India vs Bangladesh: হয়ে যাক কলকাতা দখল! তার আগে জেনে নিন কার হাতে কত অস্ত্র?
India vs Bangladesh: ভারতের হাতে রিজার্ভ সেনা রয়েছে ১১.৫৫ লক্ষ, সেখানে বাংলাদেশের হাতে কোনও রিজার্ভ ফোর্স নেই। আধাসেনা দিয়েই যেন চলছে বাংলাদেশ।
কথায় বলে ‘ঢাল নেই তরোয়াল নেই, নিধিরাম সর্দার’। অবশ্য এখন যা পরিস্থিতি তাতে, ঢাল নেই তরোয়াল নেই, ‘বাংলাদেশ’ সর্দার বললেও খুব একটা ভুল বলা হবে না। কেন এই কথা বলছি? নিধিরাম সর্দার এমন এক ব্যক্তি যাঁর বাস্তবে কিছুই করার মুরোদ নেই, শুধু মুখেই বড় বড় কথা। বাংলাদেশের অবস্থাও এখন অনেকটা সেই রকম। ক্ষমতা নেই তবু খালি মিথ্যে আস্ফালন।
বাংলাদেশের কট্টরপন্থী নেতারা উঠে পড়ে লেগেছে ভারত বিরোধিতায়। কেউ বলছেন ‘চারদিনে কলকাতা দখল করবেন’, কেউ বলছেন ‘কলকাতা, আগরতলা, সেভেন সিস্টারস ধরে টান দেবেন’, আবার কখনও বলছেন ‘আমরা আমলকি চুষব নাকি?’। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে হিন্দু এবং সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের সমালোচনা করায়, ভারতকে ‘জ্ঞান’ দিতেও ছাড়েনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু প্রশ্ন হল এই যে বাংলাদেশের বিএনপি নেতা রুহুল কবীর রিজভি থেকে অনান্য কট্টরপন্থী নেতারা কথায় কথায় ভারত দখল করে নেব, আমলকি চুষব নাকি, সেভেন সিস্টারস ধরে টান দেব বলে হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে, আসলে তা কতটা ভয়ের? ভারতের জন্য কতটা চিন্তার? ভারতকে ‘শত্রু দেশ’ বলে ঘোষণা করার দাবি উঠেছিল কিছুদিন আগে। সেটাই বা কতটা যুক্তি সঙ্গত? ভারতের সঙ্গে যদি বাংলাদেশের সত্যিই যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে বাংলাদেশ কী নিয়ে লড়বে? ইউনূস সরকারের অস্ত্রভাণ্ডারের চেহারাটা কেমন? এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সেটাই।
‘গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার’ ইনডেক্স বলছে বিশ্বের ১৪৫ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সামরিক শক্তির দিক থেকে স্থান পেয়েছে ৩৭ নম্বরে। সেখানে ভারতের র্যাঙ্কিং ৪। এশিয়া মহাদেশের শক্তিধর দেশগুলির তালিকায় বাংলাদেশের স্থান তৃতীয়।
বাংলাদেশের মোট ক্ষেত্রফল ১৪,৮৪৬০ কিলোমিটার। এর মধ্যে জলসীমা আছে ৫৮০ কিলোমিটার, সীমান্ত এলাকা রয়েছে ৪,৪১৩ কিলোমিটার। ব্যবহার যোগ্য জলপথ রয়েছে ৮,৩৭০ কিলোমিটার।
বাংলাদেশের সেনা সংখ্যা –
বাংলাদেশের মোট জন সংখ্যা ১৬ কোটি, ৭১ লক্ষ, ৮৪ হাজার ৪৬৫। যাঁর মধ্যে সেনা কর্মী রয়েছেন ৬৯ লক্ষ ৩ হাজার। অ্যাক্টিভ সেনা কর্মী ১ লক্ষ ৬৩ হাজার। প্যারামিলিটারি ৬,৮০০,০০০ জন। এয়ার ফোর্স কর্মী ১৭,৪০০ জন। সেনা সদস্য ১৬০,০০০। নৌ-সেনা সদস্য ২৫,১০০।
বায়ু সেনার দৌড় –
বায়ু সেনার কাছে মোট বিমান আছে ২১৬টি ওড়ার জন্য প্রস্তুত থাকে ১৩০টি বিমান। যুদ্ধ বিমান ৪৪ টি, যার মধ্যে প্রস্তুত থাকে ২৬টি। পরিবহন বিমান রয়েছে ১৬টি, যার মধ্যে ১০টি সারা বছর ব্যবহার করা হয়। ট্রেনিং-এর জন্য রয়েছে ৮৭ টি বিমান, ট্রেনিং-এর কাজে ব্যবহার করা হয় ৫২টি বিমান। স্পেশাল মিশনের জন্য রয়েছে ৪টি। সাধারণ হেলিকপ্টার রয়েছে ৭৩টি, অ্যাক্টিভ আছে ৪৪টি। যুদ্ধ করতে সক্ষম হেলিকপ্টার, ট্যাঙ্কার ফ্লিট কোনওটাই নেই বাংলাদেশের বায়ুসেনার ভাঁড়ারে।
স্থলপথে কত ক্ষমতা রয়েছে –
