Gregorian Bivolaru: ৩০০ নগ্ন মহিলার সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা, মঞ্চেই হস্তমৈথুন; একে বলে তান্ত্রিক যোগ?
Gregorian Bivolaru: তিন-তিনটি দেশের পুলিশকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়েছে সে। অবশেষে গত সপ্তাহে, গত সপ্তাহে প্যারিসের শহরতলির এক বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে বিভোলারুকে। এক ফরাসী মানবাধিকার গোষ্ঠী তার ১২ জন প্রাক্তন 'শিষ্যা'র বিবৃতি সংগ্রহ করেছে। সেই বিবৃতি গুলি থেকে এই তান্ত্রিক যোগশিক্ষা স্কুলের নামে চলা সেক্স ব়্যাকেট সম্পর্কে চমকে দেওয়া তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
প্যারিস: তান্ত্রিক যোগশিক্ষা স্কুলের আড়ালে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে চলছিল উদ্দাম যৌনতার অনুশীলন। তান্ত্রিক যোগশিক্ষার নামে মহিলাদের বিকৃত যৌনতায় বাধ্য করা হত। ইউরোপের ৩০টি শহর জুড়ে ছড়িয়েছিল ‘মুভমেন্ট ফর স্পিরিচুয়াল ইন্টিগ্রেশন ইন দ্য অ্যাবসলুট’ বা ‘মিসা’ (MISA)-র স্কুল। বছরের পর বছর ধরে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে এই সংগঠনের মাথা গ্রেগরিয়ান বিভোলারুর বিরুদ্ধে। কখনও পালিয়ে, কখনও বা আইনের ফাঁক খুঁজে নিয়ে রোমানিয়া, ফ্রান্স এবং ফিনল্যান্ডের মতো তিন-তিনটি দেশের পুলিশকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়েছে সে। অবশেষে গত সপ্তাহে, গত সপ্তাহে প্যারিসের শহরতলির এক বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে বিভোলারুকে। এক ফরাসী মানবাধিকার গোষ্ঠী তার ১২ জন প্রাক্তন ‘শিষ্যা’র বিবৃতি সংগ্রহ করেছে। সেই বিবৃতি গুলি থেকে এই তান্ত্রিক যোগশিক্ষা স্কুলের নামে চলা সেক্স ব়্যাকেট সম্পর্কে চমকে দেওয়া তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
কী ঘটত মুভমেন্ট ফর স্পিরিচুয়াল ইন্টিগ্রেশন ইন দ্য অ্যাবসলুটের স্কুলে? আরাবেলা মার্কেস নামে এক রোমানিয়ান-পর্তুগিজ নাগরিক জানিয়েছেন, ১৯৯৯ সালে, মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি বুখারেস্টে মিসা যোগ স্কুলে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর দিদি আগেই এই স্কুলে যোগ দিয়েছিলন। তাই, আরাবেলা জানতেন এই স্কুলে তান্ত্রিক যোগ শেখানো হয়। প্রাচীন হিন্দু দর্শনের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের পাশপাশি, যৌনতার মাধ্যমে মুক্তি অর্জনের শিক্ষা দেওয়া হয় এই স্কুলে। তবে, স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডাক্তার, আইনজীবীদের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ছিলেন বলে আরবেলা মার্কেসের এই স্কুলে যোগ দেওয়ার বিষয়ে সমস্ত দ্বিধা কেটে গিয়েছিল।
কিন্তু, দীক্ষা নেওয়ার দিনই আরাবেলার জন্য পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল। বিভোলারু তাঁকে তাঁর নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। দীক্ষা গ্রহণের অংশ হিসেবে, সেখানে তাঁকে আরও জনা ১২ মহিলার সঙ্গে সমকামী যৌনতায় লিপ্ত হতে বাধ্য করা হয়েছিল। এরপর, ৫০ বছরের বিভোলারুর সঙ্গেও যৌন সম্পর্কের জন্য চাপ দেওয়া হয় তাঁকে। আরাবেলা জানিয়েছেন, “আমাদের বলা হয়েছিল, গুরুর সঙ্গে যৌনতা অত্যন্ত পবিত্র কাজ। ঈশ্বর এই কাজের অনুমোদন দেন। কিন্তু তারপরও, বিভোলারু আমদের এই কথা কাউকে না বলার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।” এক বছর পরে, মার্কেস কৃষ্ণ সাগরে ‘মিস শক্তি’ নামে এক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল মিসা। সেখানে প্রায় ৩০০ মহিলা সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় প্যারেড করেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে প্যারেডে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়েছিল আরাবেলাকে। আর সেখানে উপস্থিত কেউ কেউ, হাজার হাজার দর্শকের সামনে মঞ্চেই হস্তমৈথুন করেছিলেন।
