বৃষ্টির মতো পড়ছে মলমূত্র, চরম সতর্কতায় দক্ষিণ কোরিয়া! আজব হামলা কিমের
বুধবার (২৯ মে), দক্ষিণের বিরুদ্ধে এক নয়া হামলার কৌশল অবলম্বন করলেন কিম জং উন। উত্তরের এই পদক্ষেপের জেরে, নাগরিকদের বাইরে বের হতে নিষেধ করেছে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার। দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক বাহিনী পিয়ংইয়ং-এর এই 'নিম্ন শ্রেণির' পদক্ষেপের নিন্দা করেছে।
সিওল: উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে, বুধবার (২৯ মে), দক্ষিণের বিরুদ্ধে এক নয়া হামলার কৌশল অবলম্বন করলেন কিম জং উন। এদিন, দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ, গ্যায়ংগি-গ্যাংওন জানিয়েছেন, বুধবার সকালে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ২৬০টি বেলুন উদ্ধার করেছে তাদের সেনাবাহিনী। এই বেলুনগুলির সঙ্গে বাঁধা ছিল আবর্জনা ও মল ভর্তি বস্তা! দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্ত এলাকা, রাজধানী সিওল, এমনকি দক্ষিণ গিয়াংসাং, ইয়োনহাপের মতো দেশের দক্ষিণ-পূর্বের প্রদেশগুলিতেও পড়েছিল এই আবর্জনা ও মলবহনকারী বেলুনগুলি। এই বেলুনগুলি উত্তর কোরিয়া থেকেই পাঠানো হয়েছে বলে দাবি দক্ষিণের। পিয়ংইয়ং অবশ্য, আগেই সতর্ক করেছিল, শাস্তি হিসাবে দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্ত এলাকায় বর্জ্য বর্ষণ করা হবে। দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক বাহিনী পিয়ংইয়ং-এর এই ‘নিম্ন শ্রেণির’ পদক্ষেপের নিন্দা করেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনার কয়েকটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিগুলিতে দেখা যাচ্ছে, বেশ কয়েকটি বড় মাপের সাদা রঙের বেলুন। বেলুনগুলির সঙ্গে বাঁধা রয়েছে বস্তা। তার কয়েকটিতে স্পষ্ট লেবেল লাগিয়ে লেখা আছে – ‘মলমূত্র’। এই মল ভরা বস্তা থেকে গুরুতর স্বাস্থ্যগত সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা সিওলের। এছাড়া বস্তাগুলিতে কাগজ, প্লাস্টিকের বোতল, খাবারের মোড়কে মতো আবর্জনা রয়েছে। এছাড়া, কয়েকটি বস্তায় রয়েছে গাঢ় রঙের মাটি এবং ব্যাটারি। যা থেকে রাসায়নিক কোনও বিপত্তি ঘটতে পারে বলে উদ্বেগ রয়েছে। এছাড়া, কয়েকটি বস্তায় রয়েছে লিফলেট। লিফলেটগুলিতে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের নিন্দা করা হয়েছে এবং উত্তর কোরিয়ার মতাদর্শের প্রচার করা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতায় আঘাত হানতে এবং সেই দেশের জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানোর উদ্দেশ্য়েই পিয়ংইয়ং এই পদক্ষেপ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
উত্তরের এই পদক্ষেপের জেরে, নাগরিকদের বাইরে বের হতে নিষেধ করেছে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার। ওই বস্তাগুলি নাগরিকদের স্পর্শ না করার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। এমন কোনও বেলুন বা বস্তা পেলে, সামরিক ঘাঁটি বা থানায় রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। গ্যায়ংগি-গ্যাংওন জানিয়েছেন, সামরিক বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। তিনি আরও বলেছন, পিয়ংইয়ং-এর এই পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘিত হয়েছে। এটা জনসুরক্ষার পক্ষে গুরুতর হুমকি ছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি। গ্যায়ংগি-গ্যাংওন বলেছেন, “আমরা উত্তরকে অবিলম্বে এই ধরনের অমানবিক ও নিম্ন-শ্রেণির কাজকর্ম বন্ধ করার জন্য কঠোরভাবে সতর্ক করছি।”
কিন্তু কেন হঠাৎ বেলুনে করে দক্ষিণ কোরিয়ায় মল পাঠাচ্ছে উত্তর কোরিয়া? আসলে বেলুন পাঠানো প্রথম শুরু করেছে দক্ষিণই। দক্ষিণ কোরিয়ার মানবাধিকার কর্মীরা ইদানিং নিয়মিত সীমানা পেরিয়ে উত্তর কোরিয়ায় সরকারবিরোধী প্রচারপত্র এবং অর্থ পাঠায়। দক্ষিণ কোরিয়ার এই প্রচার পদক্ষেপে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষুব্ধ পিয়ংইয়ং। আসলে, উত্তর কোরিয় সমাজকে বজ্রমুঠিতে নিয়ন্ত্রণ করেন কিম জং উন। বাইরে থেকে আসা তথ্য, সেই সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে, প্রচারপত্রগুলি কিম জং উনের শাসনকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে বলে, ভয় পায় পিয়ংইয়ং। এরই প্রতিশোধে উত্তর কোরিয়া এই পদক্ষেপ করার হুমকি দিয়েছিল।