বাংলাদেশের কাছে সামরিক ট্যাঙ্ক রয়েছে ৩২০টি যার মধ্যে অ্যাক্টিভ ২২৪টি। স্থল সেনার কাছে নানা প্রকারের মোট গাড়ি রয়েছে ১৩,১০০টি যার মধ্যে ৯১৭০টি গাড়ি সর্বক্ষণ ব্যবহার করা হয়। সেলফ প্রপেল্ড আর্টিলার আছে ২৭টি যার মধ্যে ১৯টি সদা প্রস্তুত থাকে। টোওড আর্টিলারি (অর্থাৎ যেগুলি টেনে নিয়ে যেতে হয়) তার সংখ্যা ৪৩৭টি, মোতায়েন রয়েছে ৩০৬টি। এমএলআরএস (মাল্টিপেল লঞ্চার রকেট সিস্টেম) বা রকেট আর্টিলারি রয়েছে ৭১টি।
জলপথে কতটা দক্ষ –
বাংলাদেশের মোট অ্যাসেট রয়েছে ১১৭টি। ৭টি ফ্রিগেট ও ৬টি কর্ভেট রয়েছে। রয়েছে মাত্র ২টি ডুবোজাহাজ। ৫৫টি নজরদারি ভেসেল। বাংলাদেশের নৌ-সেনার হাতে সমুদ্রের মাঝে যুদ্ধ বিমানের জন্য কোনও এয়ারক্রাফট কেরিয়ার, হেলিকপ্টার কেরিয়ার, ধ্বংসাত্মক জাহাজ নেই। মাইন ওয়ারফেয়ার আছে ৫টি।
ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের সামরিক হাল –
বাংলাদেশের সামরিক শক্তির একটা আঁচ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু ভারতের তুলনায় তা কতটা নগণ্য? বাংলাদেশের অ্যাক্টিভ সেনার সংখ্যা ১.৬৩ লক্ষ, সেখানে ভারতের অ্যাক্টিভ সেনার সংখ্যা ১৪.৫৫ লক্ষ। ভারতের হাতে রিজার্ভ সেনা রয়েছে ১১.৫৫ লক্ষ, সেখানে বাংলাদেশের হাতে কোনও রিজার্ভ ফোর্স নেই। আধাসেনা দিয়েই যেন চলছে বাংলাদেশ। এয়ারক্রাফট যেখানে বাংলাদেশের হাতে ২১৬টি, সেখানে ভারতের কাছে আছে ২২৯৬টি এয়ারক্রাফট।
ইউনূস সরকারের গ্যারেজে আছে ৪৪টি যুদ্ধ বিমান, ভারতের কাছে আছে ৬০৬টি। অ্যাটাকিং এয়ারক্রাফট ভারতের কাছে আছে ১৩০টি, সেখানে বাংলাদেশের ভাঁড়ার শূন্য। ট্যাঙ্ক ভারতের কাছে ৪৬১৪টি বাংলাদশের কাছে আছে ৩২০টি। বাংলাদেশের সাবমেরিন মাত্র ২টি, ভারতের কাছে আছে ১৮টি। জঙ্গী জাহাজ আছে ১১৭টি, ভারতের কাছে আছে ২৯৪টি। যে রকেট ইউনূসের কাছে আছে ৭১টি, ভারতের কাছে আছে ৭০২টি। ধারে ভারে যে ভারত সামরিক শক্তিতে পড়শির থেকে অনেক এগিয়ে, তা বলাই বাহুল্য।
ব্যবসায়িক দিক –
CMIE অনুসারে দুই দেশের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ব্যবসায় বহুল লাভবান হয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ১৬৫% গ্রোথ হয়েছে। অর্থাৎ গত এক দশকে ১.০৭ লক্ষ কোটি টাকা লাভ হয়েছে। ২০২৪ সালে ভারত ১৫, ২৬৮ কোটি টাকার সামগ্রী আমদানি করেছে বাংলাদেশ থেকে। এর মধ্যে ৪৯৩২ কোটি টাকার রেডিমেড কাপড়। টেক্সটাইল ব্যবসায় লাভ হয়েছে ২৬৯৭ কোটি টাকার। ২১৪০ কোটি টাকার ইঞ্জানিয়ারিং সামগ্রী আমদানি করেছে ভারত।
ভারত থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি হয়েছে ৯১, ৬১৪ কোটি টাকার সামগ্রী। টেক্সটাইল সামগ্রী রপ্তানি হয়েছে ১৭,৮১৭ কোটি টাকার, ১৬,৮৩৭ কোটি টাকার ইঞ্জিনিয়ারিং গুডস এবং ৮৯৭৭ কোটি টাকার অনান্য পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে।
দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ হলে তার প্রভাব যে বাণিজ্যে পড়বে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর্থিক ভাবেও যে দেশ ভারতের উপর এতটা নির্ভরশীল, সদ্য এক বিরাট পালাবদলের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে, সেই বাংলাদেশের এখন নিজের আখেড় না গুছিয়ে ভারত দখলের স্বপ্ন দেখার বিষয়টি কতটা বুদ্ধিমত্তার পরিচয়, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ওয়াকিবহল মহলের একাংশ।