অ্যাশলেই ফ্রেকলটন নামে এক ৩১ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয় মহিলা জানিয়েছেন, তিনি ২০১৮ সালে রোমানিয়ার একটি মিসা আশ্রমে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁকে ফ্রান্সে যেতে হয়েছিল দীক্ষা নিতে। প্যারিসের শহরতলির এক বাড়িতে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে তাঁদের পর্নোগ্রাফি দেখানো হয়েছিল। সম্মোহিত করে উদ্দাম যৌন মিলনে অংশ নিতে বলা হয়েছিল। কেড়ে নেওয়া হয়েছিল তাঁর পাসপোর্ট এবং টেলিফোন। এমনকি, মহিলাদের তাঁর প্রস্রাবও পান করিয়েছিলেন বিভোলারু। মহাজ্ঞানী বলে পরিচয় দিয়ে এক পুরুষের সঙ্গে তাঁকে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই সময়ই তিনি টের পেয়েছিলেন, এই স্কুলের কিছুই ঠিকঠাক নেই।
ফরাসী পুলিশ জানিয়েছে, বিভোলারুকে গ্রেফতারের সময়, তাঁর বাড়ি থেকে ৫০ জনেরও বেশি মহিলাকে উদ্ধার করা হয়েছে। রোমানিয়া, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, বেলজিয়াম এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নাগরিকরা, মিসার সদস্য ছিলেন। কিন্তু, তাঁদের উপর নিয়মিত যৌন নিপীড়ন চলত। এছাড়া প্রচুর সেক্স টয়, পর্নোগ্রাফিক সামগ্রী নগদ অর্থ, জাল পরিচয়পত্র এবং অশ্লীল ছবি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এর আগে প্রায় দুই দশক ধরে, বিভোলারুকে খুঁজছিল তিন দেশের পুলিশ।
বিভোলারু আদতে একজন কলের মিস্ত্রি। গত শতাব্দীর সাত ও আটের দশকে, রোমানিয়ায় যখন কমিউনিস্ট শাসন ছিল, সেই সময় সেখানে পর্নোগ্রাফি বিক্রির দায়ে তাকে আটক করে মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে বেরিয়েই নিসা স্থাপন করেছিল সে। ২০০৪-এ রোমানিয়াতে বিভোলারুর বিরুদ্ধে নাবালিকাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ উঠেছিল। নিজ দেশ থেকে পালিয়ে সুইডেনে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিল সে। ২০১৩ সালে তার অনুপস্থিতিতেই তাকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল রোমানিয়ার এক আদালত। ২০১৬ সালে ফ্রান্সে তাকে গ্রেফতার করে বুখারেস্টের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। যদিও, এক বছরের মধ্যে সে মুক্তি পেয়েছিল। দ্রুত মুক্তি পেলেও কয়েকজন ফিনিশ মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে এরপর ইন্টারপোল তার সন্ধান শুরু করে। ফিনিশ মহিলাদের অভিযোগ ছিল, প্যারিসে তাদের যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করেছিল বিভোলারু।
গ্রেফতারের পর অবশ্য, মহিলাদের যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে বিভোলারু। তার দাবি, প্রত্যেক মহিলাতেই সে ভালোবাসত। তার দাবি, আশ্রমের সদস্য ছাত্র এবং শিক্ষকরা, তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনে কী করছেন, তার জন্য মিসা দায়ী নয়। এর জন্য তাদের জবাবদিহি করার কোনও দায়ও নেই। মিসার সরকারি ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ১৯৯৫ সালেই মিসার ডিরেক্টরের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিল বিভোলারু। কিন্তু, একনও সে এই সংস্থার পরামর্শদাতা। তার বিশেষ ক্ষমতা হিসেবে লেখা আছে, সে কামোত্তেজক শক্তি নিয়ন্ত্রণের কৌশল জানে। পরমানন্দের পথের সন্ধান জানে।