পশ্চিমী সংস্কৃতির আমদানি রোধ করা সম্ভব হবে। এই পদ্ধতির মধ্যে দেশাত্মবোধকে জাগিয়ে তোলার সম্ভাবনাও দেখছেন অনেকে। এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, চিনা নাগরিকরা বিদেশি পণ্যের তুলনায় দেশে তৈরি পণ্য অনেক বেশি মাত্রায় পছন্দ করছেন।
অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নিরাপত্তা। বেজিংয়ের দমনমূলক নতুন নিরাপত্তা নীতি আরেকটি কারণ যাঁর ফলে অনেকেই দেশ ছেড়ে দিচ্ছেন। বেজিং নিয়ন্ত্রিত হংকং সরকার মিডিয়ার উপর ব্যাপক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, যার ফলে অন্তত তিনটি সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে গেছে। চিনের নতুন কোভিড নীতি শুধুমাত্র বিদেশিদের বাইরে রাখার জন্যই নয়, দেশের নাগরিকরা যেন দেশের মধ্যেই থাকেন তাঁর জন্যও। গত বছর, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিন নতুন পাসপোর্ট ইস্যু ও পাসপোর্ট পুনর্নবীকরণও বন্ধ করে দেয়। বিদেশি শত্রুদের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য ২ হাজার ৫০০ বছর আগে ‘চাইনিজ ওয়াল’ তৈরি হয়েছিল। এখন দেশের নাগরিকদের বিশ্বের সঙ্গে যাবতীয় যোগাযোগ বন্ধ করতে নতুন প্রাচীর তৈরি করছে চিন।
আরও পড়ুন Uttarpradesh Election 2022: দলবদলের নাটক চরমে! মেয়ের অপহরণের অভিযোগ উড়িয়ে বিধায়ক বললেন ‘দল ছাড়ছিই’